জাফর ইকবালকে কটূক্তি করা কে এই আসিফ নজরুল?

1 month ago 11

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের স্লোগান ঘিরে বরেণ্য লেখক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি লেখা তোপের মুখে পড়েছে। ‘অসমাপ্ত’ সেই লেখাটি সামনে আসার পর তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। লেখার একটি অংশে তিনি প্রশ্ন রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী সত্যিই নিজেকে রাজাকার হিসেবে দাবি করতে পারে কি না, শুধুমাত্র একটা সরকারি চাকরির জন্য? চাকরি অনেক দূরের ব্যাপার, তাদের যে এই দেশের মাটিতেই থাকার অধিকার নেই- বলে মনে করেন তিনি। তার এ বক্তব্যের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক- তার নাম আসিফ নজরুল।

১৭ জুলাই আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জাফর ইকবাল স্যার সম্পর্কে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো কথা বলতে চাই না। আমার ধারণা উনার প্রচণ্ড বুদ্ধিসুদ্ধির অভাব আছে। হয় উনার মধ্যে প্রচণ্ড অপরাধবোধ কাজ করে যে উনিশ একাত্তর সালে উনি কী করেছেন, এই অপরাধবোধ থাকার জন্য উনি অতিরিক্ত মুক্তিযোদ্ধা সাজার চেষ্টা করেন।

আসিফ আরও বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালের কাছে তার একটাই প্রশ্ন- আপনি কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বোঝেন? আপনি কি পড়াশোনা করেছেন? আপনি কি বাহাত্তর সালে গণপরিষদ বিতর্ক পড়েছেন? জাফর ইকবালকে বুদ্ধিপ্রতিবদ্ধী উল্লেখ করে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, তার তো কোনো পড়াশোই নাই, সে তো শিক্ষাবিদ দূরের কথা উনি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধক একজন মানুষ।

দেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এদেশের বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থার হাজারো ত্রুটি, ভুল শিক্ষানীতি, রাজনৈতিক কৌশলের বলি ছাত্রসমাজ বড় বিভ্রান্ত আজ। তাদের আলোর পথ দেখাতে হবে, মিথ্যা বাহবা না দিয়ে আর ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবেন না কেউ। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হোন সবাই

প্রফেসর জাফর ইকবালের ছাত্রদের প্রশ্ন, ওই আসিফ নজরুল দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাইন্টিস্ট ড. জাফর ইকবালকে কতটা চেনেন? আসিফ জানেনটা কি? জাফর ইকবালের পড়াশোনা, পান্ডিত্য, ব্যক্তিত্ব এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদান কতটা বোঝেন আর্টস ফ্যাকালটির এই আসিফ? জাফর ইকবালের পড়াশোনা নাই- এ কথা বলার সাহস কোথায় পেলেন আসিফ নজরুল।

জাফর ইকবালের ছাত্ররা বলেন, নিজেকে আইনের ছাত্র ও শিক্ষক দাবি করা আসিফ নজরুল কীসের ভিত্তিতে, কোন আইনে জাফর স্যারকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বললেন? তার মনে হলো আর এমন কথা চামড়ার ঠোঁট দিয়ে বলে দেবেন, তা কি করে হয়? এ ধরনের কথা বলার স্পর্ধা কোথা থেকে এলো তার? ওই ছাত্ররা অবশ্য পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট বা তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এখনই উক্ত আসিফকে পাগল অথবা মানসিক বিকোলাঙ্গ অথবা তার মস্তিস্কে পচন অথবা অপ্রকৃতিস্থ বলতে অস্বীকার করেছেন।

আসিফ প্রশ্ন করেছেন, আপনি কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বোঝেন? জাফর ইকবালের ছাত্রদের প্রশ্ন, প্রফেসর জাফর ইকবাল আহত হলে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আঘাতপ্রাপ্ত হয় তা কি আসিফ নজরুল গং অনুধাবন করে?

