ছাত্র আন্দোলনে নাশকতার এক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চুয়াডাঙ্গার ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনের মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার সময় হাতকড়া পরানো এবং নাটোর জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মহসিন ও তার পিতাকে নাটোরের দায়রা ও জেলা জজকোর্টে নিয়মিত হাজিরার সময় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে কোর্টে তোলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। সংগঠনটি বলছে, এ ধরনের ঘটনা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা, প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত ১২ নভেম্বর থেকে কারাগারে আছেন চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে স্ট্রোকজনিত কারণে জাহাঙ্গীরের মা আলেয়া খাতুনের (৭০) মৃত্যু হয়। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে মায়ের দাফনে অংশ নিতে জাহাঙ্গীরের প্যারোলে মুক্তি চেয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করা হয়। পরে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাকে মুক্তির অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর পুলিশি পাহারায় প্রথমে নিজের বাড়িতে যান জাহাঙ্গীর। হাতকড়া পরেই মায়ের মরদেহের খাট বহন করেন এবং জানাজা ও দাফনে অংশ নেন। জানাজার সময় তার হাতকড়া পরিহিত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া একই দিনে নাটোরের দায়রা ও জেলা জজকোর্টে নিয়মিত হাজিরার সময় নাটোর জেলার ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মহসীন আলম ও তার পিতাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে কোর্টে তোলা হয়েছে।’
এইচআরএসএসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মায়ের জানাজা, মরদেহের খাট বহন ও দাফনে অংশ নেওয়ার সময় জাহাঙ্গীরের হাতকড়া খুলে না দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতি ও প্রথার প্রতি অসম্মান করা হয়েছে। এ ঘটনা শুধু অমানবিকতারই উদাহরণ নয় বরং বাংলাদেশের সংবিধান, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৫ ও ১৮নং ধারা এবং মৌলিক মানবাধিকারের স্পষ্টত লঙ্ঘন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ (৫) অনুযায়ী, বিচার বা দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানসিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া ডান্ডাবেড়ি পরানোসংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি বলে এইচআরএসএস মনে করছে।
শিবির নেতা মহসিন ও তার পিতার বেলায়ও একই ধরনের নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন ও কড়া নজরদারিসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে পারত। এর আগে পতিত সরকার শেখ হাসিনার রিজিমেও এমন ঘটনা অহরহ পরিলক্ষিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশেও এমন ঘটনা দেখাটা যেমন দুঃখের, ঠিক তেমনই লজ্জাজনকও বটে।’
ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের দাবি জানিয়ে এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, চুয়াডাঙ্গার ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনের মায়ের জানাজায় এবং নাটোরের আদালতে মহসিন ও তার পিতার বেলায় ঘটে যাওয়া অমানবিক ও নিষ্ঠুরতম এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।