জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘ছাত্ররাজনীতির সংস্কার: প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাকসু’ শীর্ষক সংলাপে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই ছাত্র সংসদগুলো হতে হবে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দীর্ঘদিন টিকে থাকতে চায় তারাই ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে ভয় পায়।’
সোমবার (০৬ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, বাংলাদেশ ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি খায়রুল আহসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নুরুল হক নুর বলেন, সব সংস্কারের আগে রাজনীতি সংস্কার প্রয়োজন ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা বললেও দলগুলোর অভ্যন্তরে কতটুকু গণতান্ত্রিক অবস্থা তাও দেখতে হবে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদগুলো চালু করলে সামনের দিনে জাতীয় রাজনীতিতে তারা ভূমিকা পালন করতে পারবে। ছাত্রদের রাজনীতিতে ‘আই হেট পলিটিক্স’ প্রবণতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে৷ কেননা রাষ্ট্র আগামীদিনে চালাবে ছাত্ররা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘জুলাইয়ের আন্দোলনে কোন ছাত্র দলীয় লেজুড়বৃত্তির ভিত্তিতে আন্দোলন করে নাই। ছাত্র রাজনীতির সংশোধনের কথা বললে জাতীয় রাজনীতির সংশোধনের কথা বলতে হবে। যদি ছাত্র সংসদ চালু থাকতো তাহলে ফেসিস্ট হাসিনাকে ২০১৪ সালেই প্রতিহত করা যেত। গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য ছাত্র সংসদ হলো জাতীয় নির্বাচনের সেইফগার্ড স্বরূপ। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।’
ছাত্র শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ আলোচনায় কয়েকটি প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাবগুলো হলো- সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক সিন্ডিকেট, আধিপত্য বিস্তার প্রভৃতিতে যুক্ত ছিল। সে জায়গা থেকে ফিরে এসে ছাত্র রাজনীতিকে আদর্শ জায়গায় নিয়ে আসতে হলে সরকারিভাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিধিমালা প্রণয়ন করা ও নির্বাচনের জন্য নীতিমালা তৈরি করা; ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্তঃকোন্দল দূর করে সহাবস্থান নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়া; ছাত্রসংগঠনকে লেজুড় বৃত্তিমুক্ত করা ও সংগঠনের অফিসগুলো হবে জ্ঞানচর্চার জায়গা হিসেবে তৈরি করে প্রিয় অভিভাবকের ছবি টানানো বাদ দেওয়া; বিরোধী মত দমন করার সংস্কৃতি বন্ধ করা; শিক্ষার্থী খুন, শিক্ষক খুনের মত ছাত্র রাজনীতির সংঘাতময় বন্ধ করে অপরাজনীতি বন্ধ করা; ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হবে ছাত্র সংসদ কেন্দ্রীক।
জাকসু নির্বাচন বিষয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘জাকসু সফল করতে হবে টিম ওয়ার্কের মধ্য দিয়ে। এটা একক কোনো ব্যক্তির দ্বারা সম্ভব নয়। এজন্য দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার আলোচনা হওয়া উচিত। আমরা চাই, ডিবেটের বদলে ডায়ালগ চালু হোক। জাকসু নিয়ে সবাই মিলে আমার উপর যে আস্থা রেখেছেন তা যেন পূরণ করতে পারি সে জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।’
এদিকে আলোচক হিসেবে অংশ নিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান আসলে তিনি শিবিরের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন না জানিয়ে আলোচনায় অংশ না নিয়ে চলে যান।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জাবিসাসের সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিখ, ইয়াহিয়া জিসান প্রমুখ।