বাহাত্তর সালে গণপরিষদ বিতর্ক প্রফেসর ইকবাল পড়েছেন কি না তা আসিফকে বলতে হবে কেন? দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ জাফর ইকবালকে ‘সে’ করে সম্বোধন করার ধৃষ্টতা আসিফ নজরুলকে কে দিয়েছে? নিজে অনেক পড়াশোনা করেছেন দাবি করা আসিফ কি জানেন না- প্রফেসর জাফর ইকবালকে অ্যাড্রেস করার সর্বনাম কি হবে? না জানলে অত বড় মাপের মানুষকে নিয়ে তার কথা বলতে হবে কেন? কেন এবং কেন?

জাফর ইকবালের ছাত্রদের আরও প্রশ্ন, আসিফ নজরুলের লেখাপড়া কি, সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। পিএইচডি কোথা থেকে করেছেন, থিসিসে চুরি আছে কি না প্রমাণ দিতে হবে। গত আন্দোলনে তিনি কতটা উসকানি দিয়েছেন তা তদন্ত করা দরকার। তিনি জনতাকে আন্দোলনের নামে সংঘাতে নামতে বলেছেন কি না, তিনি এভাবে বলতে পারেন কি না খতিয়ে দেখা জরুরি। আসিফ নজরুলের ব্যাকগ্রাউন্ড কি এবং বর্তমানে তার কাদের সঙ্গে কানেকশন, তিনি আসলে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার গুপ্তচর কি না অথবা কোন গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছেন সব প্রকাশ্যে জানতে চান জাফর ইকবালের ছাত্ররা। তিনি কর্মক্ষেত্র কত ঘণ্টা ডিউটি করেন আর কত সময় গাল-গল্প ও পলিটিক্স করে বেড়ান তা ইউজিসির খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের লেখাটি সাদাসিধে কথা নামে তার নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘কোটা’ শিরোনামে লেখাটা শুরু করলেও তা শেষ করেননি জাফর ইকবাল। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, লেখার মাঝেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ হিসেবে দাবি করেছে বলে জানতে পারেন। তখন তিনি লেখাটি সেখানেই শেষ করে দেন।

শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে স্লোগান দিয়েছেন জানার পর জাফর ইকবালের লেখার গতিপথও ভিন্ন দিকে গেছে। সেখান থেকে নিচের অংশে তিনি লিখেছেন, ‘ঘুমানোর আগে খবরটি দেখে মাথার মাঝে একটা বিস্ফোরণ হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে দাবি করেছে। খবরটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না। এটি কী সত্যিই সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রী কি সত্যিই নিজেকে রাজাকার হিসেবে দাবি করতে পারে? শুধু একটা সরকারি চাকরির জন্য? কোন দেশের সরকার, বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান?’

তিনি আরও লেখেন, ‘এই ছাত্র-ছাত্রীরা কী জানে, চাকরি অনেক দূরের ব্যাপার, তাদের যে এই দেশের মাটিতেই থাকার অধিকার নেই।’

একটু জায়গা রেখে তার নিচের প্যারায় জাফর ইকবাল লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনো দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইবো না। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন। সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’

১৫ জুলাই প্রফেসর জাফর ইকবালের লেখাটি প্রকাশের পরদিন তার ছাত্র সাংবাদিক মুস্তফা মনওয়ার সুজন নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন- আমার প্রিয় স্যারের প্রতি আবারও হাজার সালাম। দু'দশক আগে স্যারকে যেমন দেখেছি, শুনেছি... স্যার একই আছেন। প্রাণের মানুষটির মঙ্গল প্রার্থনা। জাফর স্যারকে বোঝার মতো মানুষের সংখ্যা নগণ্য।

'জাফর ইকবাল সমাজের মুকুট তার অসম্মান আত্মঘাতী' এমন শিরোনামে এক কলামে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নারী বিষয়ক সম্পাদক সুমি খান বলেছেন, একজন বিদ্বান ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের মাথার মুকুট- তাকে কোনোরকম অসম্মান করার মূর্খতা যেন আমরা না করি। তাতে নিজেদের অসম্মান। প্রজন্মান্তরে জবাব দিতে হবে। কী হবে স্যারের বই না বেচলে? ফুটপাতের চটি বই আর বিকৃত ধর্মের বেসাতিতে পচে যাবে প্রজন্মান্তরের মগজ। সৃষ্টিশীল সমাজ, বিকশিত জীবনে সমৃদ্ধ দেশ বা পরিবারের বাস্তবতা হারিয়ে যাবে বহুদূর।

