বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত ২৮ জানুয়ারি। মো. মাহবুবুর রহমান শাহীন দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন।
এক মাস হতে চলেছে নতুন কমিটির বয়স। আগামীকাল বুধবার প্রথম সভায় বসছে এই কমিটি। প্রথম সভা, নতুন কমিটির পরিকল্পনা নিয়ে জাগো নিউজকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান শাহীন।
জাগো নিউজ: আপনি প্রথমবার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তত্বাবধায়ক সরকারের সময়। এবার অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়। নির্দলীয় সরকারের সময়ে দায়িত্ব পালন করলে কি সুবিধা-অসুবিধা?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বতীকালীন সরকার যেটাই হোক, এই সময় কাজ করতে সেভাবে কোনো প্রেসার ফেস করতে হয় না। তবে এ সময়ে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও থাকে। যেমন পৃষ্ঠপোষক পাওয়া। এ সময়ে স্পন্সর পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমি আগেরবার যখন ছিলাম এবং এখন আছি দুইবারই একটা সংকটময় সময়।
এটা আমার সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য জানি না। আমি চেষ্টা করছি সৌভাগ্য বহন করার জন্য। যেহেতু এটা ক্রীড়াঙ্গন তাই সংস্কারের বিষয়টা হলো যে দায়িত্ব নেয় তার ভালোও থাকে, খারাপও থাকে। সংস্কারের মাধ্যমে কোনটা ভালো হবে সেটাই আমি নেবো সাঁতারের উন্নতির জন্য। আর যেটা খারাপ সেটা বর্জনের চেষ্টা করবো। কমিটিতে আমার সহকর্মী যারা আছেন তাদের পরামর্শও নেবো। সবার মতামত ও পরামর্শ নিয়ে আমি ভালোর দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
জাগো নিউজ: আগের কমিটি দায়িত্ব পালনে কোনো অনিয়ম করেছে কিনা, সেগুলো খেতে আপনারা কোনো তদন্ত করবেন কি না?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: বিগত দিনে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা হয়তো রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে এসেছিলেন। আমাদের ফেডারেশনের সভাপতি বাংলাদেশ নৌবাহনী প্রধান। এই ফেডারেশনের পেপার্সগুলো আপডেট আছে। প্রতি বছরের অডিট রিপোর্টও আছে।
তবে আমরা পেছনে তাকাতে চাই না। পেছনে কি ছিল না ছিল জানি না। সামনের দিকে তাকিয়ে কিভাবে সাঁতারকে আরো উজ্জ্বল করা যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং করে যাবো যতদিন সময় পাই। এটা অ্যাডহক কমিটি। আমাদের সময় কিন্তু বেশি না। এই কমিটির মাধ্যমে যতদিন সময় পাই, আমি চেষ্টা করবো সেই সময়ের মধ্যে সাঁতারের উন্নতি করতে।
জাগো নিউজ: আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে আপনাদের কেমন যোগাযোগ এখন?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: আগে সাঁতারের আন্তর্জাতিক বডি ছিল ফিনা। এখন নাম বদলে হয়েছে ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিকস। আগে ফিনার সাথে আমাদের সম্মৃক্ততা সেভাবে ছিল না। আমি এবার দায়িত্ব পাওয়ার পর খেললাম অ্যাকুয়াটিকস থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি দিচ্ছে। বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়ার জন্য তাদের প্রস্তাব আসছে। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে।
জাগো নিউজ: দেশের সাঁতারের দুঃখ বলা হয় সুইমিংপুলের স্কোরবোর্ডকে। ইলেক্ট্রনিকস স্কোরবোর্ড তৈরি করা হয়েছে, কাজে আসছে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: ২৮ জানুয়ারি আমাদের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সম্ভবত পরের দিন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে গিয়েছিলাম। সচিবের সাথে সুইমিংপুলোর ডিজিটাল স্কোরবোর্ড নিয়েই আলোচনা করতে। আমারা সাঁতারের জন্য যাই করি না কেন, দেখা যাচ্ছে ম্যানুয়াল টাইমিংয়ে ঠিক রেজাল্টটা আসে না।
সচিবকে বলেছি, যেহেতু স্কোরবোর্ডের দরপত্র হয়েছে এবং আমরা পরিপূর্ণ স্কোরবোর্ড বুঝে পাইনি কি ব্যবস্থা নেবেন। তখন সচিব এই বিভাগের কর্মকর্তারে সাথে কথা বলে জানিয়েছিলেন রাজনৈতিক কারণে ঠিকাদাররা একটু সমস্যায় আছে। আশা করছি, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে স্কোরবোর্ড পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে।
