মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু রাজ্যে মুসলিম পুরুষরা অকারণে জুমার নামাজে না গেলে তাদের সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতে পারে। এমন ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যটি বর্তমানে রক্ষণশীল প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পাস) শাসন করছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, শরিয়াহ ফৌজদারি অপরাধ (তাকজির) আইন অনুযায়ী অপরাধীদের সর্বোচ্চ তিন হাজার রিঙ্গিত (প্রায় ৫২৫ পাউন্ড) জরিমানা বা কারাদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। তেরেঙ্গানু রাজ্য নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য মুহাম্মদ খালিল আবদুল হাদি সতর্ক করে বলেন, এমনকি একবার জুমার নামাজ মিস করলেও এটি দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এর আগে টানা তিন সপ্তাহ জুমার নামাজে অনুপস্থিত থাকলে শাস্তির বিধান ছিল। তিনি আরও বলেন,এটি গুরুত্বপূর্ণ স্মরণ করানো, কারণ জুমার নামাজ শুধু ধর্মীয় প্রতীক নয়, বরং মুসলমানদের আনুগত্যের প্রকাশ। তাই দণ্ড দেওয়া হবে কেবল শেষ উপায় হিসেবে, যখন কেউ বারবার স্মরণ করানো উপেক্ষা করবে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, মানুষকে এ বাধ্যবাধকতার কথা মনে করিয়ে দিতে মসজিদগুলোতে ব্যানার টানানো হবে। সেসঙ্গে অনুপস্থিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জনগণের অভিযোগ অথবা টহল দলের মাধ্যমে।
এই প্রয়োগ পাস দলের বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ, যারা মালয়েশিয়ায় শরিয়াহ আইনের কঠোর প্রয়োগ চায়। দলটি দেশের পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এবং ১৩টি রাজ্যের মধ্যে চারটিতে শাসন করছে। অতীতে দলটি হুদুদ আইন প্রবর্তনেরও চেষ্টা করেছে, যেখানে চুরির শাস্তি অঙ্গচ্ছেদ এবং ব্যভিচারের শাস্তি পাথর ছোড়ার মতো শাস্তির বিধান ছিল।
সামাজিক মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা উঠেছে। আইনজীবী আজিরা আজিজ এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ইসলামে তো জোর-জবরদস্তি নেই বলা হয়, অথচ এই সিদ্ধান্ত যেন দেখাচ্ছে তেরেঙ্গানুর পুরুষরা কত কম জুমার নামাজে যায়। নামাজ যে ফরজ এতে দ্বিমত নেই, কিন্তু এটিকে আইনগত অপরাধ হিসেবে কোডিফাই করার প্রয়োজন ছিল না। সচেতনতা কর্মসূচিই যথেষ্ট ছিল।
মালয়েশিয়ায় দ্বৈত আইনি কাঠামো রয়েছে- মুসলিমদের জন্য ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে শরিয়াহ আইন, পাশাপাশি সিভিল আইনও কার্যকর। তিন কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জাতিগত মালয় (যাদের আইনের দৃষ্টিতে সবাই মুসলিম), বাকি অংশে চীনা ও ভারতীয় সংখ্যালঘু রয়েছে।
গত নভেম্বরেও জোহর রাজ্যের শীর্ষ ইসলামি কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, রাজ্যে মুসলিম পুরুষদের জুমার নামাজে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ আদালত এক ডজনেরও বেশি শরিয়াহভিত্তিক রাজ্য আইন বাতিল করে দেয়, যা ইসলামপন্থিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এতে দেশব্যাপী শরিয়াহ আদালতের কর্তৃত্ব দুর্বল হতে পারে।