জানুন, আপনিও পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি না

6 hours ago 2

সদ্য মা হয়েছেন স্বর্ণালী। পরিবারের সবাই ভীষণ খুশি। নতুন সদস্যকে ঘিরে পুরো বাড়ি যখন উৎসবমুখর, নতুন মা তখন একা একা কাঁদছেন! ভুগছেন বিষণ্নতায়। মনে হতে পারে, মেয়ে হয়েছে বলে তিনি খুশি নন। ঘটনা হতে পারে ভিন্ন। হয়তো তিনি আক্রান্ত হয়েছেন পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা প্রসবোত্তর বিষণ্নতায়।

স্বর্ণালীর মতো অনেক নারীর সন্তান প্রসবের পর মানসিক অবস্থায় দ্রুত পরিবর্তন আসে। তারই একটি ধরণ হচ্ছে বিষণ্নতা। প্রতি ১০ জন মায়ের মধ্যে অন্তত ২-৩ জন এই প্রসবোত্তর বিষণ্নতায় ভোগেন। কেবল নারী নয়, অনেক সময় পুরুষ বা সদ্যজাত শিশুর বাবারও তেমনটি হতে পারে। দেখা দিতে পারে চরম বিষণ্ণতা, কমে যেতে পারে বল, বেড়ে যেতে পারে উদ্বেগ। কেউ কেউ কান্নাকাটি করেন, বিরক্ত হন, ঘুম ও খাওয়া-দাওয়ার সময় ও রুচি এলোমেলো হয়ে যায়।

জানুন, আপনিও পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি না

আক্রান্ত হলে কীভাবে বুঝবেন

অতিরিক্ত বিষণ্নতা অনুভূত হয়। থেকে থেকে কান্না আসে। নিজেকে ভীষণ একা লাগে। ঠিকমতো ঘুম হয় না। কারও কারও সদ্যজাত শিশুর প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। অনেক সময় এসব সমস্যা শিশুর জন্মের ৯-১০ মাস পরেও শুরু হতে পারে।

আপনি কি পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন?

এডিনবোরা পোস্টনাটাল ডিপ্রেশন পরীক্ষার মাধ্যমে এটি সহজেই জেনে নেওয়া যায়। এতে রোগীর ১০টি মানসিক অবস্থার কথা জানতে চাওয়া হয়।

জানুন, আপনিও পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি না

গত ৭ দিন আপনি কেমন ছিলেন?

১. আমি হাসতে পেরেছি এবং যা কিছু ঘটেছে সেসব উপভোগ করেছি।
২. আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলাম।
৩. আমি অকারণে নিজেকে দোষী ভেবেছি বা আত্মগ্লানিতে ভুগেছি।
৪. আমি উদ্বিগ্ন বা উৎকণ্ঠিত বোধ করেছি।
৫. আমি অকারণে ভয় পেয়েছি বা আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম।
৬. দৈনন্দিন কাজ সামলাতে কাহিল হয়ে পড়েছিলাম।
৭. আমি অনেক কেঁদেছি।
৮. এতটাই হতাশ লাগছিল যে, ঘুমাতে পারিনি।
৯. নিজেকে আঘাত করার কথা ভেবেছি।
১০. আনন্দের কাজগুলো করতে ইচ্ছে করছিল না।

স্কোরিং: প্রতিটি প্রশ্নে উত্তর দেওয়া হয় ০ থেকে ৩ পয়েন্টে। মোট পয়েন্ট ৩০।

সাধারণত এই স্কোরিং ০-৯ হলে নতুন মা স্বাভাবিক আছেন বলে ধরে নেওয়া যায়। ১০-১২ হলে হালকা বিষণ্নতায় ভুগছেন। আর প্রাপ্ত স্কোর ১৩ বা তার বেশি হলে মা উল্লেখযোগ্য বিষণ্নতায় ভুগছেন বলে মনে করা হয়। এসময় তার চিকিৎসা এবং নিয়মিত ফলো-আপ দরকার।

জানুন, আপনিও পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি না

যেভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে

>> নেতিবাচক চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। এখানে পরিবারের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
>> পারিবারিক সম্পর্ক ও সামাজিক যোগাযোগে সক্রিয় হলে স্বস্তি পাওয়া যায়।
>> চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
>> সপ্তাহে ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করলে ঝুঁকি প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
>> পরিবার, বন্ধু, সাপোর্ট গ্রুপ নতুন মায়ের মানসিক চাপ কমাতে পারে।
>> নিয়মিত স্ক্রিনিং করলে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের আগাম কাউন্সেলিং করা যেতে পারে।

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন সম্পর্কে অনেকে জানেন না, অনেকে একে কিছুটা অবহেলাও করেন। এ থেকে বড় ধরণের মনোরোগ সৃষ্টি হতে পারে। তাই চিকিৎসা, পরিবার ও সমাজের সহায়তায় নতুন মা আবারও সুস্থ, আনন্দময় ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।

সূত্র: টাইম, গার্ডিয়ান, ন্যাচার ও অন্যান্য

আরএমডি/এএমপি/এমএস

Read Entire Article