জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান নূর একটি নতুন গাণিতিক সূত্র আবিষ্কার করেছেন। এটি জটিল পাওয়ার-সাম (power-sum) নির্ণয়কে সহজতর করেছে। এই সূত্রটি গত ১০ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের গবেষণা প্ল্যাটফর্ম জেনোডো-তে (Zenodo) প্রকাশিত হয়েছে।
নূরের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার হাওয়ালভাংগী গ্রামে। তিনি আটুলিয়া আব্দুল কাদের স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। নূর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ম্যাথ স্কুল-এ গ্রে ম্যাথ পড়ান নূর।
এই জবি শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘ গবেষণার ফল হিসেবে এই সূত্রটি তিনি আবিষ্কার করেছেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এই সূত্র নিয়ে কাজ শুরু করি। কিন্তু প্রকাশের সঠিক পথ জানা ছিল না। বহুবার ব্যর্থতার মুখোমুখি হলেও অবশেষে ২০২৫ সালে নিজের গবেষণাপত্র লিখে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করতে সক্ষম হই।
জানা যায়, শৈশব থেকেই গবেষণার প্রতি নূরের গভীর আগ্রহ ছিল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে কলেজে আরেকটি থিওরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ‘ইন্টারভাল টেবিল মেথড’ তৈরি করেন। তবে অর্থনৈতিক সংকট ও পারিবারিক সমস্যার কারণে তার গবেষণা কিছুদিন বাধাগ্রস্ত হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় টিউশনি করে সংসার চালাতেন তিনি। কখনো দিনে চার থেকে ছয়টি টিউশনি করতে হতো। করোনাকালে টিউশনি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি অনলাইনে পড়ানো শুরু করেন এবং ‘আওয়ার ম্যাথ স্কুল’ (Our Math School) নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। ২০২১ সালে আমিনুর ‘জিওমেট্রি ফর কমপিটিটিভ এক্সাম’ নামে ৬০০ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবে বইটি সফল হয়নি। ২০২৪ সালে তিনি দেশের সবচেয়ে বড় গ্রে ম্যাথের অনলাইন কোর্স তৈরি করেন যাতে রয়েছে ২৮১টি ভিডিও এবং ৫০টির বেশি টেস্ট। এই কোর্স তৈরির জন্য তাকে প্রায় ৩ লাখ টাকা ধার করতে হয়।
২০২৫ সালে প্রকাশিত তার গবেষণায় ‘ইন্টারভাল টেবিল মেথড’-এর মাধ্যমে পাওয়ার-সাম নির্ণয়ের একটি সহজ পদ্ধতি উপস্থাপন করেছেন, যাতে জটিল বার্নোলি (Bernoulli) সংখ্যা বা স্টারলিং (Stirling) সংখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। গবেষকরা মনে করেন, এই পদ্ধতি কম্পিউটেশনাল ম্যাথমেটিক্সে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পাওয়ার-সাম বোঝা সহজতর হবে।
নূর জানান, তার গবেষণা এখানেই থামছে না। তিনি আরও দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পিএইচডি করার লক্ষ্য রয়েছে তার। তিনি বলেন, এই সূত্র প্রকাশ আমার গবেষণার প্রথম সাফল্য। আমি আশা করি, একদিন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুরঞ্জন কুমার দাস বলেন, আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আরও যত্ন নিলে এখান থেকেই আরও বিশ্বমানের গবেষক বের হবে। নূর যে সূত্রটা আবিষ্কার করেছে সেটা অংকের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনবে। অনেক কঠিন ইকুয়েশনকে সহজ করবে। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
টিএইচকিউ/এএমএ/জেআইএম