বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি দিন বহাল রেখেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি করতে চেয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে দ্বিতীয় দিনের মতো আবেদন জমা দেন ঢাকা থেকে আসা আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ।
তবে চট্টগ্রাম বারের কোনো আইনজীবীর ওকালতনামা জমা দিতে না পারায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন শুনানির জন্য করা আবেদন নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম।
আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে জামিন শুনানি এগিয়ে আনার জন্য আবেদন জমা দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। এ সময় আদালত ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। আবেদন জমা দিয়ে বের হওয়ার সময় আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরীসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে আদালত আবেদনটি দুপুরে শুনানির জন্য রাখেন। দুপুর আড়াইটার দিকে আদালত শুনানি কার্যক্রমের শুরুতে ওকালতনামা দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। এ সময় ওকালতনামা যাচাইয়ের জন্য ওই আইনজীবীকে উপস্থিত করতে আদালত সময় বেঁধে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই আইনজীবী উপস্থিত হননি।
আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা জানান, আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সুমিত আচার্য্যের নাম জমা দিলেও ওই আইনজীবীতে শুনানির জন্য নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির হননি।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ‘আদালত জানিয়েছেন, কোনো বিধিতেই ওনি মামলাটি মুভ (লড়তে) করতে পারেন না। যিনি ওকালতনামা দিয়েছেন তিনি যদি ওনার সহযোগিতা চান; সেক্ষেত্রে তিনি এটি মুভ করতে পারেন। কিন্তু ওনি সরাসরি কোনোভাবেই এটি মুভ করতে পারবেন না। এটি নিয়ে হাইকোর্টের স্পষ্ট রুলিং আছে। যে লোকাল বারের আইনজীবী যদি ওনাকে অ্যানগেজড করেন সেক্ষেত্রে ওনি ওনার সঙ্গে অ্যাসিস্ট করতে পারেন। এটা চট্টগ্রাম বারের না শুধু এটা সারা বাংলাদেশের নিয়ম। ওনি এটা ফলো না করে মামলা মুভ করতে এসেছেন।’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আদালত ওনাকে (রবীন্দ্র ঘোষ) সুযোগ দিয়েছিলেন। ওনাকে বলেছেন, এ বারের যেকোনো একজন আইনজীবী আপনি এনে, ওকালতনামা দিয়ে শুনানি করেন। আদালত তিনবার ওনাকে সময় দিয়েছেন। কিন্তু তিনি বিধি মোতাবেক উপস্থিত হতে পারেননি। তাই আবেদনটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। চিন্ময় দাশের জামিন শুনানি পূর্ব নির্ধারিত ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে রীতি হচ্ছে, দেশের যেকোনো বারের একজন আইনজীবী আমাদের বারের একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে ও তার ওকালতনামা দিয়ে- সংযুক্ত হয়ে মুভ করতে পারেন। কিন্তু উনি কারো ওকালতনামা দিতে পারেননি।’
আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ বিকেলে বলেন, ‘আজকে মুভ করেছিলাম। এই বারের আরেকজন আইনজীবী না থাকার কারণে ওনি এটা পেন্ডিং রেখে দিয়েছেন। এটা যদি রিজেক্ট হয়, আমরা হাইকোর্টে যাব।’
উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ে নগরের কোতোয়ালী থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে তাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। গত ৩ ডিসেম্বর জামিন শুনানিতে চিন্ময়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ না নেওয়ায় আদালত শুনানি পিছিয়ে ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি ধার্য করেন।