বাহাত্তরের ‘মুজিববাদী’ সংবিধান সরাতে না পারলে অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষের রক্ত ঝরতেই থাকবে—এমন অভিমত জানিয়ে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশে দল-মত নির্বিশেষে সব জাতিসত্তার মানুষ একসঙ্গে ফ্যাসিবাদকে দূর করেছে। অথচ এখন কিছু ভুঁইফোঁড় সংগঠন সেই জাতিগত একতা নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। জাতিগত সম্প্রীতিকে উপেক্ষা করে জাতিগত বিভাজনকে ব্যবহার করে দেশকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। এতে বিদেশি ষড়যন্ত্র আছে।
সংগঠনের নেতারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঘার মাথায় ১২টি সেলাই রাষ্ট্রের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে।
গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতিগত ও বাংলাদেশ প্রশ্নে বিভাজিত করার হীন উদ্দেশ্যে এনসিটিবি'র সামনে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব বলেন সংগঠনের নেতারা।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে আসা লোকজন এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর, তারা হলেন: আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান, সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক (খাগড়াছড়ি) ফুটন্ত চাকমা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঘা। এছাড়া আহতদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গত এক যুগ ধরে যেভাবে নির্যাতন করা হতো, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে তারই মহড়া দেয়া হয়েছে। বাঙালি বাঙালি স্লোগান দিয়ে, বাঙালি ছাড়া অন্য জাতিসত্ত্বার লোকদের অস্বীকার করার চেষ্টা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিচয় যাই হোক যারা হামলায় অংশগ্রহণ করেছে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। জাতিগত সম্প্রীতিকে উপেক্ষা করে জাতিগত বিভাজনকে ব্যবহার করে দেশকে বিভক্ত ষড়যন্ত্র চলছে। তারা চায় বিভাজন, আমরা থাকবো ঐক্যবদ্ধ। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধান সরাতে না পারলে অন্যান্য জাতিসত্ত্বার মানুষের রক্ত ঝরতেই থাকবে। মুজিববাদী সংবিধানে পাহাড়ের ভাই-বোনদের স্থান দেয়া হয়নি। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। বিদেশি কোনো চক্রান্তে পা না দেয়া যাবে না। যারা লাশের রাজনীতি করতে চায়, তারা এই রাজনীতি থেকে সরে আসুন। পাহাড় ও সমতলের সবাইকে রাজপথে থেকে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঘার মাথায় ১২টি সেলাই রাষ্ট্রের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখতে চাই না। ভিডিওতে দেখা গেলেও কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন সেই দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কারা হামলা চালিয়েছে, অথচ পুলিশ পাশে দাঁড়িয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থার কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। যারা এধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা ঘটিয়েছে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এই হামলার পেছনে বড় কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে, সেটি চিহ্নিত করে জড়িতদের তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসুদ বলেন, বাংলাদেশে দল মত নির্বিশেষে সব জাতিসত্ত্বার মানুষ একসঙ্গে ফ্যাসিবাদকে দূর করেছে। অথচ এখন কিছু ভূঁইফোঁড় সংগঠন সেই জাতিগত একতা নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যহত থাকবে।