দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে ২২ বছরের তরুণ কনি মিয়ার। চোখের সামনে ছেলের নীরব মৃত্যু সহ্য করতে পারছেন না গর্ভধারিণী মা। নিজের একটি কিডনি দিয়ে সন্তানকে বাঁচাতে চান। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ জোগাড় করতে না পারায় অস্ত্রোপচার হচ্ছে না কনির। আর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দ্রুত শরীরে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে কনি মিয়াকে বাঁচানো যাবে না।
শেরপুর শহরের চকপাঠক মহল্লার দিনমজুর আশরাফ আলী ও মনোয়ারা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে ছোট কনি মিয়া। বর্তমানে রাজধানীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
স্থানীয়রা জানান, মামার বাড়িতে চার ভাই আর মা-বাবা নিয়ে বাস কনি মিয়ার। কনির দিনমজুর বাবাও হার্টের রোগী। কিডনির চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
কনি মিয়ার মামা ইজিবাইক চালক মানিক মিয়া বলেন, ‘আশরাফ আলীদের জায়গা-জমি নেই। তাই আমাদের এখানে কোনোরকম ছোট্ট একটি ঘর উঠিয়ে দিন কাটাচ্ছে। কনি মিয়াসহ তারা চার ভাই। সবাই দিনমজুরি কাজ করে সংসার চালাচ্ছিল। হঠাৎ বছর দুয়েক আগে কনির চোখে সমস্যা দেখা দেয়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষার পর কিডনিতে সমস্যা শনাক্ত হয়। তারপর থেকে কিডনির চিকিৎসা চলছে।’
তিনি জানান, কনি মিয়ার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। এখন কিডনির মাত্রা ১৬ পয়েন্টের ওপরে। প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। এতে ১০ হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। স্থানীয়রা ডায়ালাইসিস করাতে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে কনি মিয়াকে বাঁচানো যাবে না।
মানিক মিয়া জানান, ল্যাবএইড, ইবনে সিনা, পপুলার, কিডনি হাসপাতালসহ রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারের টাকা শেষ হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজন, কনির বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই টাকা তার চিকিৎসার জন্য খুবই নগণ্য। কনির বাবার ভিটেও নেই, যে বিক্রি করে প্রতিস্থাপনের ১০ লাখ টাকা জোগাড় করবেন। এজন্য সবার সহযোগিতা চান কনি মিয়া।
আরও পড়ুন:
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান রতন জানিয়েছেন, কনি মিয়ার কিডনি বর্তমান যে পর্যায়ে রয়েছে, দ্রুত প্রতিস্থাপন করা না গেলে বড় কোনো সমস্যা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কনিকে বাঁচাতে কিডনি প্রতিস্থাপন জরুরি।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আজকের তারণ্য’র সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, ‘চিকিৎসকরা কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। এ অবস্থায় ছেলের জীবন বাঁচাতে নিজের কিডনি দিতেও প্রস্তুত মা মনোয়ারা বেগম। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিস্থাপনের খরচ। বিত্তবানদের কাছে আকুতি, কনি মিয়াকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসুন।’
শেরপুর গ্র্যাজুয়েট ক্লাবের সভাপতি আল আমিন রাজু বলেন, ‘ছেলেটি খুব অসুস্থ। তার বেঁচে থাকার জন্য কিডনি প্রতিস্থাপন জরুরি। কিডনি প্রতিস্থাপনে ১০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়। যেহেতু তার পরিবারের এই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়, আমি বিত্তশালীদের অনুরোধ করবো, তারা যেন কনি মিয়ার পাশে দাঁড়ান।’
এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কিডনি-ক্যানসারসহ ছয়টি রোগের ওপরে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য অনুদান দিতে পারি। তারা আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে।’
মো. নাঈম ইসলাম/এসআর/এমএস