জীবনে নেতিবাচক কোনো কাজে জড়াইনি : কনকচাঁপা

12 hours ago 2

নন্দিত কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। প্রায় চার দশকের সংগীত জীবনে বহু শ্রোতাপ্রিয় গান গেয়েছেন। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনেও সরব। আজ (১১ সেপ্টেম্বর) শিল্পীর জন্মদিন। জন্মদিন উদযাপন, সঙ্গীত ক্যারিয়ার, রাজনীতিসহ নানান বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন

জাগো নিউজ: জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
কনকচাঁপা: ধন্যবাদ।

জাগো নিউজ: কীভাবে উদযাপন করবেন দিনটা?
কনকচাঁপা: জন্মদিন উদযাপনের কথা শুনলে লজ্জাই লাগে! আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। ছোটবেলায় জন্মদিনে মা ঘরের পালা মুরগি জবাই করতেন, পোলাও রান্না করতেন, একটু ফিরনি রান্না করতেন এ টুকুই। এই পর্যন্তই। সেই সময়ে কেক চোখেও দেখি নাই। কেক দেখেছি সিনেমায়। সিনেমায় সাদা জামা পরে নাচ-গান করে আর কেক কাটে, সেই সাথে হ্যাপি বার্থ ডে গান গায় – এগুলো আমাদের জীবনে ছিল না। যখন কিশোরী বয়স, বান্ধবী হলো, তখন তারা এলে আমার মা হাফ-প্লেটে একটু চানাচুর, একটা কলা, একটু নুডুল দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করতেন। ওটা অনেক আনন্দের ছিল। তখন বুঝতাম যে, আজ আমার জন্মদিন।

জাগো নিউজ: সংসার জীবনে?
কনকচাঁপা: যখন সংসারী হলাম, ছেলে-মেয়ে হলো, ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে গেল, তখন তারা মা-বাবার জন্মদিন পালন করা শুরু করলো। অনেক সময় এ রকম হলো যে, সারপ্রাইজ বার্থডে! আগে থেকে কিছু না জানিয়ে সন্তানরা বিভিন্ন উপহার দিতো। দেখা গেল আমার খুব কাছের দুই বান্ধবীকে বলেছে, তারা এসে হাজির। ছেলের বউ আর মেয়ে দুজন মিলেই বেশির ভাগ আয়োজন করতো। মেয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে এক বছর হয়েছে। গত বছর জন্মদিন গেছে কান্নায় কান্নায়। এ বছরও মনে হচ্ছে, মেয়েটা কাছে থাকলে খুব আনন্দ করতো।

জাগো নিউজ: এবারের জন্মদিনে তাহলে কোনো আয়োজনই থাকছে না?
কনকচাঁপা: আমি কোনো আয়োজন করতে চাইনি। কিন্তু আমার একটা অনলাইন স্কুল আছে। এ স্কুলে প্রায় পঞ্চাশ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। সেখানে কিন্তু আমি গান শেখাই না। নৈতিকতাসহ বিভিন্ন বিষয় শেখাই। স্কুলটার বয়স ১৫ বছর। জন্মদিন উপলক্ষে তারা বাসায় চলে আসে। আমি তো তখন বিপদে পড়ি! এই সময়ে কেউ বাসায় এলে তো খাওয়া-দাওয়ার একটা ব্যবস্থা করতে হয়। তবে এবার বলে দিয়েছি। তোমরা যারা আসবে আইসো, আর আমি যা রান্না করার করব। আশা করছি আজ বাসায় অনেক মানুষ হবে। ওরা আসবে, ওরাই আনন্দ করবে। আর আমার মাকে নিয়ে আসছি। কারণ জন্মদিনে তো আমি আমার মাকেই উইশ করবো। আলহামদুলিলাহ, আমার মা আছেন।

জাগো নিউজ: এখন তো আপনার নাতি-নাতনি হয়েছে। তাদের সঙ্গে আপনার সময় কেমন কাটে?
কনকচাঁপা: আমার মেয়ের বাচ্চারা একটু বড়। ওরা তো অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে। মেয়ের তিন বাচ্চা। আপতত ঘরে দুই নাতি আছে। ভালোই কাটে ওদের সঙ্গে।

জাগো নিউজ: আপনি তো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নিজ এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কেমন চলছে?
কনকচাঁপা: আমি আমার নির্বাচনী এলাকার (সিরাজগঞ্জ-১) মাঠে আছি। ইউনিয়নে ইউনিয়নে যাচ্ছি। জনসংযোগ, গণসংযোগ করছি। সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। মানুষ আমাকে খুব ভালোবাসা দিচ্ছে। এর পরের বিষয়গুলো পুরোটাই আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

