জুলাই সনদ নিয়ে শিগগির প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিএনপি

2 weeks ago 12

জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর না রাখা ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে দ্বিমত পোষণ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে খসড়ায় লিখিত মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে নাকি নিচে রাখা হবে সেটা নিয়েও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় বসবে দলটি। শিগগির এ আলোচনায় বসবেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কোনো রাজনৈতিক ‘সমঝোতার দলিল’ সংবিধানের ওপরে স্থান পেতে পারে কি না, এমন প্রশ্ন তুলে বিএনপি বলছে, জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়া হলে খারাপ নজির তৈরি হবে। এ সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, সরাসরি এমন বিধান রাখারও বিপক্ষে বিএনপি।

সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে মতামত চেয়ে জুলাই সনদের যে পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছিল। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের পর তার ওপর লিখিত মতামত দিয়েছে বিএনপি।

বুধবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঐকমত্য কমিশনে ই-মেইলের মাধ্যমে তা জমা দিয়েছে দলটি। যদিও এর আগে একটি সূত্র জানিয়েছিল, ২১ আগস্ট জুলাই সনদ জমা দেবে বিএনপি।

জানা গেছে, নির্বাচনের স্বার্থে যতটা ছাড় দেওয়া দরকার, মতামতে ততটা ছাড় দিয়েছে বিএনপি। দলটির এখন প্রত্যাশা, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হবে। তবে অঙ্গীকারনামায় থাকা কয়েকটি প্রস্তাবে দলীয় ভিন্নমত থাকলেও আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এর আইনি বৈধ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া খুঁজে বের করা যাবে বলে বিশ্বাস বিএনপির। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আগামীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে বৈঠকের পরিকল্পনা করছে, সেখানে এ ব্যাপারে তাদের মতামত তুলে ধরবে দলটি।

সূত্র আরও জানায়, জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করতে গত সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদসহ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার রাতে আবারও স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসেন সদস্যরা। বৈঠকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার প্রস্তাবগুলো নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়।

বৈঠকে জুলাই সনদের আট দফা অঙ্গীরকারনামাকে অপ্রয়োজনীয় বলেও মনে করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যখন এই সনদে স্বাক্ষর করবে, সেটিই মূলত অঙ্গীকার। এর বাইরে আলাদা করে আর অঙ্গীকারের প্রয়োজন নেই। তারপরও পৃথকভাবে অঙ্গীকারনামা রাখতে হলে সেটি যৌক্তিক পর্যায়ে থাকতে হবে।

অঙ্গীকারনামার চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, জুলাই সনদের প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এমন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে কোনো কোনো সদস্য মতামত দেন, এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো ডকুমেন্ট বা নথির অবস্থান সংবিধানের উপরে হতে পারে না। অর্থাৎ জুলাই সনদকে সংবিধানের উপরে জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপি নেতাদের অভিমত হচ্ছে, কোনো নাগরিক যদি তার জীবন, সম্পদ বা অন্যান্য যেকোনো বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তার আইনি আশ্রয় লাভের অধিকার আছে, প্রশ্ন তোলার অধিকার আছে। এ দিক দিয়ে এটি (প্রশ্ন না তোলার বিধান) ঠিক হবে না।

এছাড়া বুধবার ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও এলডিপির সঙ্গেও বৈঠক করে দলটি। গত মঙ্গলবার গুলশান চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যুগপৎ মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, গণপরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেন দায়িত্বশীল নেতারা। বৈঠকে জুলাই সনদ নিয়ে যুগপৎ মিত্রদের অভিন্ন বা কাছাকাছি মতামত দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় আগের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া বিষয়গুলো সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় না এলে সেটা উল্লেখ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মতামত জমা দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আলোচনার একপর্যায়ে মঞ্চের নেতারা বলেন, জুলাই সনদের আইনি সুরক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও উচ্চ আদালতের রেফারেন্সের ভিত্তিতে শপথ নিয়েছে। জুলাই সনদের ক্ষেত্রেও সেটি অনুসরণ করা যেতে পারে। বিএনপির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, আগামীতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মঞ্চের পক্ষ থেকে এমন মতামত বা পরামর্শ দেওয়া হলে বিএনপি তাতে আপত্তি জানাবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, জুলাই সনদের অনেক বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আবারও আলোচনায় অংশ নেবে বিএনপি। সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েও তখন মতামত দেওয়া হবে।

বৈঠক সূত্র আরও জানিয়েছে, জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া নিয়ে সামগ্রিকভাবে খুব বেশি আপত্তি নেই বিএনপির। তবে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ার সূচনা ও ২, ৩, ৪ দফায় আপত্তি জানিয়ে মতামত জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সনদে উত্থাপিত ৮৪ দফার মধ্যে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং যেসব বিষয়ে দলগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, সেগুলোর সমাধানের পথ কী হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে দলীয় মতামত তুলে ধরা হবে।

জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা শেষে মতামত জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, জুলাই সনদ সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পেলে একটি খারাপ নজির স্থাপন হবে। এখানে বলা হয়েছে- জুলাই সনদের সবকিছু সংবিধান এবং কোনো আইনি ভিন্নতা থাকলেও এই সনদের বিধান, প্রস্তাব, সুপারিশ প্রাধান্য পাবে। তার মানে হচ্ছে এটি সংবিধানের ওপরে। কোনো সমঝোতার দলিল কী কনস্টিটিউশনাল ইন্সট্রুমেন্টাল হতে পারে? এটা হতে পারে না।

তিনি বলেন, আমরা সংবিধানের মধ্যে আইনি বৈধতা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় কীভাবে এ সমঝোতা দলিলটাকে বাস্তবায়ন করতে পারি সেই চিন্তা করতে হবে। এখন যদি বলা হয় এ দলিলের সবকিছু সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পাবে তাহলে এটা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ নজির সৃষ্টি হবে। এটা করা ঠিক হবে না।

কেএইচ/এমএএইচ/

Read Entire Article