জনবল সংকটে কোটি টাকার হাসপাতাল, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

2 weeks ago 10

মা ও শিশুর উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভার গাবেরগ্রামে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু করা যায়নি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রটি। এতে অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতি ও শিশুদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। 

সপ্তাহে দুদিন একজন পরিদর্শিকা ও পিয়ন কাম চৌকিদার দিয়ে চলছে এ হাসপাতালের কার্যক্রম। ফলে বাধ্য হয়ে অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতি ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা নিতে উপজেলা সদরে ছুটে যেতে হচ্ছে। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তি, অতিরিক্ত ব্যয় ও জীবন ঝুঁকির পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানিও। 

স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালটি চালুর দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, আপাতত আংশিকভাবে কার্যক্রম চলছে। জনবল নিয়োগ হলে সেবার পরিমাণ বাড়ানো যাবে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে দুজন মেডিকেল অফিসারসহ অন্যান্য পদ রয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক), মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি), ফার্মাসিস্ট, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ফিমেইল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট, ড্রাইভার, অফিস সহায়ক, আয়া, সুইপার, এমএলএসএসসহ ১২ পদ খালি রয়েছে। পিয়ন কাম চৌকিদার প্রেষণে এ হাসপাতালে রয়েছেন। 

আরও জানা গেছে, হাসপাতালের ভবনটিতে দুটি চিকিৎসকের চেম্বার, দুটি নার্স রুম, ফার্মেসি, ল্যাব, ওয়েটিং রুম, কাউন্সেলিং রুম, স্টোর রুম, খাবার সরবরাহ কক্ষ, অফিস কক্ষ ছাড়াও রোগীদের জন্য সাধারণ ওয়ার্ড, এসিসংবলিত অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ রুমসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষ রয়েছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ না হওয়ায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হয় না। তাই ওয়ার্ডে নেই কোনো শয্যা, অপারেশন থিয়েটারে নেই অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। 

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে তিন তলাবিশিষ্ট ভবন আছে, প্রয়োজনীয় পরিমাণ আসবাবপত্র আছে, চিকিৎসকদের জন্য আবাসিক ভবনও আছে। নেই শুধু চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নির্মিত হাসপাতাল উদ্বোধনের পর দীর্ঘ ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। ফলে আধুনিক অবকাঠামোর এ হাসপাতালটি অনেকটা অকেজো এবং অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রহিমা আক্তার বলেন, হাসপাতাল উদ্বোধনের পর তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাননি। এখানে কোনো চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না। রোগী ভর্তি, অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা না থাকায় এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানুষের কোনো কাজেই আসছে না।

বালিজুড়ী ইউনিয়নের চরনাদাগাড়ি এলাকার লিপি বেগম বলেন, এ হাসপাতালে ডাক্তার থাকলে আমরা হাতের কাছেই সব চিকিৎসা পেতাম, ওষুধও পেতাম। বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় খরচ বাড়ে, সময় অপচয় হয়।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) ডা. সুস্মিতা দত্ত বলেন, গাবেরগ্রামের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে জনবল সংকটে রয়েছে। সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই। আমি কেন্দ্রটিতে সপ্তাহে একদিন চিকিৎসাসেবা দিই। এ ছাড়াও একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা তিন দিন রোগীদের সেবা প্রদান করেন।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, জনবল না থাকায় স্থানীয়ভাবে সমন্বয় করে আংশিকভাবে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

Read Entire Article