জাগো নিউজ: দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
কনকচাঁপা: মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। ২০১৮ সালে আমি নির্বাচন করেছিলাম। সে সময়েও আমাকে খুব সম্মানের সঙ্গে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দল যেহেতু ফ্রেশ ইমেজের মানুষ চায়, সেটি আমার রয়েছে। আমি জীবনে নেতিবাচক কোনো কাজে জড়াইনি। দল যদি সেটা দেখে আমাকে মূল্যায়ন করে, দল যদি মনে করে আমি কাজ করার জন্য উপযুক্ত, সেটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে দলের যে কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমার সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাদের ভাইবটা দেখছি। তারা যাতে আমাকে আস্থার জায়গায় দেখতে পায়, সেই কথা বলছি। আমি মানুষকে কোনো মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছি না। আমি মিথ্যার সঙ্গে নেই। আমার স্লোগানই হলো ‘আমি মিথ্যামুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই’।

জাগো নিউজ: সঙ্গীতে দীর্ঘ একটা জীবন পার করেছেন। এ নিয়ে আপনি কতটা তৃপ্ত?
কনকচাঁপা: আমি পুরো ক্যারিয়ারে আমার দিক থেকে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কিছু সময় নষ্ট হয়েছে, এই সময়টুকু নষ্ট না হলে ক্যারিয়ারটা পরিপূর্ণ হতো। জীবনের সব কিছু যে পরিপূর্ণ হয়, এমনটাও না। আমি যদি ওই সময়টুকু বাদ দিয়ে ধরি, তাহলে বাকিটুকুকে পরিপূর্ণ বলতে পারি। আমার দিক থেকে কোনো কার্পণ্য করিনি। আমি সব সময় নিষ্ঠার সঙ্গে শ্রমিকের মতো কাজ করে গেছি। আমার দিক থেকে কোনো কমতি ছিল না। জাতিকে যতটুকু দেওয়ার, আমি তা আমার গানের মাধ্যমে দিয়েছি। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি। এর মাধ্যমে আমি আমার দেশের আপামার সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। ফলে আমার কোনো অতৃপ্তির জায়গা নেই।

জাগো নিউজ: নতুন শিল্পীদের কি সঠিক পরিচর্যা করা হচ্ছে বলে মনে করেন?
কনকচাঁপা: আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা গান গাইছে, যারা অলরেডি স্টাবলিস্ট হয়ে গেছে, তাদের সবারই সুন্দর কণ্ঠ আছে। তাদের অনেক প্রতিভা আছে। আমি যেটা বলবো সেটা হচ্ছে, সুরকার বা যারা গান তৈরির সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের যারা শিল্পী আছেন, তাদের দিয়ে শুধু আইটেম গান গাওয়াবেন না। তাদের দিয়ে একটু মেলোডিয়াস গান করান। কারণ, তাদের টিকে থাকতে হলে, তাদের অনেকটা সময় পার করতে হলে কিছু ভালো গান দরকার। সবসময় নাচানাচির গান, লাফালাফির গান স্থায়ীত্ব পায় না। টিকে থাকে না। এত ভালো ভালো কণ্ঠ আছে, তাদের কণ্ঠটাকে ভালোভাবে ব্যবহার করা হোক। যারা গান তৈরির সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে আমার এ অনুরোধ। আইটেম গান আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে গানের প্রধানতম শাখা হচ্ছে মেলোডিয়াস গান। জনপ্রিয় হয় মেলোডিয়াস গান। যতই নাচের গানের সঙ্গে মানুষ নাচুক, দিনশেষে যখন রাতে মানুষ নিজের জন্য গান শুনবে, তখন একটা মেলোডিয়াস শান্তিময় গান শুনতে চায়। আমাদের শিল্পীদের দিয়ে তাদের মৌলিক গান এবং মেলোডিয়াস গান করানো হোক। কারণ নতুন শিল্পীদের তো এগিয়ে যেতে হবে।

জাগো নিউজ: নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
কনকচাঁপা: নতুন শিল্পীদের কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমি চোখ বন্ধ করে যে গান শুনবো, তখন যেন বলে দিতে পারি, এটা ওমুক শিল্পীর কণ্ঠ। প্রত্যেককে স্বকীয়তা তৈরি করতে হবে। সবার যেন নিজস্ব কণ্ঠসত্ত্বা তৈরি হয়।

এমএমএফ/আরএমডি/এএসএম

Read Entire Article