‘চিকেনস নেক’-এ রাফাল জেট ও এস-৪০০ বসাল ভারত

2 months ago 7

শিলিগুড়ি করিডরে ভারতের সামরিক তৎপরতা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে গেছে। পূর্বাঞ্চলের এই সবচেয়ে স্পর্শকাতর ‘চিকেনস নেক’ করিডর ঘিরে নয়াদিল্লি এখন প্রতিরক্ষা বলয় গড়ছে। 

এরই অংশ হিসেবে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ এই করিডরে মোতায়েন করা হয়েছে ফ্রান্সের তৈরি রাফায়েল যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়ার অত্যাধুনিক এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এই করিডরটি ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত রাখে। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং চীনের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা একে ভারতের জন্য অত্যন্ত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

নয়াদিল্লি এখন তার কৌশলগত দৃষ্টি পশ্চিম (পাকিস্তান) থেকে পূর্ব দিকে সরিয়ে নিচ্ছে। ভারতীয় কূটনীতিক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এখন ভারতের প্রধান উদ্বেগ চীন এবং ক্রমবর্ধমানভাবে বাংলাদেশের ভেতরকার রাজনৈতিক পরিবর্তন।

দ্য এশিয়া লাইভের তথ্য অনুযায়ী, ভারত-ভুটান সীমান্তের কাছে সাম্প্রতিক চীনা সামরিক মহড়া ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের গতি নয়াদিল্লিকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের চীন ও পাকিস্তানঘেঁষা নীতির আভাসে ভারতের উদ্বেগ বেড়েছে।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য ৩২টি চীনা-পাকিস্তানি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কেনার খবর ভারতের উদ্বেগকে আরও গভীর করেছে। এসব বিমান AESA রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার পড এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত। এগুলোর সম্ভাব্য মোতায়েন ভারতের উত্তরাঞ্চলের বিমানঘাঁটি ও অবকাঠামোর জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

সম্প্রতি পাকিস্তানি একটি প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত আলোচনা বিষয়টিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে। এসব কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতা মাথায় রেখেই ভারত পূর্ব সীমান্তে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলছে।

এদিকে ভারতের হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে রাফাল স্কোয়াড্রনের পাশাপাশি ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে হুমকি প্রতিরোধে সক্ষম এস-৪০০ মোতায়েন কেবল কৌশলগত নয়, বরং একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা। 

ভারতীয় সেনাবাহিনী এখন ‘মাল্টি-জোন ডিটারেন্স ডকট্রিন’ তৈরি করছে, যেখানে রিয়েল-টাইম নজরদারি (ISR), সাইবার-ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, ত্রি-সেনা সমন্বয় এবং শিলিগুড়ি করিডোরের আশপাশে রাস্তা-রেল-টানেল নির্মাণে জোর দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, আমরা পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবো না।

উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি করিডোরে ভারতের এই সামরিক অবস্থান কেবল শক্তির প্রদর্শন নয়, এটি একটি সুস্পষ্ট বার্তাও : চীন বা বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে কোনো দুর্বৃত্ত আচরণ বরদাশত করা হবে না। প্রক্সি জোট, গ্রে-জোন যুদ্ধ এবং প্রযুক্তিনির্ভর সংঘাতের এই সময়ে ভারত চাইছে, করিডরটি যেন শুধু একটি করিডর না থাকে, বরং তা হয়ে উঠুক ভারতের আত্মরক্ষার এক ‘লাল রেখা’।

Read Entire Article