সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনটি জামায়াতে ইসলামীর ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে জয় পেতে মরিয়া বিএনপি। নির্বাচন ঘিরে আসনটিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন দুই দলের নেতাকর্মীরা। দুই দলেরই প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উঠান বৈঠক, পথসভা ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ ও কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন উভয় দলের প্রার্থীরা। নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের প্রার্থীই ভোটারদের মন জয়ে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছেন। দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি।
দীর্ঘদিন পর ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে ভেবে শ্যামনগরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও বইছে নির্বাচনি আমেজ। এ আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীর তৎপরতা চোখে পড়েছে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে—এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয়রা।
আসনটিতে প্রায় আট মাস আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম এই আসনের প্রার্থী। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে শ্যামনগর আসন (তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থীর কাছে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন তিনি।
অন্যদিকে, গত ৩ নভেম্বর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. এম মনিরুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ছাত্রজীবনে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও গত এক দশকে স্থানীয় বিএনপিকে পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সাম্প্রতিক আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার শ্যামনগর আসনে নবীন বনাম প্রবীণ প্রার্থীর লড়াই হতে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ রাজনীতিক গাজী নজরুল ইসলাম এবং তরুণ বিএনপি নেতা ড. মনিরুজ্জামানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে আগ্রহ। অনেকে বলছেন, একসময় ‘জামায়াতের দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত এ আসনটি এবার বিএনপির দখলে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সাংগঠনিক দিক থেকে বিএনপির অগ্রগতি এবং সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগঘেঁষা ভোটের একটি অংশ যদি বিএনপির পক্ষে যায়, তাহলে তাদের জয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা। তবে দলীয় অন্তঃদ্বন্দ্ব নিরসন না হলে জামায়াত সেই সুযোগ নিতে পারে।
আরও পড়ুন:
দলীয় মনোনয়ন ইস্যুতে টালমাটাল বিএনপি, নির্ভার জামায়াত
বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও মাঠে ইসলামী আন্দোলন-এনসিপি
বিএনপিতে দোলাচল, এনসিপি থেকে আলোচনায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
নকিপুর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হোসেন আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাজী নজরুল ইসলামকে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চেনে। তিনি দুইবার এমপি ছিলেন। কিন্তু মনিরুজ্জামান শিক্ষিত, ভদ্র এবং মার্জিত। তরুণরা তার প্রতি আগ্রহী।’
নওয়াবেকীর আইনজীবী রায়হান ও ব্যবসায়ী আল-আমিনের মতে, ১৯৯১ সালের পর থেকে জামায়াতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়েছিল। তবে মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে এখন বিএনপি আবার শক্ত অবস্থানে ফিরেছে।
তারা মনে করেন, সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ ও তার অনুসারীরা যদি মনিরুজ্জামানকে মেনে নিতে না পারেন, তবে আসনটি উদ্ধার করতে সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন
নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না
আসন ফাঁকা রাখায় দুশ্চিন্তায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা
অন্যদিকে, পানখালী গ্রামের প্রমথ মহালদার, জেলেখালীর হরিদাস ও বাদঘাটার আবু সায়াদসহ ভোটারদের ভাষ্য, প্রায় ৭৩ হাজার সংখ্যালঘু ভোট এবং আওয়ামী লীগের একটি অংশের ভোট জামায়াতের বিপক্ষে যেতে পারে। তাছাড়া পরপর তিনবার ভোট দিতে না পারা তরুণ ভোটারদের বড় অংশ এবার বিএনপি প্রার্থীর দিকে ঝুঁকছে। তবে অভ্যন্তরীণ ঐক্য না হলে সম্ভাবনাময় অবস্থান থেকেও বিএনপির পরাজয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াত অনেক আগে থেকেই মাঠে অবস্থান তৈরি করেছে। জনগণও জামায়াতের প্রতি আস্থা রাখছে। প্রতিপক্ষের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় আমরা মাথা ঘামাই না।’
বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক সোলায়মান কবীর বলেন, ‘নতুন প্রার্থী ঘোষণায় কিছু ক্ষোভ থাকলেও তফসিল ঘোষণার পর সবাই একত্রিত হবেন। সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগঘেঁষা ভোট এবার জামায়াতের বিরুদ্ধে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
মনোনয়নবঞ্চিত অংশের বাদঘাটা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম বলেন, ‘দল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তাই এখনো সবাই মুভ করছে না। তবে ঐক্য না হলে জেতা কঠিন হবে।’
শ্যামনগর আসনটি একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার দুই লাখ ৯৮ হাজার ৬৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫০ হাজার ৫০৭ জন, নারী ভোটার এক লাখ ৪৮ হাজার ১৩৩ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন চারজন।
এসআর/এমএমএআর/জেআইএম

3 hours ago
5








English (US) ·