পচা মগজের লোকেরা শিক্ষক হলেও কোনোভাবেই দায়িত্বশীল অভিভাবক নন। তারা কখনো সন্তানের মঙ্গল চান না, সেটা বোঝার দায়ও বোধ করেন না। এ কারণে আসিফ নজরুল ও তার সহযোগীদের মিথ্যাচার তথ্য বিকৃতি চালবাজি আর হঠকারিতায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিরীহ তরুণদের প্রাণহানি ঠেকাতে শুভশক্তি এক হোন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিক সুমি খান আরও বলেন, জাফর ইকবাল স্যারের কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে হবে প্রজন্মকে। কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্রোতে ভেসে, গলা কাঁপিয়ে স্লোগান দিয়ে ঘাতকের হাতিয়ার হতে নয়। সে কথাই অভিমান করে স্যার বলতে চেয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে রাজাকার দাবি করে কোন ছাত্র মিছিল করবে- সেটা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়।

সাংবাদিক সুমি খানকে ধন্যবাদ দিয়ে তার সাথে একমত হয়ে জাফর ইকবালের ছাত্ররাও বলেন, দেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এদেশের বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থার হাজারো ত্রুটি, ভুল শিক্ষানীতি, রাজনৈতিক কৌশলের বলি ছাত্রসমাজ বড় বিভ্রান্ত আজ। তাদের আলোর পথ দেখাতে হবে, মিথ্যা বাহবা না দিয়ে আর ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবেন না কেউ। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হোন সবাই।

জাফর স্যারের নেতৃত্বে বিজ্ঞানমনষ্ক প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। ভাবতে হবে সব স্তরের চিন্তাশীল অভিভাবকদের। অন্ধকারের অতল থেকে সাগর সেচা মুক্তার মতো সন্তানদের বুকে আগলে বাঁচাতে হবে। মুক্তবুদ্ধি বিজ্ঞানচিন্তার সাথে পরিচয় করে দিন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। অন্ধকার থেকে বের করে মুক্ত বিহঙ্গের মতো জীবনে আনতে হবে ছাত্র সমাজকে। সন্তানদের আলোর দিশারি জাফর স্যারকে নানাভাবে হেনস্তা করে হুমকি দেওয়ার নেপথ্যে কারা?

আসিফ নজরুলসহ তাদের সহচর হবেন না দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী কেউ? নিজেদের নিচে নামিয়ে যতই বাহবা পান, জাফর ইকবাল স্যারের অপমান ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, মনে রাখবেন। দেশ, রাষ্ট্রের চরিত্র হনন করছে কারা এরা? সেই চিহ্নিত একাত্তরের ঘাতকরা যত কলকাঠি নাড়ুক, তাদের মুখোশের আড়ালে রক্তপিপাসু চেহারা চিনে রাখবেন। অনলাইন ও অফলাইনে অন্ধকার শক্তি প্রাণঘাতী। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের প্রশ্নে যেন আপনারা আপসহীন থাকেন।

নিভৃতচারী মহীরুহ জাফর ইকবাল স্যারের তারুণ্যের কথা ভাবেন তো একবার! মাতৃভূমির দায়বদ্ধতা থেকে প্রবাসের বিলাসী নিরাপদ জীবন ছেড়ে দেশের নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনষ্ক প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে দেশে ফেরেন। বারবার আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। বিশ্বের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি, শিক্ষকতার লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক শিক্ষক দেশ ও সমাজের মাথার মুকুট। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন করেছেন তার যাপিত জীবনে, সাহিত্যে। তার প্রতি ঋণ প্রজন্ম যেন ভুলে না যায়। তাদের বুঝতে হবে, তারা কখনো ঘাতকের কাছে নিরাপদ নয়।

প্রফেসর জাফর ইকবালকে কটূক্তি করা আসিফ নজরুলকে উল্লেখিত প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে হবে। আর প্রশাসনকে খুঁজে বের করতে হবে কে এই আসিফ নজরুল?

লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা- মোকদ্দুছ আলী, মো. জাকির হোসেন, মুস্তফা মনওয়ার সুজন ও আলী আশরাফ কবির। (মুহম্মদ জাফর ইকবালের ছাত্র)।

এইচআর/এএসএম

Read Entire Article