ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিহতদের তালিকা প্রণয়নসহ ১৬ দফা প্রস্তাব

2 months ago 32

অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নসহ ১৬ দফার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ল’ ইয়ার্স ফোরাম।

এছাড়া রাজনৈতিক সরকারকে উৎসাহিত করতে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করতে হবে বলেও মতামত দেন তারা।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে ফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। ফোরামের সভাপতি সাবেক বিচারপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি ডঃ. গোলাম রহমান ভূইয়া। এসময় ফোরামের নেতা আইনজীবী সফিকুর রহমান, দেলওয়ার হোসেন, মাইনুদ্দীন ফারুকী, মুজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই ১৬ দফা প্রস্তাব হলো:

১। শিগগির ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ নিহতদের তালিকা প্রণয়ন ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গঠন করা এবং জাতীয়ভাবেও তালিকা করা প্রয়োজন।

২। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা পরাজিত কতিপয় গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

৩। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি বিরোধীসংস্থাসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

৪। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে নির্বাচনী সংস্কার প্রয়োজন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ইভিএম বাতিলসহ প্রচারণায় অর্থের কঠোর নজরদারি এবং ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো পদক্ষেপগুলো নির্বাচন পরিস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।

৫। অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সমাজকল্যাণের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়। বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক বৈষ্যমের মতো সামাজিক অসন্তোষের মূল কারণগুলোকে মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

৬। দুর্নীতি মোকাবিলয়ায় জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করতে হবে।

৭। বিচার বিভাগীয় সংস্কার ও বিচারিক স্বাধীনতা যা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করবে।

৮। হস্তক্ষেপমুক্ত করা এবং আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি। প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কার ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

৯। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যায় জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দ্রুত সময়ে বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে।

১০। শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। বিশ্ব নেতৃত্বের উপযোগী এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ, যোগ্য ও দেশ প্রেমিক নাগরিক তৈরি করার লক্ষ্যে ধর্ম ও নৈতিক মূল্যবোধ সমন্বয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ রুপে ঢেলে সাজাতে হবে।

১১.। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

১২। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকারকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে করে কেউ চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট সৃষ্টি করতে না পারে।

১৩। রাজনৈতিক সরকারকে উৎসাহিত করতে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করতে হবে।

১৪। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে অর্থনৈতিক নীতিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেকারত্বের সমস্যার সমাধান করতে হবে।

১৫। বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, যথেচ্ছা গ্রেফতার ও আটক, গুম, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া ও আয়না ঘর সৃষ্টিসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে, যেগুলোর নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

১৬। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, বিশেষত যারা অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি বলপ্রয়োগ করেছেন বা করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এফএইচ/এসএনআর/এএসএম

Read Entire Article