ছাত্রাবাসের অভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ১২০০ শিক্ষার্থী

প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পরও বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রাবাস। ফলে ভাড়া বাসায় থাকতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি আর ঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছেন অধ্যয়নরত প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয় বখাটে ও মাদকাসক্তরা ভাড়া বাসায় গিয়ে হামলা, মারধর, মোবাইল-ল্যাপটপ ছিনতাইসহ মাদকের আড্ডাও বসায়। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে তাদের। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলেজের নিজস্ব জমি না থাকায় ছাত্রাবাস নির্মাণ করা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে যাত্রা শুরু করে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এখন পর্যন্ত এ কলেজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন, আর অধ্যয়নরত আছেন প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ছাত্রাবাস নির্মাণ না হওয়ায় আশপাশের এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতে হয় তাদের। এক বছরের স্ট্যাম্প চুক্তিতে বাসা নিতে হয়, ফলে সমস্যা দেখা দিলেও চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাসা পরিবর্তন করতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। এতে যেমন নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, তেমনি খরচের চাপেও পড়তে হচ্ছে অনেককে। সরেজমিনে প

ছাত্রাবাসের অভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ১২০০ শিক্ষার্থী

প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পরও বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রাবাস। ফলে ভাড়া বাসায় থাকতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি আর ঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছেন অধ্যয়নরত প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয় বখাটে ও মাদকাসক্তরা ভাড়া বাসায় গিয়ে হামলা, মারধর, মোবাইল-ল্যাপটপ ছিনতাইসহ মাদকের আড্ডাও বসায়। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে তাদের। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলেজের নিজস্ব জমি না থাকায় ছাত্রাবাস নির্মাণ করা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে যাত্রা শুরু করে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এখন পর্যন্ত এ কলেজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন, আর অধ্যয়নরত আছেন প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ছাত্রাবাস নির্মাণ না হওয়ায় আশপাশের এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতে হয় তাদের। এক বছরের স্ট্যাম্প চুক্তিতে বাসা নিতে হয়, ফলে সমস্যা দেখা দিলেও চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাসা পরিবর্তন করতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। এতে যেমন নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, তেমনি খরচের চাপেও পড়তে হচ্ছে অনেককে।

ছাত্রাবাসের অভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ১২০০ শিক্ষার্থী

সরেজমিনে পলিটেকনিক সংলগ্ন বিভিন্ন ছাত্রাবাস ঘুরে দেখা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় অনেক বাসিন্দা শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য ছাত্রাবাস তৈরি করেছেন। মাসিক ভাড়া চুক্তিতে এসব আবাসনে থাকছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। কোনোটির থাকার অবস্থা ভালো হলেও নেই খাবারের ব্যবস্থা। আবার কোনোটিতে খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও নেই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। তাই বাধ্য হয়েই হোটেলে খাবার খেতে হচ্ছে এসব ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের।

বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই উত্তর অঞ্চল থেকে আসায় এবং স্থানীয়ভাবে কেউ পরিচিত না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রাবাস না থাকার সুযোগে স্থানীয় বখাটে ও মাদকাসক্তরা ভাড়া বাসায় গিয়ে হামলা, মারধর, মোবাইল-ল্যাপটপ ছিনতাইসহ মাদকের আড্ডাও বসায়। ফলে নির্যাতন আর নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষাজীবন পার করছেন শিক্ষার্থীরা। সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েন ছাত্রীরা।

ছাত্রাবাসে থাকতে হলে এক বছরের চুক্তি করে থাকতে হয় বলে জানান আরিফ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন,‘পিরোজপুর থেকে বরগুনায় পড়তে এসেছি। এখানে এসে যে মেস ঠিক করে উঠেছি তারা আমার কাছ থেকে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর নিয়েছে। এক বছরে আমি অন্য কোথাও যেতে পারবো না। একই অবস্থা আমাদের সব শিক্ষার্থীর।’

ছাত্রাবাসের অভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ১২০০ শিক্ষার্থী

সিভিল বিভাগে অধ্যানরত লামিয়া আক্তার বলেন, ‘ছেলেরা সহজেই হোস্টেলে থাকতে পারে। কিন্তু আমরা থাকে সবচেয়ে বিপদে। আমাদের থাকতে হয় সাবলেট বাসায়। এতে যেমন সবসময় থাকতে হয় নিরাপত্তার শঙ্কায়, আবার ওই পরিবারের নিয়ম মেনে আমাদের থাকতে হয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে নানা সময়ে কলেজে আসা যাওয়ায় করতে গেলে ওইসব বাড়ির মানুষজন ভালো চোখে দেখে না। এছাড়াও অনেক কিছু মানিয়ে তারপর ফ্যামিলি বাসায় মেয়েদের ভাড়া থাকতে হয়। যদি আমাদের কলেজে একটি ছাত্রাবাস থাকতো তাহলে আমাদের স্বাধীনতা থাকতো। অভিভাবকরাও আমাদের নিয়ে নিশ্চিত থাকতো।’

কলেজের নিজস্ব ছাত্রাবাস না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে জানিয়ে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এনভায়রনমেন্ট বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কলেজে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসে। এসব শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মেয়েদের জন্য কলেজে থাকার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। তবে অনেক সময় তারা ওই সব বাসায় নিজেদের নিরাপদ মনে না করায় পড়ালেখা শেষ করতে পারে না। শুধুমাত্র কলেজের নিজস্ব কোনো থাকার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে।’

বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিল চন্দ্র কির্তুনিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পৌর শহরের বাইরে। এখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দেশের উত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পড়াশোনা করতে আসে। কলেজের নিজস্ব কোনো আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় শহরের বিভিন্ন এলাকার মেস ভাড়া করে থাকতে হয় তাদের। এ কারণে শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষকই বরগুনা জেলার বাইরে থেকে আসেন, তারাও আবাসন সংকটে আছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে তথ্য চেয়েছিল, আমরা জমি এবং স্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছি। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে কলেজের ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমে যাবে।

ছাত্রাবাসের অভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ১২০০ শিক্ষার্থী

বরগুনার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ঈসা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, তিন বছর আগে কলেজ পরিদর্শন করে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা ছাত্রাবাস নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি ও সাইটপ্ল্যান করে পাঠিয়েছি। তবে সমস্যা হচ্ছে ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য কলেজের কোনো জমি নেই। জমি অধিগ্রহণের জন্য এই প্রকল্পে কোনো অর্থ বরাদ্দও নেই। যদি ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ হয়, আমরা ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা ছাত্রাবাস তৈরি করে দেবো।

এফএ/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow