জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দেশের পঞ্চম কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশে অনুমোদিত ‘জকসু ও হল সংসদ নির্বাচনী বিধি-২০২৫’ অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করছে নির্বাচন কমিশন। তবে ওই বিধিমালায় নির্বাচনী ব্যয় এবং নির্বাচন-পরবর্তী শিক্ষার্থী সংসদ পরিচালনার জন্য বাজেট বরাদ্দের উৎস সম্পর্কে নেই কোনো নির্দেশনা। ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে নির্বাচন কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উভয়ই।
জকসু বিধিমালা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে ও জকসুর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট খাত রাখা হয়নি। জকসুর আয় ও আয়ের খাত, ব্যায়ের নির্দেশনাবলি, অর্থ ব্যয়ের সমন্বয়সহ আর্থিক বিষয়াবলি উল্লেখ নেই।
এদিকে নির্বাচন কমিশনকে ব্যালট পেপার ছাপানো, মনোনয়ন ফর্ম প্রস্তুত, সিসিটিভি স্থাপন, কেন্দ্র পরিচালনা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খাতে উল্লেখযোগ্য অর্থ ব্যয় করতে হবে। কিন্তু এসব ব্যয়ের পরিকল্পনা এখনো সুস্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তর নির্বাচন কমিশনকে সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি বাজেট খসড়া তৈরির নির্দেশ দিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছে নির্বাচনী ব্যয়ের খাতগুলো নিয়ে একটি বাজেট চেয়েছে। প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচন হওয়ায় কীভাবে এগোবো তা চ্যালেঞ্জের বিষয়। তারপরও কয়েক দিনের মধ্যে আমরা একটি খসড়া বাজেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেব। আমরা পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চাই।
এ বিষয়ে অর্থ পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিধিমালায় জকসুর কেন্দ্রীয় তহবিল বরাদ্দের নিয়ম নেই। তবে কমিশনের জমা দেওয়া বাজেট প্রস্তাব হাতে পেলে কোন খাত থেকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে, তা আমরা বিবেচনা করব। হোক তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড কিংবা অন্য কোনো উৎস। পরে নির্বাচিত জকসুর জন্য ইউজিসির কাছে আলাদা বরাদ্দ চাওয়া হবে। প্রয়োজনে রিভাইজড বাজেটেও তা সংযুক্ত করা হবে। জকসুর আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ের খাত নির্ধারণের জন্য স্বতন্ত্র নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।’
উপাচার্য ও জকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘বর্তমানে জকসুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা কোনো ফান্ড নেই। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় নিজস্ব আয়ের খাত থেকেই দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ইউজিসি ও রিভাইজড বাজেটের মাধ্যমে তা সমন্বয় করা হবে। পাশাপাশি জকসুর জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বতন্ত্র তহবিল গঠনের বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।’
এর আগে বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে জকসুর তপসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। এদিন নির্বাচন কমিশন আগামী ২২ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও নানাবিধ প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমরা একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করা হবে। এবং একই দিনে ভোট গণনা করে ফল ঘোষণা করা হবে।’
তপশিল ঘোষণা করে অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান তপসিল বিবরণীতে বলেন, ‘ভোটার তালিকায় আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি ৯ ও ১১ নভেম্বর। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ১২ নভেম্বর। এ ছাড়া ১৩-১৭ নভেম্বর মনোনয়ন বিতরণ চলবে এবং ১৭ ও ১৮ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই করে ১৯ ও ২০ নভেম্বর সম্পন্ন করে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৩ নভেম্বর। পরবর্তীতে প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি ২৪-২৬ নভেম্বর।
এ ছাড়া প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হবে ২৭ ও ৩০ নভেম্বর। পরবর্তীতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ৩ ডিসেম্বর। এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। প্রত্যাখ্যান করা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ৯ ডিসেম্বর এবং প্রার্থীদের প্রচারণা ৯-১৯ ডিসেম্বর। সবশেষে ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ ও ২২-২৩ ডিসেম্বর ফল ঘোষণা করা হবে।

2 hours ago
9









English (US) ·