চুয়াডাঙ্গার বৈধ ৩০ রেলগেটের ১৫টিতেই নেই গেটম্যান

3 weeks ago 6

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আমিরপুর গ্রাম। সহজে চলাচলের জন্য রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছেন ওই গ্রামের মানুষ। সেখান দিয়ে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছোট-বড় যানবাহনগুলো নিয়মিত চলাচল করে। সম্প্রতি ৮ জুলাই অরক্ষিত ওই রেলগেটে ট্রেনে কাটা পড়ে একই গ্রামের জীবন আলী (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়।

আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন আলমডাঙ্গা থেকে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে আসছিল। সেটি খেয়াল না করেই রেললাইনের ওপর উঠে পড়েন জীবন। ট্রেনের ইঞ্জিনে জড়িয়ে জীবন আলীর মরদেহ প্রায় ১০০ মিটার দূরে চলে যায়। এতে মরদেহটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এ ঘটনার পর স্থানীয়রা আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে অবরোধ করেন। এখানে স্থায়ীভাবে রেলগেট ও গেটম্যানের দাবি তোলেন তারা।

শুধু জীবন আলী নয়, এভাবে গত সাত মাসে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনুমোদনহীন অরক্ষিত রেলগেট, ত্রুটিযুক্ত ব্যারিয়ার, গেটম্যানের স্বল্পতাসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গার রেলক্রসিংগুলো। অবৈধ রেলগেটগুলোতে দায়সারাভাবে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গেট ও গেটম্যান না থাকা রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচল করা পথচারী, ছোট-বড় যানবাহন, বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর অবাধ বিচরণ রয়েছে। স্থানীয়রা বারবার বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিলেও হচ্ছে না সমাধান।

রেলওয়ের তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩০টি বৈধ গেট রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি গেটে গেটম্যান নেই। যার কারণে বৈধ গেটগুলোও মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে। এছাড়া ৫টি অবৈধ গেট রয়েছে। রেলপথের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য মানবসৃষ্ট আরও ২৫টি রাস্তা রয়েছে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর, মেইল ও পণ্যবাহী ট্রেন দিন-রাত চলাচল করছে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে। গেটের কাছে থাকা দোকানি ও সাধারণ মানুষ গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ট্রেন আসা-যাওয়ার সময়।

১৮৬২ সালে কলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে রেলপথে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সেই থেকে ট্রেন চালু রয়েছে। বর্তমানে এই রেলপথ দিয়ে আন্তঃনগর, মেইল ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ট্রেনে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় মানুষও অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এর ওপর। এ জেলায় রেলপথ রয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার।

স্থানীয়রা জানান, চুয়াডাঙ্গা আমিরপুর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটে। সহজে যাওয়ার জন্য মানুষ রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচল করে। যেখানে মানুষের চলাচল বেশি সেখানে রেলগেট নির্মাণ ও গেটম্যান প্রয়োজন। তাহলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।

চুয়াডাঙ্গা জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ জগদীশ চন্দ্র বসু বলেন, গত সাত মাসে চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে ৯ জন। পুলিশ প্রতিটি ঘটনার আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। সর্বশেষ আমিরপুর গ্রামে অবৈধ রেলগেটের কাছে ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। যা ছিল মর্মান্তিক ঘটনা। এখানে রেলগেট হওয়া প্রয়োজন।

অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের পাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী রফিকুল হোসেন বলেন, আমি বহুবার চোখের সামনে দুর্ঘটনা হতে দেখেছি। সরকারের রেলক্রসিং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। আর আমাদেরও সচেতন হতে হবে, কারণ অসতর্কতার জন্য নিজের জীবনই বিপন্ন হয়।

নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রী চুয়াডাঙ্গা শহরের জিসান আহমেদ বলেন, মাঝেমধ্যে ট্রেনে ঢাকা বা আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন প্রয়োজনে যাই। ভ্রমণকালীন সময় জানালার পাশে সিট পেলে অরক্ষিত গেটগুলো আমার চোখে পড়ে। আসলেই এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, চুয়াডাঙ্গা অংশে বৈধ রেলগেট রয়েছে ৩০টি। যার মধ্য ১৫টি গেটে কোনো গেটম্যান নেই। বৈধ গেটগুলোই যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে অবৈধ স্থানে কীভাবে নিরাপত্তা দেবো আমরা।

মানুষ সহজে চলাচলের জন্য রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বৈধ গেটে লোকবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। গেটম্যান পেলেই সমাধান সম্ভব। রেলের হিসাব অনুযায়ী ৫টি অবৈধ গেট রয়েছে। এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলেও জানান তিনি।

এফএ/এএসএম

Read Entire Article