চীনে ২০০-এর বেশি নতুন কারাগার, কাদের জন্য?

2 weeks ago 15

দেশ জুড়ে ২০০-এর বেশি নতুন কারাগার নির্মাণ করেছে চীন সরকার। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নির্দেশেই এই কারাগারগুলো তৈরি করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার পুরনো কারাগার সংস্কার করে খোলা হয়েছে নতুন বিভাগ। সেখানে নতুন নিয়ম চালু করছে জিনপিং প্রশাসন। তবে এত কারাগার কী উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, দেশজুড়ে দুর্নীতি দমন অভিযান শুরু করেছেন জিনপিং সরকার। তার জন্যই নতুন কারাগারগুলো তৈরি করা হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের আটক করে রাখা হবে এসব কারাগারে। আর এ কারাগারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘লিউঝি সেন্টার’। 

জানা গেছে, চিন সরকারের জারি করা আইন অনুযায়ী, জড়িত সন্দেহভাজনদের অন্তত ছয় মাস বিনা বিচারে সেখানে বন্দি করে রাখা যাবে। এ সময়ের মধ্যে তারা কোনো আইনি সাহায্য পাবেন না। এমনকি, দেখা করতে পারবেন না পরিবারের সঙ্গেও। স্রেফ সন্দেহের বশেই আটক করা যাবে অভিযুক্তদের। 

জিনপিংয়ের এই ‘লিউঝি সেন্টার’গুলোর নানা বিশেষত্ব রয়েছে। বন্দি অবস্থায় কেউ যাতে নিজেকে আঘাত করতে না পারেন, তার জন্য দেওয়ালে লাগানো আছে নরম ফোম। ২৪ ঘণ্টা প্রহরা এবং নজরদারি ক্যামেরাও রয়েছে সেখানে।

ছয় মাস ‘লিউঝি সেন্টার’ নামক এই কারাগারে বন্দি থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন এমন একজন দাবি করেছেন, তাকে প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা সোজা হয়ে বসিয়ে রাখা হতো, ঘুমানোর অবকাশও দেওয়া হতো না। এমনই নানা ধরনের অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে ‘লিউঝি সেন্টার’ কারাগার পরিচালকদের বিরুদ্ধে। 

২০১২ সালে চীনে ক্ষমতায় এসেছিলেন জিনপিং। তার পর থেকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে তার মুঠি আরও শক্ত হয়েছে। বর্তমানে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিনপিংয়ের তৃতীয় মেয়াদ চলছে। বরাবর নিজের দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তিকে অটুট রাখতে চেয়েছেন জিনপিং। নানা সময়ে তার জন্য নানা পদক্ষেপ করেছেন। দেশজুড়ে ২০০-এর বেশি ‘লিউঝি সেন্টার’ তৈরি তার সে প্রচেষ্টারই অন্যতম অঙ্গ। 

চীনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত দিন ‘শুয়াংগুই সিস্টেম’ চালু ছিল। দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের সেখানে বন্দি করা হতো। অত্যাচার এবং হেনস্থার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছে সে ব্যবস্থা। অভিযোগ করা হচ্ছে, ‘লিউঝি সেন্টার’-এর মাধ্যমে তাকেই আবার নতুনরূপে ফিরিয়েছেন জিনপিং। 

চীনে দুর্নীতি দমন অভিযানে শাসক দলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রেহাই পাচ্ছেন না। এমনকি, ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে বিশেষ কারাগারে। উচ্চ-প্রোফাইল মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিনিয়োগ ব্যাংকার বাও ফ্যান এবং সাবেক ফুটবল তারকা লি টাই-এর নাম, যিনি দুর্নীতির জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন। 

২০১৭ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ২১৮টিরও বেশি লিউঝি কেন্দ্র নির্মাণ বা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মহামারির পর এই নির্মাণ কাজ আরও দ্রুত হয়েছে। নতুন এ কারাগারগুলো নিয়েও নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের সুযোগ তৈরি করছে।


 

Read Entire Article