জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যবহারে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির ধরণ ও মাত্রা নির্দেশ করে যে, এটি একটি দুর্নীতির নতুন সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশে দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৮৯১টি প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২ হাজার ১১০.৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক টিআইবির গবেষণার সার্বিক পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত মোট ১২টি তহবিলের আওতায় ৯৪২টি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয় গবেষণাটিতে। ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. মাহফুজুল হক ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. সহিদুল ইসলাম। এসময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থের চাহিদার বিপরীতে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থ বরাদ্দ হয়নি। জাতীয় তহবিল বা বিসিসিটির অর্থ বরাদ্দে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই, আবার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টে নানা সংকট রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অর্থ বরাদ্দে অধিক বিপদাপন্ন এলাকা কম গুরুত্ব পেয়েছে। জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে ২০১৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবছর প্রয়োজনের ০ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। তহবিল সময়ের অনিয়ম দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, অভিযোজনের সঙ্গে সম্পর্কহীন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের অর্থে সাফারি পার্ক, ইকো পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। নিম্নমানের কাজ সম্পাদন করা হয়েছে এবং অর্থ জালিয়াতি করা হয়েছে, এমনকি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬%) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিনে পৌঁছেছে—অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪ বছর মেয়াদের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর।
সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জলবায়ু অর্থায়ন এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বাজেট বরাদ্দ, চাহিদা, ভৌগোলিক বাস্তবতা ও পরিকল্পনা নীতির সঙ্গে সংগতিহীন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
গবেষণাটির সুপারিশে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন ২০১০ সংশোধন করতে হবে, তহবিলের তদারকি ও নিরীক্ষার জন্য পৃথক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশের ১০-১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লুটপাট হয়েছে। এ তহবিলের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে। জবাবদিহিতার ঘাটতি, সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণে এ দুর্নীতি হয়েছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।
এসএম/এমএমকে/জিকেএস

                        5 hours ago
                        3
                    








                        English (US)  ·