জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতরা। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবায়নে শহীদ ও আহত পরিবারের সম্মিলিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শহীদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা শহিদুল ইসলাম ভূইয়া। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বাদ দিয়েছে, কিন্তু সেই বাগান এখনো রাষ্ট্রীয় ও আইনি মর্যাদা পায়নি। জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও অধিকার এখনো সুনিশ্চিত হয়নি- যা জাতির জন্য এক অপমানজনক বাস্তবতা। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল জুলাই সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে শহীদ ও আহতদের অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও সেই প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা নোবেল বিজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহম্মদ ইউনূস স্যারের প্রতি আহ্বান জানাই- আপনি যেমন জাতির সংকটে নেতৃত্ব দিয়ে স্থিতিশীলতার পথ দেখিয়েছেন, তেমনি এবারও ‘জুলাই সনদ’-এর আইনি স্বীকৃতি দিয়ে জাতির বীর সন্তানদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। অন্যথায়, এই অর্জন বিপন্ন হবে এবং ইতিহাস আপনাকে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের কলঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত করবে। আমরা ২০ হাজার আহত ও ১৪০০ শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে আপনার পাশে আছি। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও এই দাবির বাস্তবায়ন চাই।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলুর মাহমিন বলেন, আমাদের সন্তানরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আমরাও রক্ত দেবো। নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে আমরা নির্বাচন হতে দেবো না।
আরও পড়ুন
কালকের মধ্যে জুলাই সনদের আদেশ না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকায় জনস্রোত হবে
জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামায় যা আছে
আরেক জুলাই শহীদের কন্যা চাঁদনি বলেন, আমার বাবা কোনো রাজনীতি করতেন না। আবু সাঈদকে মারার পর তিনি আমার ভাইকে নিয়ে আন্দোলনে গেছেন। ভাই বেঁচে আছেন, কিন্তু বাবা শহীদ হয়েছেন। আমরা তিনবোন ও আমাদের মা চরম অসহায়। আমাদের নিরাপত্তা নাই। আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চাই। আমাদের নিরাপত্তা চাই।
এ সময় শহীদ মাহমুদুর রহমান খানের স্ত্রী মরিয়ম খান বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। আমাদের এখন দাবি তোলার কথা নয়। অথচ হয়নি। হচ্ছে না। আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চাই।
শহীদ আব্দুল হান্নান খানের ছেলে ডা. সাইফ আহমেদ খান বলেন, আমাদের মুক্তির সনদ, জুলাই সনদ আইনিভাবে বাস্তবায়ন হোক। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করেন, সাংবিধানিকভাবে এর স্বীকৃতি দেন।
শহীদ শাহরিয়ারের পিতা আব্দুল মতিন এ সময় বলেন, আমার একমাত্র ছেলে হারিয়েছি। তার মতো ১৪০০ সন্তান শহীদ হয়েছে। ২০ হাজার আহত। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। সব আগের মতোই, তাহলে জুলাই বিপ্লবের কী প্রয়োজন ছিল? আমরা চাই, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক।
শহীদ মুনতাসীর রহমানের পিতা বলেন, আজ পর্যন্ত আমার মামলার আসামিও ধরে নাই। তাহলে কার বিচার করবে? জুলাই সনদ করছে, আমাদের প্রতিনিধি কোথায়? আমরা কথা বললে সবার বিরুদ্ধে যায়। কিন্তু এগুলো শুধু আমাদের কথা নয়, সবার কথা। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে আমরা কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো? আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চাই।
শহীদ সাদের পিতা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সন্তানরা রক্ত দিয়ে গেছে। এই সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ- গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন।
মীর মুগ্ধের পিতা মীর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বার বার মানুষের আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে৷ চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিণতিও যেন এমন না হয়। আবার যেন অভ্যুত্থান করতে না হয়। বিচার ও সংস্কার যেন হয়। জুলাই শহীদ ও আহতের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দরকার।
শহীদ ইয়ামিনের পিতা মইন উদ্দিন বলেন, কোনো সংবিধান মেনে জুলাই বিপ্লব হয়নি। একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব দিয়েছি। তার হাত দিয়ে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চাই।
এসইউজে/এএমএ/জিকেএস

4 hours ago
8









English (US) ·