জবির সহকারী প্রক্টরসহ বাগছাসের ৩ নেতার ওপর ছাত্রদলের হামলা

2 months ago 9

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দুই শিক্ষকসহ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) শাখার তিন নেতার ওপর হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রদলের নেতকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ ভবনের নিচে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রফিক বিন সাদেক রেসাদের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে দুপুরের দিকে বিভাগে আটক রাখে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে মারধর শুরু করে তারা। এসময় একই বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ড. এ কে এম রিফাত হাসান এবং সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম রক্ষা করতে গেলে তাদেরকে গালিগালাজ ও হামলা করে ছাত্রদলের নেতকর্মীরা। একই সাথে শাখা বাগছাস সভাপতি, মুখ্য সংগঠক ও যুগ্ম-আহ্বায়ক যথাক্রমে মো. ফয়সাল মুরাদ, ফেরদৌস হাসান এবং ফারুককে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে তাদের উপরও হামলা ও মারধর শুরু করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বর্তমানে আহত দুজন ফয়সাল মুরাদ ও ফেরদৌস শেখ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি। 

শাখা বাগছাস আহ্বায়ক মো. ফয়সাল মুরাদ বলেন, বাগছাসের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুকের ওপর শহিদ সাজিদ ভবনের নিচে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান ও শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। আমি সামনে গিয়ে তাদের বলি, ফারুক জুলাই আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। ১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় তার মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল। তাকে ছাত্রলীগ হিসেবে ট্যাগ দিয়ে এভাবে মারধর করা ঠিক নয়। কিন্তু আমার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা তাকে মারধর করে।

তিনি আরও বলেন, জবি ছাত্রদলের ১২ থেকে ১৩ জন যদি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো, আমি তাদের একজন ছিলাম। ২৮ অক্টোবর ২০১৩ সালে পল্টনে গুলি খেয়েছিলাম। সেই আমাকেও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে তার কর্মীরা আমাকে কিলঘুষি মেরেছে। ছাত্রদলের যারা আমার এবং আমার জুলাই সহযোদ্ধাদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিচার করতে হবে তারা প্রত্যেকে অছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র দলের নামে অছাত্ররা সন্ত্রাস কায়েম করছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ট্র্যাকিং দিয়ে জুলাইয়ের আহত সহযোদ্ধাদের উপর হামলা চালাচ্ছে। জুলাইয়ের গুলিবিদ্ধ ফেরদৌস হাসানকে ঘিরে ধরে সবাই মিলে পিটিয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। আমাদের স্যাররা যখন আমাদের রক্ষার্থে এসেছে তখন তাদের শিক্ষকদের উপরও হামলা চালানো হয়েছে। গালাগাল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এগুলো পাওয়া যাবে।

হামলার শিকার হওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ও জবি শাখার গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, আমাদের এক জুলাই যোদ্ধাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে প্রথমে হামলা চালায়। পরে তাকে শিক্ষকদের সহায়তায় বাঁচাতে এলে আমাদের উপর হামলা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কে এ এম রিফাত হাসান ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম স্যারসহ বাগছাস জবি শাখার আহ্বায়কের উপর হামলা চালায়। আমি এই হামলার বিচার চাই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, আজকে আমরা জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করেছে। এরা বিভিন্ন সময় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে ক্যাম্পাসে ঢুকবে। এর আগে সাজিদ নামে একটি ছেলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল এবং ক্যাম্পাসে এসেছিল তারই অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে এসে সংগঠিত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অরাজকতার পায়তারা চালাচ্ছে। আজ যারা এদের মাধ্যমে আহত হয়েছে আঘাতের শিকার হয়েছে তারা এসে যখন এদের ধরতে যাই তারা উল্টো তখন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ঘটনা শোনা মাত্রই আমরা পুরো প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। এ মুহুর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিষয়টি সুরাহা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সিদ্ধান্ত সবার মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে।

Read Entire Article