‘জটমুক্ত’ বিসিএস কার্যকরের পথে পিএসসি

• কার্যকর রোডম্যাপে ‘জটমুক্ত’র পথে বিসিএস• সিলেবাস-প্রশ্নের ধরনে আসছে বড় পরিবর্তন• নন-ক্যাডার ও পদোন্নতির পরীক্ষায়ও ‘গতি’• দ্রুত পরীক্ষা, দ্রুত মূল্যায়ন ও দ্রুত ফল প্রকাশে নজর বছরে একটি করে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এক বছরের মধ্যেই সেটি শেষ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে লেগে যাচ্ছে তিন থেকে চার বছর। এতে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচটি বিসিএসের কার্যক্রম চলমান থাকে। বিসিএসের এমন জট কাঁধে নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, চার দশক ধরেই এমন বিসিএস জট লেগে আছে পিএসসিতে। সম্প্রতি এ জট কাটাতে রোডম্যাপ ধরে এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে গতি ফিরেছে পিএসসির কার্যক্রমে। কমছে জটও। এ ধারায় কার্যক্রম চললে ২০২৬ সালের পর ‘জটমুক্ত’ বিসিএস উপহার দিতে পারবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। পিএসসি বলছে, শুধু ২০২৫ সাল, অর্থাৎ এক বছরে চারটি বিসিএস শেষ করেছেন তারা। এছাড়া চলমান তিনটি বিসিএসের লিখিত, মৌখিক ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আগামী বছর (২০২৬) ৪৬ ও ৪৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করলেই জটমুক্ত হবে পিএসসি। কার্যকর রোডম্যাপে ‘গতিশীল’ পিএসসিবিসিএসের জট কাটাতে বিগ

‘জটমুক্ত’ বিসিএস কার্যকরের পথে পিএসসি

কার্যকর রোডম্যাপে ‘জটমুক্ত’র পথে বিসিএস
সিলেবাস-প্রশ্নের ধরনে আসছে বড় পরিবর্তন
নন-ক্যাডার ও পদোন্নতির পরীক্ষায়ও ‘গতি’
দ্রুত পরীক্ষা, দ্রুত মূল্যায়ন ও দ্রুত ফল প্রকাশে নজর

বছরে একটি করে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এক বছরের মধ্যেই সেটি শেষ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে লেগে যাচ্ছে তিন থেকে চার বছর। এতে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচটি বিসিএসের কার্যক্রম চলমান থাকে। বিসিএসের এমন জট কাঁধে নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, চার দশক ধরেই এমন বিসিএস জট লেগে আছে পিএসসিতে। সম্প্রতি এ জট কাটাতে রোডম্যাপ ধরে এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে গতি ফিরেছে পিএসসির কার্যক্রমে। কমছে জটও। এ ধারায় কার্যক্রম চললে ২০২৬ সালের পর ‘জটমুক্ত’ বিসিএস উপহার দিতে পারবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

পিএসসি বলছে, শুধু ২০২৫ সাল, অর্থাৎ এক বছরে চারটি বিসিএস শেষ করেছেন তারা। এছাড়া চলমান তিনটি বিসিএসের লিখিত, মৌখিক ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আগামী বছর (২০২৬) ৪৬ ও ৪৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করলেই জটমুক্ত হবে পিএসসি।

কার্যকর রোডম্যাপে ‘গতিশীল’ পিএসসি
বিসিএসের জট কাটাতে বিগত সময়েও পিএসসি কয়েক দফায় রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছিল। তবে কোনো কমিশনই সে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে বিসিএসের জটও কাটেনি।

৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর নতুন নেতৃত্ব পায় পিএসসি। চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম দায়িত্ব নেওয়ার পর ঝুলে থাকা বিসিএসগুলো দ্রুত শেষ করতে রোডম্যাপ প্রণয়ন করেন। তাতে ছয়টি বিসিএসের কোনটির প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা কবে শেষ করা হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়।

