জগলুল হায়দারের ছড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক হাতিয়ার

1 hour ago 5

‘ছাত্র জাগলে একুশ হয়/ ছাত্র জাগলে নব্বই/ ছাত্র জাগলে লেখা হয়/ ইতিহাসের সব বই।’ কিংবা ‘ষড়যন্ত্রের সঙ বুঝি না, দেশটা বুঝি পুরা, দেশের গায়ে হাত দিলে জাস্ট হাড্ডি করুম গুঁড়া।’ এমন অসংখ্য সময়োপযোগী ছড়া-পদ্য রচনা করে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনকে প্রাণিত করেছেন ছড়াকার জগলুল হায়দার।

বিপ্লবী এসব সাহিত্যকর্মকে সামনে রেখে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল্যবোধ বাস্তবায়নে সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরালো করতে হবে। আধিপত্যবাদী কালচারাল মনোপলি ভাঙতে বাংলাদেশপন্থি মূল্যবোধ সম্পন্ন সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। কারণ জুলাইয়ের সাংস্কৃতিক অভিপ্রায় থেকে সরে গেলে বিপর্যয় নেমে আসবে।

২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ছড়াকার জগলুল হায়দার নাগরিক সংবর্ধনা কমিটি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কবি জাহিদ কাজী। ফজলুল হক তার বক্তব্যে বলেন, ‘জগলুল হায়দার শুধু একজন ছড়াকারই নন, তিনি আমাদের সময়ের এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। সাহসী কলম দিয়ে তিনি সমাজ-রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় সংকটের কথা সাহসিকতার সঙ্গে লিখে গেছেন। তার ছড়া বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আশা করছি জগলুল হায়দার আগামী দিনেও তার লেখালেখিতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসবেন।’

জগলুল হায়দারের ছড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক হাতিয়ার

কবি শাহীন রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, কবি জাকির আবু জাফর, কবি জামসেদ ওয়াজেদ, শিল্পী ও সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন মানিক, ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। প্রধান আলোচক ছিলেন চিন্তক, গবেষক ও সাংবাদিক ড. কাজল রশীদ শাহীন।

অতিথিরা বলেন, ‘জগলুল হায়দারের ছড়া পাঠকের অন্তরে সরাসরি আঘাত হানে। তার লেখনীতে প্রতিবাদ, বিদ্রূপ ও হাস্যরস এক অনন্য মিশ্রণ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে তিনি যে সাহসের সঙ্গে কলম ধরেছেন, তা তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে।’

আরও পড়ুন

আবু জাফর শামসুদ্দীন: সাহিত্য ও প্রগতির আলোকবর্তিকা
একটি জাতির জন্ম: প্রাসঙ্গিক আলোচনা

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, ‘জগলুল হায়দারের ছড়া শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এগুলো সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিচ্ছবি। তিনি নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, ছড়া কেবল শিশুসাহিত্য নয়, এটি হতে পারে শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদের হাতিয়ার।’

সংবর্ধিত ছড়াকার জগলুল হায়দার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ‘এ সম্মান আমার একার নয়, এটি বাংলা ছড়ার জয়। ছড়া আজ শিশুতোষ পরিসর অতিক্রম করে বৃহত্তর সমাজ-সচেতনতার ভাষা হয়ে উঠেছে। আমি কৃতজ্ঞ যারা আমার লেখনীকে ভালোবেসেছেন এবং সাহস জুগিয়েছেন।’

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংবর্ধনা কমিটির সদস্য সচিব কবি আবিদ আজম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিটির আহ্বায়ক ছড়াকার কাদের বাবু। অনুষ্ঠানে জগলুল হায়দারকে নিয়ে কাদের বাবু ও আবিদ আজম সম্পাদিত একটি সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি ও শিশুসাহিত্যিক মালেক মাহমুদ, শিশুসাহিত্যিক ইমরুল ইউসুফ, কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ, পুঁথিকবি জালাল খান ইউসুফী, কবি ও সাংবাদিক প্রতীক ওমর, কথাসাহিত্যিক মোকাদ্দেস-এ রাব্বী, কবি মঈন মুনতাসীর প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করেন কবি শিমুল পারভীন, মোশফেকা নীপা, কবি তানজীনা ফেরদৌস, ঢাবি শিক্ষার্থী শাহরিন শিরিন, মীম আক্তার জেরিন, নুসরাত জাহান রিয়া, সুরাইয়া স্নিগ্ধা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে লেখক, গবেষক, সাহিত্যপ্রেমী এবং পাঠকসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এসইউ/এমএস

Read Entire Article