বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, জিয়া পরিবারই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে আমরা ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জন করেছি। জিয়াউর রহমানের ঘোষণায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় লাকেম্বা লাইব্রেরিতে অস্ট্রেলিয়া বিএনপির আয়োজনে ‘বাংলাদেশের ৫৩তম মহান বিজয় দিবস ও সার্বভৌমত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হায়দার আলীর সঞ্চালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে কোরআন তেলওয়াত করা হয়। তারপর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদ, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা, জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শারীরিক সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন অস্ট্রেলিয়া বিএনপির ট্রেজারার মঞ্জুরুল হক আলমগীর। সূচনায় বিএনপি নেত্রী আজীজুন নাহার মালার টিম বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দেশে যতবার সংকটে পড়েছে তখনই জিয়া পরিবার দেশের নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে সিভিল ও মিলিটারি উভয় সেক্টরে দেশ যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল তখনো ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শহীদ জিয়া দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৩ বারের শাসনামলে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তিনি ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং আপোষহীন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তজার্তিকবিষয়ক সম্পাদক মো. রাশেদুল হক বলেন, ১৯৯০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। একইভাবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুনর্গঠন করার জন্য তিনি দেশের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
স্বাধীনতা এবং স্বার্বভৌমত্ব বিষয়ক একাডেমিক আলোচলায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের লেকচারার এবং অষ্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত পিএইচডি গবেষক আবু সাঈদ এবং লীমা আক্তার অহনা। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কেনো কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারতকে কেনো শত্রু হিসেবে বিবেচনা করতে হবে তার তাৎপর্য তুলে ধরেন আবু সাঈদ। বহিশত্রুর হাত থেকে কীভাবে বাংলাদেশকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে তিনি ৩টি বিষয় প্রস্তাবনা করেন। তা হলো শত্রুর বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সবাই মিলে সেই সিদ্ধান্তকে ডিফাইন করা ও বাস্তবায়নে কাজ করা।
লীমা আক্তার অহনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের উপরে কারো অবস্থান হতে পারে না। বাংলাদেশের প্রথম বাকশাল শেখ মুজিব দেশের সার্বভৌমত্বের চেয়েও নিজেকে বড় করে তোলার জন্য নানবিধ অপকৌশল অবলম্বন করেন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নীতির প্রণয়নের মাধমে শেখ মুজিব সৃষ্টিলগ্নেই দেশের পররাষ্ট্রনীতি ধংষ করেন। ফ্যাসিবাদী হাসিনা শেখ মুজিবকে দেশের চেয়েও বড় করে তোলার উন্মাদ খেলায় মেতে ওঠেন। হাসিনা জোর করে শেখ মুজিবকে অতিরিক্ত সন্মানিত করতে গিয়ে দেশের মানুষের ঘৃণার পাত্র বানিয়ে ফেলেছে।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ এফ এম তাওহীদ ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সাহসী পদক্ষেপের বিষয়ে বাস্তবিক উদাহরণ তুলে ধরেন।
আরও বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক অমি ফেরদৌস, অষ্ট্রেলিয়া বিএনপির সহসভাপতি মোবারক হোসেন, ভিক্টোরিয়া বিএনপির প্রতিনিধি ড. শাহাবুদ্দীন আহমেদ, অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সহসভাপতি এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিএনপির প্রতিনিধি কামাল হোসেন, তাসমানিয়া বিএনপির প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান, কুইন্সল্যান্ড বিএনপির প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন, অস্ট্রেলিয়া বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আবিদা সুলতানা, অস্ট্রেলিয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জাহিদুর রহমান, অস্ট্রেলিয়া যুবদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।