গত ৩ জুন রোডম্যাপ প্রকাশের পর তার কোনোটাতেই ব্যত্যয় ঘটেনি। রোডম্যাপ অনুযায়ী—১৯ জুন ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এরপর ২৪ জুলাই থেকে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এছাড়া যথাসময়ে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। একই সঙ্গে রোডম্যাপ মেনে ২৭ নভেম্বর থেকে এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও শুরু হয়েছে।

এদিকে, রোডম্যাপে চিকিৎসক নিয়োগে ৪৮তম বিশেষ বিসিএস তিন মাসে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পিএসসি। তাতেও কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। গত জুলাই মাসে লিখিত (এমসিকিউ টাইপ) ও মৌখিক পরীক্ষ নিয়ে সেপ্টেম্বরে তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া রোডম্যাপের বাইরে সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগে ৪৯তম বিশেষ বিসিএসও শেষ করা হয়েছে মাত্র তিন মাসে। এতে ছয় শতাধিক শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে পিএসসি।

পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) মাসুমা আফরীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ৪৪, ৪৫, ৪৮ ও ৪৯তম বিসিএসে এ বছর নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছি। আগামী বছর ৪৬ এবং ৪৭তম শেষ হয়ে যাবে। চলতি মাসে প্রকাশিত ৫০তম বিসিএসও ২৫ নভেম্বরের শেষ করার রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, আর কোনো জট থাকবে না।’

জটমুক্ত বিসিএসের পথে পিএসসি
বছরের নভেম্বর মাসে একটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি হবে। সেটির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে পরবর্তী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। এভাবে ‘এক বিসিএস, এক বছরে’—উদ্যোগ বাস্তবায়নে তৎপর পিএসসি। ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারলেই প্রার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি জটমুক্ত বিসিএসে উপহার দিতে পারবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

পিএসসির পরীক্ষা শাখার দুজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, ২০২৬ সালে আমাদের লক্ষ্য ৪৬তম ও ৪৭তম বিসিএস। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ। ডিসেম্বরে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে মৌখিক পরীক্ষা। এপ্রিল-মে মাসের মধ্যেই ৪৬ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল পেয়ে যাবেন প্রার্থীরা।

তারা আরও জানান, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১৮ ডিসেম্বর। মার্চের মধ্যে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হলে মে-জুনে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আগস্টে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হতে পারে। যদি কোনো কারণে কিছুটা পিছিয়েও যায়, তাতেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের বেশি সময় লাগবে না। তখন থাকবে শুধুই ৫০তম বিসিএস। কোনো জট থাকবে না।

আমরা চাই না চাকরিপ্রার্থীদের জীবন থেকে তিন-চারটি বছর হারিয়ে যাক। এটা বন্ধ করা জরুরি। বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির পর দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। দ্রুত চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করতে চাই। এজন্য রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই পথ ধরেই আমরা এগোচ্ছি।- পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম

এদিকে, গত ২৬ নভেম্বর ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি। প্রথমবারের মতো বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ এবং চূড়ান্ত ফল প্রকাশসহ সব কিছুর রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী- আবেদন শুরু হবে ৪ ডিসেম্বর, যা চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ৩০ জানুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রিলির ফল প্রকাশ করা হবে ১০ ফেব্রুয়ারি।

প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে ৯ এপ্রিল এবং ফল প্রকাশ করা হবে ৩০ জুলাই। ১০ আগস্ট থেকে শুরু হবে মৌখিক পরীক্ষা। আর ২৫ নভেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। অর্থাৎ, ৩৬৫ দিন বা এক বছরের মধ্যেই শেষ হবে ৫০তম বিসিএস।

বিসিএসের সিলেবাস পরিবর্তনের কাজেও অগ্রগতি
বিসিএসের সিলেবাস ও প্রশ্নের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। পাশাপাশি একাডেমিক জীবনে একজন শিক্ষার্থী যা পড়ে আসছে, তার বাইরের বিষয় বেশি রাখা নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিসিএসের সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরনে বড় পরিবর্তনের কাজ করছে পিএসসি।

