জানা গেল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি না দেওয়ার কারণ

3 hours ago 4

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস সম্পর্কে বছরের পর বছর নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে এসেছে ইসরায়েল। তারা দাবি করে আসছে, হামাস জিম্মিদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে, তাদের নির্যাতন চালায় এবং অমানবিক পরিবেশে আটকে রাখে। তবে সর্বশেষ জিম্মি মুক্তির সময় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র, যা ইসরায়েলের প্রচারণাকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) গাজা থেকে ছয় ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস। তবে সেই বন্দিরা যখন মুক্তি পেয়ে হামাস যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় এক ইসরায়েলি জিম্মি হামাস যোদ্ধার কপালে চুমু খেলেন, সম্প্রচারে সে চিত্রটি ইসরায়েলের শাসকগোষ্ঠীর জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে হামাস সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করা হয়েছিল ইসরায়েলের পক্ষ হতে, তা এ ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। খবর স্কাই নিউজ।

হামাসের প্রতি বন্দিদের ইতিবাচক মনোভাব 

স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি শর্ত অনুসারে নুসেইরাত অঞ্চলে জিম্মি মুক্তির সময় হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিরা উৎফুল্ল ছিলেন। এলিয়া কোহেন নামে এক বন্দি মুক্তির পর হামাস যোদ্ধাদের কপালে চুমু খেয়েছেন। এ ধরনের দৃশ্য হামাস নিয়ে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।

এর আগে ইসরায়েল প্রতিনিয়ত দাবি করে আসছিল যে, হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন যারা জিম্মিদের অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখে, তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। কিন্তু সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের উচ্ছ্বসিত মুখ, হামাস যোদ্ধাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দৃশ্য সেই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ইসরায়েলের প্রচারণায় ধাক্কা 

বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাসের বন্দিদের প্রতি আচরণ সম্পর্কে ইসরায়েল যে বিবরণ দিয়েছে, সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া বন্দিদের প্রতিক্রিয়া তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এই ঘটনাটি ইসরায়েলের জন্য এতটাই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে যে, তারা পরবর্তী ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, হামাস যখন ছয়জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয় তখন তার যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুসারে ৬০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ওফার কারাগার থেকে বাসে তোলা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে এবং মুক্তির কার্যক্রম স্থগিত করে।

নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া 

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এ ঘটনার পরপরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের অপমানজনক আয়োজন আর বরদাশত করা হবে না। যতক্ষণ না হামাস তাদের বন্দি মুক্তির কার্যক্রম নিরপেক্ষ রাখবে, ততক্ষণ ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে না।

তেল আবিবের সরকারি সূত্র বলছে, হামাসের বন্দিদের প্রতি ইতিবাচক আচরণ প্রকাশিত হওয়ায় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই আচরণ গাজার যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রতারণার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।

এদিকে, বন্দি বিনিময় চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তেল আবিবের রাজপথে হাজারো মানুষ ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছে।

এ ঘটনা প্রমাণ করেছে, হামাস সম্পর্কে ইসরায়েলের প্রচারণা যতটা সত্য বলে প্রচার করা হয়েছে, বাস্তবে তার চিত্র ভিন্ন হতে পারে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরায়েলি জনগণ আদৌ হামাস সম্পর্কে নতুন করে ভাববে কিনা।

Read Entire Article