চিকিৎসা বন্ধ, হুইলচেয়ারে বসেই চলছে শাওনের জীবিকার লড়াই

3 hours ago 4

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও দা‌রিদ্রতা দমাতে পারেনি রাজবাড়ীর অদম্য যুবক শাওন শেখকে (২২)। অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চলাচলের শক্তি হারালেও ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে না নি‌য়ে নিজের হুইলচেয়ারকেই বানিয়েছেন রোজগারের উৎস। তবে সবা‌র সহযোগিতায় চি‌কিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে‌ স্বাভা‌বিক জীবনে ফিরতে চান শাওন শেখ।

শাওন শেখ রাজবাড়ী পৌরসভার জেলখানা সংলগ্ন এলাকার ভাড়া বাসায় থাকা অসুস্থ রিকশাচালক শ‌ফিক শেখের ছেলে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালে রাজবাড়ী সরকারি টেক‌নিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় শাওন অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হা‌রিয়ে ফেলেন চলাফেরার শক্তি। পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে চি‌কিৎসা করানো হলেও টাকার অভাবে ভালো কোনো চি‌কিৎসা করাতে পারেনি তার প‌রিবার। বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়াও।

চিকিৎসা বন্ধ, হুইলচেয়ারে বসেই চলছে শাওনের জীবিকার লড়াই

তবে তি‌নি সমাজের চোখে বোঝা না হয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চান। ফ‌লে অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে ‌তি‌নি নিজের উপার্জনের পথ নিজেই খুঁজে নিয়েছেন। নিজের হুইলচেয়ারে বসেই একটি ছোট ভ্রাম্যমাণ দোকান সাজিয়েছেন। তার দোকানে পাওয়া যায় চিপস, চানাচুর, বিস্কিট, চকলেটসহ মু‌খোরচক খাবার। প্রতি‌দিন সকালে তার বাবা রিকশার পেছনে হুইলচেয়া‌র বেঁধে নিয়ে এসে দোকান সা‌জিয়ে রেখে যান রাজবাড়ী জেলা শহরের শহীদ স্মৃ‌তি স্টে‌ডিয়াম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। সেখানে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হুইলচেয়ারে বিক্রি করেন সব‌কিছু। দিন শেষে নিজের আয়ের টাকা দিয়ে কিনছেন নিজের ও মায়ের ওষুধ এবং ছোট ভাইয়ের খাবার।

আরও পড়ুন-
ঋণের টাকায় কেনা ভ্যান চুরি, কেঁদেই চলেছেন হাফিজ শেখ
চায়ের দোকানে সন্তানদের স্বপ্ন বুনছেন মহিদা
তরুণ আশিকের দুটি কিডনিই বিকল, সাহায্যের আবেদন

শাও‌নের মা সাহানা বেগম ব‌লেন, আমার ৩ ছেলের মধ্যে শাওন মেজো। প্রায় ৪ বছর শা‌ওন হাঁটাচলা করতে পারে না। মা হয়ে ছেলের এরকম অবস্থা দেখতে খুব কষ্ট লাগে। প্রথমে ভেবে‌ছিলাম পড়াশুনার চাপে এরকম হচ্ছে। পরে ওর হাত-পা শু‌কিয়ে যেতে থাকে এবং একপর্যায়ে সে হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। এরপর থে‌কে শাওন আর স্কু‌লে যেতে পারেনি। এখন হুইলচেয়ারে কোনো রকম চলাচল ক‌রে। অসুস্থ‌ হওয়ার পর রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে ডাক্তার দে‌খিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু ডাক্তাররা কোনো রোগ ধরতে পারেনি। পরে ঢাকায় নিয়ে এক‌টি পরীক্ষা করাতে বললেও টাকার অভাবে সে‌টি করাতে পা‌রিনি। আমি চাই আমার ছেলেটা আর ১০টা ছেলের মতো হাসিখুশি থাকুক, চলাফেরা করে খেলাধুলা করুক।

চিকিৎসা বন্ধ, হুইলচেয়ারে বসেই চলছে শাওনের জীবিকার লড়াই

শাওনের বাবা স‌ফিক শেখ ব‌লেন, আমি গরিব মানুষ, থাকি ভাড়া বাসায়। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। শাওন আজ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। টাকার অভাবে ওর ভালো চিকিৎসা করাতে পারছি না। ছেলেটার একটি প্রতিবন্ধী কার্ড ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সেই ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ছেলের অসুস্থতা দেখে ওর মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সবশেষ গত ঈদের পর শাওনকে ফ‌রিদপুরে প্রায় দুই সপ্তাহ ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাই।‌ ডাক্তাররা বলেছেন ঢাকায় নিয়ে ওর শ‌রীরের মাংস কেটে একটা পরীক্ষা করাতে। ওই পরীক্ষায় খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সেই টাকা জোগাড় করতে পারিনি। বিধায় আর ঢাকাতেও নেওয়া হয়নি।

শাওন বলেন, আমি অসুস্থ হওয়ার পর বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না। এক‌দিন শুয়ে শুয়ে ভাবলাম কিছু একটা করা উচিত। অনেকে বলেছে ভিক্ষা করতে, কিন্তু আমি ক‌রিনি। কারণ ভিক্ষা করা ভালো না। এখন হুইলচেয়ারে বসে চলাচল ও ব্যবসা করি। তবে হাত‌ দিয়ে চালাতে খুব কষ্ট হয়। প্রতি‌দিন সকালে বাবা রিকশার পেছনে করে আমাকে নিয়ে স্কুলের সামনে রেখে আসে। সারা‌দিন ওখানেই বেচাকেনা করি। যে টাকা আয় করি সেই টাকা দিয়ে আমার ও মায়ে‌র ওষুধ এবং ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু খাবার কিনে বাড়ি যাই। আপনারা যদি আমার পাশে থেকে সহযোগিতা করেন তাহলে আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারবো এবং আমিও চিকিৎসা নিতে পারবো।

রাজবাড়ী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-প‌রিচালক রুবাইয়াত মো. ফের‌দৌস বলেন, বর্তমানে আমাদের কোনো ভাতা কার্যক্রম বন্ধ নাই, সবগুলো ভাতা চালু আছে। তবে শাওন নামের ওই ছেলে‌টি যদি ভাতা না পেয়ে থাকে তাহলে আমাদের সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করলে আশা করি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

এফএ/জেআইএম

Read Entire Article