বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে লক্ষ্মীপুরে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহরের শ্যাম সুন্দর জিউর আখড়া থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়।
মিছিলটি থানা রোড, উত্তর তেমুহনী, চকবাজার, সামাদ স্কুল মোড়সহ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়। এতে বিপুল সনাতন ধর্মাবলম্বী উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্য দেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শংকর মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিলন মণ্ডল, যুব ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শিমুল সাহা ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের জেলা সমন্বয়ক কেসব দাস প্রমুখ।
যুব ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শিমুল সাহা বলেন, ‘চিন্ময় দাস এরই মধ্যে সনাতনী সম্প্রদায়ের মাঝে জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। তারা ডাকে লাখ লাখ লোকের সমাবেশ হয়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে তাকে গ্রেপ্তার করে করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিন্ময়কে যদি মুক্তি দেওয়া না হয় তাহলে সারা বাংলাদেশে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর পাশাপাশি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্তসহ নেতাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাদের কথা বলার অধিকারকে রুদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এ প্রতিবাদ মিছিল থেকে মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে আজ বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল চিন্ময়ের। সে সময় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেন, ‘পুলিশের একটি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। যারা আবেদন করেছে, তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা দায়ের হয়। মামলার পরই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন- রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ।
মামলার আসামিরা হলেন পুণ্ডরীক ধাম মন্দিরের অধ্যক্ষ চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্ত (৩৪), নগরীর প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাশ টিপু (৩৮), ডা. কথক দাশ (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাশ (৩৮), রাজীব দাশ (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে ববি (৩৮), তুষার চক্রবর্তী রাজীব (২৮), মিথুন দে (৩৫), রুপন ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাশ (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮) এবং হৃদয় দাস (২৫)। একই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি চিন্ময় প্রভু নামে পরিচিত। এ ছাড়া তিনি পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। কয়েক দিন আগে এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে সমাবেশ করে।