জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন একইদিনে করার চিন্তা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে নির্বাচনটা আমাদের দেশে বেশ ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। গত সরকারের সময়ে ২০২১ থেকে ২০২৪ সালে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে (ইউপি, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ) তাতে ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। আর সময় লেগেছে ২২৫ দিন। লোক নিয়োগ দিতে হয়েছে ১৯ লাখ। এটা খুবই ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। একটা নির্বাচন দেশে অনেক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও সৃষ্টি করে। আমরা যদি আইন পরিবর্তন করে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন একই দিনে করতে পারি, তাতে খরচ লাগবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। আর সময় লাগবে মাত্র ৪০ দিন। আমরা বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করছি।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের হোটেল পেনিনসুলায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে এবং ইউএনডিপির সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার সংস্কারবিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, শিক্ষক ও সুধীজনেরা বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব তুলে ধরেন।
একজন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। অপর আরেকজন জনপ্রতিনিধি উপজেলা পরিষদে এমপিদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করার দাবি করেন। এ সময় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পরিষদে কাজ করার ক্ষমতা ও গাড়ির সুবিধা প্রদানের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া অন্যরা ‘না ভোট’ চালুসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
এসব বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম ছাড়াও বেশ কয়েকটি জায়গায় মতবিনিময় সভা করেছি৷ শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা সব জায়গায় বলা হচ্ছে। আমরা এটা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে যদি সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে তা করা যাবে না। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টা না থাকে, তাহলে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আনাটা কঠিন হবে। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করব।’
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ‘বাইরের দেশে যারা চাকরি করেন বা অন্য পেশায় আছেন, তাদের কাউন্সিলর বা মেম্বার হতে বাধা নেই। আমরা এ বিষয়টা নিয়েও ভাবছি।’
‘না ভোট’ চালু করার বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এটা নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বিষয়। তবে আমি যেহেতু সে কমিশনের সদস্য, তাই এ বিষয় নিয়ে বলতে পারি। ‘না ভোট’ নিয়ে বিশাল সংখ্যক মানুষের মতামত পেয়েছি। আমাদের কমিশন না ভোটের বিষয়টি চিন্তা করছে। আমাদের দেশে ইতিহাস আছে ১৫২-১৫৩ জন এমপি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ‘না ভোট’ থাকলে এ সুযোগটা চলে যাবে। মানুষ প্রার্থী অপছন্দ হলে ‘না ভোট’ দেওয়ার জন্য হলেও ভোট কেন্দ্রে যাবে।
সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদনটা দিয়ে দেওয়ার। তাহলে সরকারও বাস্তবায়ন করতে সময় পাবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।