জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালে ৬ থেরাপি মেশিনের সবগুলোই বিকল

2 hours ago 6

সারাদেশের ক্যানসার আক্রান্ত গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ)। হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট ছিল চারটি রেডিওথেরাপি মেশিন। সচল থাকা বাকি দুটিও গত মাস থেকে বন্ধ। এখন সবগুলো থেরাপি মেশিন অচল হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, গত ২২ দিন ধরে রেডিওথেরাপির ছয়টি মেশিনই বিকল। এতে প্রতিদিন প্রায় ২০০ জনের বেশি ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

সাধারণত রেডিওথেরাপির সিরিয়াল পেতেই দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। এখন এই দীর্ঘ অপেক্ষার পর যারা সিরিয়াল পেয়েছেন, তাদেরও ফিরে যেতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্যানসার হাসপাতালের ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিনের চারটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর (লিনাক) এবং দুটি কোবাল্ট মেশিন। এর মধ্যে লিনাক মেশিনের দুটি দুই বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। অন্য দুটি কোবাল্ট মেশিনও অকেজো হয়ে যায় এক বছর আগে। অন্য দুটি লিনাক মেশিন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২২০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হতো। সেবা দেওয়ার এই সংখ্যা ছিল মেশিনের কার্যক্ষমতার অতিরিক্ত।

আরও পড়ুন: জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালের ৬ রেডিওথেরাপি মেশিনের ৫টিই অকেজো

হাসপাতালের রেডিওথেরাপি মেশিন রুমের একজন কর্মচারী জানান, গত ২১ ডিসেম্বর থেরাপি সেশনের সময় একটি মেশিন ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পরের দিন অন্য আরেকটিতে সমস্যা দেখা দেয়। এতে এখন হাসপাতালে রেডিওথেরাপির সব পরিষেবা বন্ধ।

সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শন করে রেডিওথেরাপি বিভাগে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি নোটিশ টানানো। এর একটিতে লেখা, ‌মেশিন নষ্ট।

অন্যটিতে লেখা, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে Linac-3 ও Linac-4 মেশিনে রেডিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হইতেছে না। মেশিন মেরামত হয়ে গেলে আমরা কার্ডে দেওয়া নম্বরে ফোন করে জানিয়ে দেবো, ইনশাল্লাহ।

আরও পড়ুনঘুস না দেওয়ায় রেডিওথেরাপির জন্য ৬ মাস পরের সিরিয়াল পেলেন রোগী 

হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির হাসপাতালের ছয়টি মেশিন নষ্ট থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মেশিন ঠিক করার বিষয়টি কম্প্রিহেনসিভ মেডিকেল কন্ট্রাক্টের অধীন। তাদের আমরা জানিয়েছি। তারা জানিয়েছে, দ্রুত ঠিক করে দেবে। কিন্তু তা কখন করবে তার নির্ধারিত তারিখ দেয়নি। এছাড়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।

দীর্ঘদিন ধরেই এ হাসপাতালে নতুন করে রেডিওথেরাপি মেশিন কেনার কথা শোনা যাচ্ছে। নতুন মেশিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আশা করি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে একটি নতুন মেশিন কাজ শুরু করবে। মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমরা আরও একটি নতুন মেশিনে কাজ শুরু করবো। যদি আরও চারটি মেশিন চালু করা যায়, তাহলে আমরা প্রতিদিন অতিরিক্ত ৬০০ রোগীকে থেরাপি প্রদান করতে সক্ষম হবো।

ক্যানসার আক্রান্ত মরইয়মের সঙ্গে রেডিওথেরাপি রুমের সামনে বসে থাকতে দেখা যায় নাতি সাঈদকে। সাঈদ জাগো নিউজকে বলেন, আমার নানু গত এক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছে। আমরা গরিব। এখানে ছাড়া চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব না। অন্য হাসপাতালে অনেক টাকা লাগে। অনেক কষ্টে সিরিয়াল পেয়েছি। এখন শুনি মেশিন নষ্ট।

মৌলভীবাজার থেকে এসেছেন স্তন ক্যানসারের রোগী রাবেয়া বেগম। ৫৩ বছর বয়সী এই রোগী বলেন, এর আগে এ হাসপাতালে চারটি রেডিওথেরাপি নিয়েছি। নির্ধারিত তারিখে পঞ্চমবারের মতো এসেছি। কিন্তু মেশিন নষ্ট। এখানে এসেছি টাকা ধার করে।

হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালের মেশিন জটিলতায় সিরিয়াল পেতে কষ্ট হয়ে যায়। আমরা রোগীদের ক্রমাগত ফিরিয়ে দিতে দিতে ক্লান্ত। রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে না পারাটা একটি মেডিকেল টিমের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।

ক্যানসার নিয়ে গবেষণাকারী একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এছাড়াও প্রতিবছর আরও প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে।

এএএম/এমএইচআর

Read Entire Article