জুলাই আন্দোলনের নারীদের ভূয়সী প্রশংসা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ‘ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্য মনোনীত হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া একদল সাহসী নারী। তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩১ মার্চ) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এ নিয়ে কথা বলেন। জুলাইয়ের নারীরা সবার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে উল্লেখ করেন ব্রুস।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশি একদল নারী পুরস্কার পাচ্ছে। এই মঞ্চ থেকে গ্রহণ করবে তারা। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের আন্দোলনের জন্য বাংলাদেশি নারীরা এ পুরস্কার পাচ্ছে। আপনার কী কোনো মন্তব্য আছে?
ব্রুস বলেন, এখানে যা বলতে যাচ্ছি তা হলো আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার নিয়ে। কিন্তু আমি বাংলাদেশের রাজনীতির প্রকৃতি সম্পর্কিত প্রশ্নের শেষ অংশ নিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছি না। আবারও উল্লেখ করার সুযোগ নেব যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আগামীকাল এখানে পররাষ্ট্র দপ্তরে ১৯তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। ২০২৫ সালের অনুষ্ঠানে আটজন অসাধারণ নারীকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং বিশ্বজুড়ে ম্যাডেলিন অলব্রাইট সম্মানসূচক গ্রুপ আইডব্লিউওসি পুরস্কার প্রাপকদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। যারা সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, সেক্রেটারি অব স্টেটের আইডব্লিউওসি পুরস্কার- যাকে আমরা বলি, বিশ্বজুড়ে সেইসব নারীদের স্বীকৃতি দেয় যারা ব্যতিক্রমী সাহস, শক্তি এবং নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের সমর্থক। তাদের প্রচেষ্টার ফলে তারা প্রায়শই তাদের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ব্যক্তিগত ঝুঁকির সম্মুখীন হন।
২০০৭ সাল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ৯০টিরও বেশি দেশের ২০০ জনেরও বেশি নারীকে এ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। বিদেশে অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিক মিশনগুলো তাদের নিজ নিজ দেশ থেকে একজন সাহসী নারীকে মনোনীত করে। চূড়ান্ত প্রার্থীদের নির্বাচন এবং অনুমোদন করে দপ্তরের ঊর্ধ্বতন বিভাগীয় কর্মকর্তারা।
ব্রুস জানান, অনুষ্ঠানের পর পুরস্কারপ্রাপ্তরা ওয়াশিংটন ডিসিতে আন্তর্জাতিক ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামে অংশ নেবেন। লস অ্যাঞ্জেলেসে সম্প্রসারিত প্রোগ্রামিংয়েও তারা অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। সেখানে আমেরিকান নারী নেত্রীরাও থাকবেন। বিশ্বব্যাপী নারীদের ক্ষমতায়নে এবং তাদের কাজকে আরও এগিয়ে নেওয়ার কৌশল নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের শাণিত করার সুযোগ পাবেন জুলাইয়ের নারীরা।
প্রসঙ্গত, মার্কিন পুরস্কারে মনোনীত হওয়া নারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রেস উইংয়ে অভিনন্দন বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অসীম সাহসিকতার প্রতীক আমাদের জুলাই কন্যাদের প্রতি, ২০২৫ সালের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাপূর্ণ ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী’ পুরস্কার অর্জন করায় তোমাদের সবাইকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই স্বীকৃতি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে তোমাদের অসাধারণ সাহসিকতা, নেতৃত্ব এবং অটল অঙ্গীকারের শক্তিশালী প্রমাণ; সেই সংকটময় সময়ে তোমাদের কৃতি সত্যিকার সাহসিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা কেবল প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওনি, একইসঙ্গে অস্থির একটি সময়ে জাতিকেও আশা দিয়েছ। তোমাদের শক্তি, দৃঢ়তা এবং দৃঢ় সংকল্প বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী অগণিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তোমাদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা আমাদের সবার কাছে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ন্যায়বিচারের সাধনা কখনই সহজ নয়, তবে তা সর্বদা সার্থক। তোমরা বিশ্বকে দেখিয়েছ যে প্রকৃত নেতৃত্ব এবং ত্যাগ কেমন হয় এবং তোমাদের সাহসের মাধ্যমে তোমরা বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল এবং আরও ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করেছ।