পিএসসি সূত্র বলছে, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের চাকরির প্রশ্নের ধরন ও সিলেবাস সংগ্রহ করেছে পিএসসি। এ নিয়ে একটি টিম কাজও করছে। গত ১৬ নভেম্বর বিসিএসের সিলেবাস বিষয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। পিএসসি ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে কর্মশালাটি করা হয়।

কর্মশালায় বিদ্যমান বিসিএস সিলেবাসের বেশ কিছু অংশ অপ্রয়োজনীয়, অস্পষ্ট ও অতিরিক্ত দীর্ঘ হওয়ায় তা প্রার্থীদের প্রস্তুতির জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে পারছে না বলেও জানানো হয়। মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে জাতীয় কারিকুলামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত, আধুনিক ও স্বচ্ছ একটি নতুন সিলেবাস প্রণয়নের সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা।

পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫০তম বিসিএস থেকে নতুন সিলেবাস কার্যকরের পরিকল্পনা ছিল। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ৫১তম বিসিএস থেকে নতুন ও যুগোপযোগী সিলেবাসের ভিত্তিতে বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতে প্রশ্নের ধরনেও বড় পরিবর্তন আসবে। প্রার্থীদের যৌক্তিক সময় দিয়েই নতুন সিলেবাস কার্যকর করা হবে।’

নন-ক্যাডার নিয়োগ অর্ধশতাধিক পরীক্ষা
শুধু বিসিএস নয়, পিএসসি নন-ক্যাডার নিয়োগেও চলতি বছর অসংখ্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এসব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদন গ্রহণ, পরীক্ষার আয়োজন ও ফল প্রকাশ করে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে হচ্ছে পিএসসিকে।

কমিশনের পরীক্ষা শাখা (নন-ক্যাডার) সূত্র জানায়, এ বছর অন্তত ৬০টি নন-ক্যাডার নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ করেছে পিএসসি। তার মধ্যে অন্তত ১০টি নিয়োগ পরীক্ষা শেষ করে ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

নন-ক্যাডার পরীক্ষা শাখার একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পিএসসি মানেই সবাই ভাবেন শুধু বিসিএস। কিন্তু বিসিএসের চেয়ে বিভিন্ন নন-ক্যাডার পরীক্ষা আয়োজনে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় পিএসসিকে। এখানে প্রার্থী বেশি, আবার প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন ঝুঁকিও বেশি। ফলে নন-ক্যাডার নিয়োগের পরীক্ষা আয়োজনেও পিএসসিকে বেগ পোহাতে হয়।’

চাকরিপ্রার্থীদের ৩-৪ বছর আর হারাতে হবে না
এক বিসিএসের পেছনে চাকরিপ্রার্থীকে তিন-চার বছর ব্যয় করতে হয়। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর বেকার জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে কয়েক লাখ যুবককে। অনেকে বিসিএসের পেছনে ছুটে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় হারিয়ে ফেলছেন। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে পিএসসি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চাই না চাকরিপ্রার্থীদের জীবন থেকে তিন-চারটি বছর হারিয়ে যাক। এটা বন্ধ করা জরুরি। বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির পর দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। দ্রুত চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করতে চাই। এজন্য রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই পথ ধরেই আমরা এগোচ্ছি।’

অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম বলেন, ‘বিসিএসের জট কমানোই পিএসসির প্রধান লক্ষ্য। এটি নিয়েই আমরা কাজ করছি। আশা করছি, ২০২৬ সালে জট কেটে যাবে। ২০২৭ সালের শুরুটা হবে জটমুক্ত বিসিএস দিয়ে। আমরা নতুন সিলেবাস করছি। এটি কার্যকর হলে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক লাইফে যা পড়ছে, যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তা দিয়েই বিসিএসে ভালো করতে পারবে, যা প্রয়োজন নয়, তা পড়ে আর সময় নষ্ট করতে হবে না। ফলে প্রিলির পর লিখিত পরীক্ষা নিতে বেশি সময় দিতে হবে না। দ্রুত পরীক্ষা, দ্রুত মূল্যায়ন ও দ্রুত ফল প্রকাশ করা হবে।’

এএএইচ/এএসএ/এমএফএ/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow