চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা গ্রামে চরম হৃদয়বিদারক ও অবিশ্বাস্য এক ঘটনা ঘটেছে। মরদেহ আটকে রেখে আদায় করা হয়েছে সুদের টাকা। বিষয়টি নিয়ে চারিদিকে উঠেছে নিন্দার ঝড়।
জানা যায়, গ্রামের নতুনপাড়ায় নিয়ামত আলীর ছেল রাজমিস্ত্রী হারুন (৪৫) গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) মেয়ের বাড়ি মেহেরপুরের মহাজনপুরে বেড়াতে যান। রোববার সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ স্ট্রোকে করে মারা যান তিনি। মরদেহ নিজ গ্রামে আনা হলে পরিবার-পরিজনের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। এদিন আসরের নামাজের পর দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। জীবনের সব দায়-দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে এমনটিই ভাবছিলেন স্বজনরা। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটে এক অকল্পনীয় অমানবিকতা।
স্থানীয়রা জানান, মরদেহ গোসলের সময় প্রতিবেশী মর্জিনা খাতুন দাবি তোলেন হারুনের কাছে সুদের ১৫ হাজার টাকা পাবেন তিনি। তিনি সরাসরি জানিয়ে দেন, ওই টাকা পরিশোধ না করলে মরদেহ দাফন করতে দেওয়া হবে না। শোকাহত পরিবার মরদেহ পাশে রেখে টাকার জন্য তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। আশপাশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়েন এমন ঘটনায়। অবশেষে প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিবার বাধ্য হয়ে টাকা পরিশোধ করে। টাকা হাতে পেয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ ও জনরোষের মুখে সটকে পড়েন মর্জিনা।
তবে এরইমধ্যে স্থানীয় ‘রেডিও চুয়াডাঙ্গা’ নামের ফেসবুক পেজে এই ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ হলে তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সৃষ্টি হয় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়।
আরও পড়ুন-
মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর মরদেহ, স্বামী ও শ্বশুর আটক
ছেলে শিশু চুরির দায়ে ১১ দিনের মেয়ে নিয়ে কারাগারে শাহজাদী
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আন্দোলন-অবরোধ স্থগিত
নিহত হারুনের চাচাতো ভাই মতিনুর ইসলাম মানিক বলেন, আমার ভাই গত দেড় মাস আগে মর্জিনা খাতুনের কাছ থেকে আট হাজার টাকা ধার নেন। সেই টাকা তিনি ব্যবসার কাজে লাগিয়েছিলেন। রোববার সকালে মরদেহ গোসলের সময় মর্জিনা দাবি করেন সুদসহ ২২ হাজার টাকা পাবে। দাফন শেষে এ বিষয়টি মিটমাট করা হবে জানালে তিনি বলেন, টাকা না পেলে দাফন করতে দেবেন না।
তিনি আরও বলেন, এমনকি আমার গরুটি তার বাড়িতে রেখে আসতে চেয়েছি, পরে নগদ টাকা দিয়ে গরু নিয়ে আসব বললেও তিনি শোনেননি। পরে ২২ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন মর্জিনা। এরপরই পরিবারের সদস্যরা খুব কষ্টে ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে মরদেহের খাটিয়ার ওপর রাখেন৷ পরে সেই টাকা মর্জিনা খাতুন নিয়ে যান।
মানিক আরও বলেন, তিনি (মর্জিনা) একজন বড় সুদ কারবারি। গ্রামের মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। প্রতিবাদ করলেই তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দেন। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মূল টাকা হারুন জীবিত থাকতেই পরিশোধ করেছিলেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ আটকে রেখে সুদের টাকা আদায় করা সমাজের চোখে ন্যাক্কারজনক, ঘৃণিত ও লজ্জাজনক কাজ। মর্জিনা দীর্ঘদিন যাবত সুদের ব্যবসা করে আসছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেও হয়রানি করেছেন তিনি।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু মরদেহ আটকে সুদের টাকা আদায়ের মতো ঘটনা এই প্রথম দেখলাম। মৃত মানুষের মরদেহ আটকে রেখে টাকা আদায় করা কেবল লোভ নয়, এটা সমাজের জন্য চরম লজ্জার বিষয়।
এ বিষয়ে জানতে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হুসাইন মালিক/এফএ/জেআইএম