চব্বিশের আন্দোলনে রাজপথে পুলিশের গুলিতে আহত হওয়া জুলাই যোদ্ধা ছাত্রদল নেতা মুহাম্মদ বাবলু এখন লড়ছেন মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে। অর্থাভাবে থমকে গেছে ২১ বছর বয়সি এই তরুণের চিকিৎসা।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের আবুল কাশেমের ছেলে বাবলু বর্তমানে গাজীপুরের টঙ্গী বেপারীবাড়ি এলাকায় বড় ভাই আব্দুল্লাহ সঙ্গে বসবাস করেন। তিনি টঙ্গীর ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক। তিনি টঙ্গী সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় এ বছর উত্তীর্ণ হন।
গত এপ্রিল মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর ধানমন্ডির নিউ লাইফ হাসপাতালে পরীক্ষায় তার খাদ্যনালিতে ‘গ্যাস্ট্রো-এসোফেজিয়াল অ্যাডেনোকার্সিনোমা গ্রেড-৩’ ক্যানসার ধরা পড়ে।
চিকিৎসকদের পরামর্শে বাবলুর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়। তার চিকিৎসায় মোট ৮টি কেমোথেরাপি প্রয়োজন, যার মধ্যে চারটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি থেরাপির পেছনে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এরপর লাগবে অস্ত্রোপচার, যার ব্যয় কয়েক লাখ টাকা।
বাবলু জানান, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। আরও চারটি কেমো বাকি। অপারেশন তো দূরের কথা, পরের থেরাপিগুলোর খরচই জোগাড় করতে পারছি না।’
আরও পড়ুন:
চিকিৎসা বন্ধ, হুইলচেয়ারে বসেই চলছে শাওনের জীবিকার লড়াই
তরুণ আশিকের দুটি কিডনিই বিকল, সাহায্যের আবেদন
দুই মেয়ের চিকিৎসায় কিডনি বিক্রি চান হতভাগা বাবা
তার বাবা আবুল কাশেম নিজ এলাকায় একটি ছোট ব্যবসা করেন। ছেলের চিকিৎসার জন্য যা কিছু ছিল, সবই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটে।
ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় বাবলু ছিলেন রাজপথের সাহসী মুখ। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই উত্তরা বিএনএস সেন্টারে হওয়া আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। ওইদিন পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন বাবলু। এখনো তার বুকে একটি ছররা গুলি রয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বিরোধী প্রায় সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাবলু বলেন, ‘আমি বাঁচতে চাই। পৃথিবীর আলো-বাতাসে নিশ্বাস নিতে চাই। আবার রাজপথে দাঁড়াতে চাই মানুষের অধিকারের জন্য।’
আক্ষেপ করে বাবলু বলেন, ‘আমি টঙ্গীর ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক। আমার যৌবনের সব ভালোবাসা যে সংগঠনের জন্য উজাড় করে দিয়েছি সে সংগঠন থেকে আমি উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা পাইনি। শুধু টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির এক নেতা ১০ হাজার টাকা আর মহানগর ছাত্রদলের এক নেতা ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। অথচ আমার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সে খোঁজ খবর নিচ্ছে।’
মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরন বলেন, ‘আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করেছি ও খোঁজখবর নিচ্ছি।’
টঙ্গী সরকারি কলেজের সদস্যসচিব আলাউদ্দিন সুমন বলেন, ‘অনেক দলীয় নেতারা সহায়তার আশ্বাস দিলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সহায়তা আসেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য বাবলু এত বড় একটা দলের কর্মী অথচ দুই থেকে তিন লাখ টাকার জন্য বাবলুর জীবন থমকে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাবলু চিকিৎসার অভাবে।’
পরিবার ও সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে সহায়তার আবেদন জানানো হলেও এখন পর্যন্ত বড় কোনো সহযোগিতা মেলেনি। বাবলুর পরিবারের পক্ষ থেকে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মো. আমিনুল ইসলাম/এমএন/এএসএম

2 hours ago
3








English (US) ·