মহান আল্লাহ তাঁর অতুলনীয় সৃষ্টিকুশলতায় মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। আর সেই সৃষ্টির অন্যতম কুশলতা হলে পৃথিবী। কোরআনের বর্ণনায়ও স্থান পেয়েছে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার ও বৈচিত্র্য। পৃথিবীকে যে উপাদানগুলো দিয়ে সাজিয়েছেন তার মধ্যে একটি হল নদ-নদী। তবে পৃথিবীকে শোভামণ্ডিত করা এমনও কিছু নদী রয়েছে যার উৎপত্তি জান্নাতে।
সহিহ মুসলিম শরিফের হাদিসে চারটি নদীকে জান্নাতের সাঙ্গে সম্পৃক্ত বলে বর্ণণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, পৃথিবীতে এমন চারটি নদী প্রবাহিত হয়েছে, যেগুলো জান্নাতের নদীগুলির অন্তর্ভুক্ত। এ নদীগুলো শুধু ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তাদের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ইসলামের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
ফোরাত নদী
ফোরাত নদী বা ইউফ্রেটিয়াস রিভার, ২,৮০০ কিলোমিটার দীর্ষ এই নদীটি তুর্কী, সিরিয়া ও ইরাকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলে গিয়েছেন যে, কেয়ামতের আগে শুকিয়ে যাবে এই ফোরাত নদী। ইতিমধ্যে এই নদী শুকানো শুরু করেছে। আবু হোরায়রা (র.) থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংগঠিত হবে না, যতক্ষণ না ফোরাত নদী শুঁকিয়া যায় এবং তার মাঝ থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচন হয়। মানুষ এই স্বর্ণের জন্য যুদ্ধ করবে এবং প্রতি ১০০ জনের মাঝে ৯৯ জনই মারা যাবে এবং তারা প্রত্যেকেই ভাববে হয়ত আমিই সেই বেঁচে যাওয়া ১ জন হবো।
মিশরের নীল নদ
নীল নদের উৎস ছিল এক মহারহস্য। নীল নদটি সহিহ মুসলিমে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নীল ও ফোরাত জান্নাতের নদীগুলির মধ্যে রয়েছে। নীল নদ ইসলামের ঐতিহ্যের সাঙ্গে সবচেয়ে বিখ্যাত সংযোগ হল নবী মুসা (আ.) এর গল্প। তার মা ফেরাউনের আদেশ থেকে তাকে রক্ষা করার আশায় একটি ঝুড়িতে রেখে নীলতে নদীতে ভাসিয়ে দেন, যা অবশেষে ফেরাউনের পরিবারের কাছে পৌঁছে যায়। মুসার নবী হওয়ার যাত্রা শুরু হয় সেখান থেকেই।
মহানবী (সা.) মিরাজে গিয়ে জান্নাতের চারটি নদী দেখেছেন। দুটি বাহ্যিক ও দুটি আভ্যন্তরীণ। বাহ্যিক নদী দুটি দুনিয়ায় প্রবহমান, নীল ও ফুরাত।
তুরস্কের জয়হান নদী
সহিহ মুসলিমে জয়হান নদীকে জান্নাতের নদীগুলির মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ পৃথিবীতে আমরা যে সব উপহার উপভোগ করি তা জান্নাতের অফুরন্ত দানের একটি ক্ষুদ্র ঝলক। এ নদী পূর্ব তারাস পর্বতমালার নুরহাক পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। এটি প্রাচীনকাল থেকে একটি প্রাকৃতিক সীমানা ও বিভিন্ন সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে পরিচিত ছিল।
তুরস্কের সিহান নদী
যেটি সেরাস নামেও পরিচিত। সিলিসিয়া অঞ্চলের দীর্ঘতম নদী এটি। যা প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে মিশেছে। প্রাচীন লেখকরা সিহান নদী সম্পর্কে বিশদভাবে লিখেছেন, এটি সিলিসিয়া অঞ্চলের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ নদীটি কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে গম, ভুট্টা, বার্লি, তুলা, ফল এবং সবজি চাষ করা হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতির একটি বড় অংশ।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসুলল্লাহ (সা.) বলেছেন, সাইহান ও জাইহান, ফুরাত এবং নীল প্রত্যেক নদীই জান্নাতের নদ-নদীসমূহের অন্যতম।
জান্নাতের নদীমালার মধ্যে একটির নাম কাউসার; যা শেষ নবী (সা.)-কে হওজরূপে দান করা হয়েছে। যেখান হতে মহানবী (সা.) তার উম্মতকে কিয়ামতে পানি পান করাবেন। সুর্ববৃহৎ হওজ ও কাউসার নহর থাকবে জান্নাতী শরাবে পরিপূর্ণ। যে পবিত্র শরাব বা পানীয় দুধের চেয়েও সাদা, বরফের থেকেও শীতল, মধুর চেয়েও মিষ্ট এবং মিসকের চেয়েও সুগন্ধময়। হাদিসে বলা হয়েছে, যে একবার সে পানি পান করবে তাকে আর কোনদিন পিপাসা স্পর্শ করবে না।