ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুরে আবরার জাওয়াদ দারুন (১৫) নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্র দুইদিন নিখোঁজ থাকার পর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
পরিবারের অভিযোগ, চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার পর দারুণের মরদেহ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। আবরার জাওয়াদ দারুণ শহরের চর কমলাপুরের বাসিন্দা ভিয়েতনাম প্রবাসী কামরুল ইসলামের একমাত্র সন্তান।
এদিকে দারুণের মা কিছুদিন আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে দারুণ চরকমলাপুরে তার দাদির কাছেই থাকতো।
পুলিশ জানায়, গেরদা গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি মো. সোহেল মঙ্গলবার দুপুরে সাহেববাড়ি পুকুরে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবরাব জাওয়াদ দারুণের মরদেহ উদ্ধার করে।
দারুণের চাচা মার্শাল টিটো বলেন, গত সপ্তাহে দারুণকে শাহীন আবাসিক স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে দুইদিন থাকার পর গত শুক্রবার রাতে দারুনকে তারা ফরিদপুরের বাসায় নিয়ে আসেন। রোববার (১০ নভেম্বর) রাতে সে হঠাৎ নিখোঁজ হয়। সোমবার দুপুরের পর তারা ফেসবুকে দারুণকে জোয়াইরের মোড়ের একটি দোকানে চোর সন্দেহে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ভিডিও দেখতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে তারা শহরের জোয়াইরের মোড়ে লোক পাঠালে তাদেরকে জানানো হয় সেখান থেকে অনেক আগেই দারুণকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, জোয়াইরের মোড়ে সোমবার রাতে অটোরিকশা চুরি হয়। এ ঘটনায় ওই অটোরিকশা চোরকে ধরা হয়। এর কিছুক্ষণ আগে সেখানে সন্দেহভাজন ঘোরাফেরা করতে দেখে তারা দারুণকে আটক করে। এরপর তারা পুলিশে খবর দেয়। তবে দারুণের অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনতে পেয়ে পুলিশের সন্দেহ না হওয়ায় তাকে আর আটক করেনি পুলিশ। পরে স্থানীয়রা তাকে একটি মুদি দোকানে রেখে নামাজ পড়তে গেলে এক ফাঁকে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
দারুণের চাচা মার্শাল টিটো আরও জানান, গত একমাস যাবত দারুন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ করে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতো। মা-বাবার বিচ্ছেদের বিষয়টি তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল।
তিনি অভিযোগ করেন, জোয়াইরের মোড়ে দারুণকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও তাকে মারপিট করা হয় বলে জানতে পেরেছি। এ সময় দারুন বার বার বলছিল তার বাড়ি চর কমলাপুরে। কিন্তু তারা তার কথায় কোনো কর্ণপাত না করে নির্যাতন করে। এরপর সে কীভাবে সেখান থেকে বের হলো এবং কীভাবে তার মরদেহ ওই পুকুরে আসলো এ বিষয়টি জানতে পারেননি।
এদিকে দারুন নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি পরিচিত জনেরা ফেসবুকে মাধ্যমে পোস্ট দেন। এরপর সোমবার বিকেল পাঁচটার পরে এই দুটি নম্বর থেকে তার চাচা মার্শাল টিটোর মোবাইল নম্বরে ফোন করে বলা হয়, দারুন মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক্সিডেন্ট করেছে। তার দ্রুত রক্ত লাগবে আপনারা টাকা পাঠান। এরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে মার্শাল টিটো প্রথম নম্বরটিতে ৭৭০০ টাকা পাঠান।
মার্শাল টিটো ঢাকায় হেলথ ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন। তিনি মানিকগঞ্জে অবস্থানরত তার এক কলিগকে ফোন করে তার ভাতিজার খোঁজ নিতে বলেন। তখন তিনি জানতে পারেন যে, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর প্রতারকের মোবাইল ফোন দুটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
দারুণের নিকটতম প্রতিবেশী চরকমলাপুরের বাসিন্দা নান্টু খান জানান, মা-বাবার ডিভোর্সের পর দারুণ তার দাদির বাড়িতে থাকতো। তার দাদি হালিমা বেগম সারদা সুন্দরী কলেজের আয়ার চাকরি করেন।
নান্টু খান বলেন, পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধারের সময় দারুণের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন তিনি। তাকে নির্যাতন করে হত্যার পর মরদেহটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে গেরদা ইউনিয়নের সাহেব বাড়ির পুকুর থেকে দারুণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে তার মরদেহ উদ্ধারের সময় তারা কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়ননি। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বাদ আসর বিলমামুদপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল জানান, আবরার জাওয়াদ নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে খবর পেয়ে সাহেববাড়ি পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, দারুণের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা রুজু করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে যদি তাকে নির্যাতন বা অন্য কোনোভাবে মেরে ফেলার আলামত পাওয়া যায় তাহলে পরবর্তীতে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এন কে বি নয়ন/এফএ/এএসএম