জামায়াতে ইসলামীর প্রতিটি কর্মীকে শহীদ হতে হলেও ছাত্র-জনতার অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজন ব্যতীত সাধারণ জনগণকে কোনো নিয়োগ দেয়নি। আওয়ামী লীগ ভেবেছে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিলে তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী থাকবে। কিন্তু এ দেশের জনগণ সেটা মেনে নেয়নি। জনগণ তাদের বিদায় করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম দায়িত্ব আওয়ামী দূষিত লোকদের প্রশাসন থেকে বিতাড়িত করা।
শুক্রবার (০৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানা জামায়াতে ইসলামী মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন; ছাত্র-জনতার অঙ্গীকার। কিন্তু কেউ কেউ সংস্কারের আগেই নির্বাচনের জন্য লাফালাফি করছে। যত লাফালাফি করা হোক না কেন, সংস্কারের আগে নির্বাচন দেওয়া যাবে না। ছাত্র-জনতা ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য জীবন ও রক্ত দেয়নি। ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করতেই জীবন ও রক্ত দিয়েছে। তাই সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন দিলে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণ হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যেই বৈষম্য ছিল সেই বৈষম্য থেকে মুক্ত হতে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরেও স্বাধীন দেশ বৈষম্যমুক্ত ছিল না। স্বাধীনতার মাত্র দু’বছরের মাথায় পিতা কায়েম করেছে বাকশাল আর সেই ধারায় মেয়ে কায়েম করেছে ফ্যাসিবাদ। মানুষের ভুল হয় বলেই মানুষের তৈরি আইনেও ভুল রয়েছে। যার কারণে মানুষের তৈরি আইনে শান্তি আসে না এবং আসবে না। শান্তির জন্য প্রয়োজন আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা।
শেখ মুজিব সোনার দেশ চেয়েছে কিন্তু সোনার মানুষ বানায়নি। চোর-ডাকাতের দল বলে নিজেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্বোধন করেছে। সেই চোর-ডাকাতের দল দিয়ে সোনার দেশ গঠন সম্ভব হয়নি, হবেও না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগে সোনার মানুষ তৈরির কাজ করেছে। এবার সোনার দেশ গঠনে কাজ করতে চায়। জনগণ যদি সেই সুযোগ দেয় তবে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে সোনার বাংলা গঠন করা হবে। যেখানে কোনো বৈষম্য, বিভেদ, হিংসা, জুলুম, নির্যাতন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকবে না। তাই জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আাগামী নির্বাচনের জন্য জনমত গঠন করতে তিনি আহ্বান জানান।’
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ও শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমির মুহাম্মদ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ও মতিঝিল-শাহজাহানপুর জোন পরিচালক সৈয়দ সিরাজুল হক। আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী দপ্তর সম্পাদক এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সমন্বয়ক আবদুস সাত্তার সুমন, শাহজাহানপুর পশ্চিম থানা আমির মো. সরোয়ার হোসেন, শহীদ আল্লামা দেলোয়ার হোসাইস সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী প্রমুখ।
সম্মেলনে ড. অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উচিত দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রকৃত সত্য সংবাদ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। যে গণমাধ্যম প্রচার করছে হিন্দু ভেবে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়েছে, সেই গণমাধ্যম বাংলাদেশে বসে কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে সেটি পরিষ্কার হওয়া দরকার। ওই গণমাধ্যমসহ তিনি দেশের সকল গণমাধ্যমকে দেশ ও জনগণের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নয়তো জনগণ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের মতো ওই সকল গণমাধ্যমকে বর্জন ও বয়কট করবে, যারা দেশের স্বার্থে কাজ করবে না।’
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ডিসেম্বর মাস ছিল জুলুম ও নির্যাতনের মাস। এক ব্যক্তির রেকর্ড করা বক্তব্য শুনতে শুনতে মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে। ওই ব্যক্তির কথা ধরেই বলব, তুমি রিয়েলিটি মেনে নাও, যে দেশে বসে বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে সেই দেশকেও বলব রিয়েলিটি মেনে নিতে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন দিয়ে ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। এই আগুনে বাংলাদেশের পতাকা পুড়ে ভারত নিজেদের কপাল নিজেরাই পুড়েছে। বাংলাদেশের হাইকমিশন কার্যালয় ভেঙে তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেছে। বাংলাদেশকে অস্থির করে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না। ৫ আগস্টের আগের বাংলাদেশ আর ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশ এক নয়। এখন সময় হচ্ছে জাতি হিসেবে নিজেদের জাতিসত্তার পরিচয় তুলে ধরা, নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়া। যারা বাংলাদেশের দিকে চোখ রাঙাবে, বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণ একত্রে তাদের দিকে চোখ রাঙাবে। তারা চেয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করতে কিন্তু তাদের চক্রান্তের কারণে আমাদের ঐক্য আরও বেশি মজবুত হয়েছে।
ড. মাসুদ আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী যেই কর্মসূচিতে গঠিত হয়েছে এবং যেই কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে ২০২৪ সালে সেই একই কর্মসূচিতে এ দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে সকলকে এককাতারে শামিল হতে তিনি আহ্বান জানান।