জাগো নিউজ: স্কোরবোর্ড ছাড়াও পুলে গ্যালারিসহ আরো কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো কি দেখেছেন?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: যারা দর্শক সাঁড়িতে থাকবেন তারে খেলা দেখতে সমস্যা হয়। আমি এসেছি মাত্র তিন সপ্তাহ হলো। এখনো অনেক কিছু আমার আয়ত্বে নিতে পারিনি। যখন দেখবো যে, সমস্যাটা বড় আকারে আছে তখন যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো বিষয়টি নিয়ে।
জাগো নিউজ: আগের কমিটির কাছ থেকে কি ফান্ড পেয়েছেন?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: ফেডারেশনের তহবিলের কি অবস্থা সেটা এখনো চূড়ান্তভাবে নিতে পারিনি। আগামীকাল (বুধবার) আমাদের নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা। এ সভায় অনেক কিছু পরিস্কার হতে পারবো- কি আছে কি নেই। এ সভাতেই আমাদের সবকিছু হস্তান্তর হবে।
জাগো নিউজ: পল্টনের সুইমিংপুল তো কোনো কাজে আসছে না। এ নিয়ে কি ভাবছেন?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: এই পুল নিয়ে আমরা কোনো পরিকল্পনা করতে পারিনি। এটা পরিত্যক্ত একটা পুল। এখানে কেবল নবীশ সাঁতারু আছে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী যারা সাঁতার জানেন না তাদের সার্ভিস দেওয়ার জন্যই পুলটা চালু রেখেছি। অন্য কিছু এখানে করা যাচ্ছে না।
আগে যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে বলেছিলাম, এতবড় মূল্যবান জায়গা এটা। এখান সুইমিংপুল আছে। এটাকে ইনডোরে পরিণত করতে চাইলে সেটা সম্ভব। সেই জায়গা এখানে আছে। কেবল সুইমিংপুল না, এখানে বহুতল ভবন করে অন্যান্য ইনডোর খেলাগুলোকেও এখানে নিয়ে আসা যায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভেন্যু করার রকার নেই। অন্য ফেডারেশনের খেলাও এখানে আয়োজন করা যেতে পারে।
জাগো নিউজ: দেশে পঁচিশটির মতো জেলা সুইমিংপুল আছে। বেশিরভাগই ব্যবহার হয় না। মনে হবে পরিত্যক্ত কোনো স্থাপনা। কোথাও গরুর গোসল করায়, কোথাও মনে হবে ব্যাঙের চাষ হচ্ছে। পুলগুলো এমন থাকলে সাঁতারু উঠে আসবে কিভাবে?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: আমার প্রস্তাবনা হলো যেসব জেলা ও বিভাগে সুইমিংপুল হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের অধীনে দিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে এখান থেকে যে রেজাল্ট আনা রকার সেটা আমরা করতে পারবো। এখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে আছে। খো যাচ্ছে কোনো পুলের টাইলস খসে গেছে, কোনো পুলের পাইপ ভেঙ্গে গেছে। কোনটারই রক্ষণাবেক্ষণ নেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে যতগুলো পুল হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের অধীনে দেওয়া হোক। তাতে স্থানীয়ভাবে সাঁতারু তৈরির একটা সুবিধা পাবো।
জাগো নিউজ: এখনতো বিশ্বে ২৫ মিটার পুলের প্রচলন বাড়ছে। তাতে জায়গা লাগে কম, রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কম। ২৫ মিটার পুল নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করা যায় না?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: যেখানেই পুল বা অন্য কোনো স্থাপনা আছে সেগুলোর মালিকানা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যদি আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ চায় সে ক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিতে পারি। সব নির্মাণের প্রকৌশল বিভাগতো তাদের। তারা নিজেদের ডিজাইন অনুযায়ীই পুলগুলো নির্মাণ করে থাকে। আমাদের পরামর্শ নেওয়া হয় না বা আমরা দিতেও পারি না। দিলেও সেটা কতটুকু কার্যকরী হবে সেটাও আমি জানি না।
এখন যে পুলগুলো আছে পুরো দেশে সেখান থেকে কি সাঁতারু বের হয়ে আসে? প্রতিভা অন্বেষণে আসেনি, কোনো কিছুতেই আসেনি। তাহলে কেন এই টাকাগুলো নষ্ট করা হলো পুল নির্মাণ করে? আমাকে সেই সুযোগ দেওয়া হোক। যাতে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে সাঁতারুদের জন্য পুলগুলো ব্যবহার করা যায়।
জাগো নিউজ: সাঁতারের ক্লাবগুলোর তো আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাদের কি ফেডারেশন থেকে সহযোগিতা করা যায় না?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: সাঁতারু আসে ক্লাবগুলো থেকে। অথচ আমরা ক্লাবগুলোকে অনুদান দিতে পারি না। আমি যখন আগে সাধারণ সম্পাদক ছিলাম তখন ক্লাবগুলোকে একটা অনুদান দিয়েছি। যদিও পরিমাণ কম ছিল। তবুও বলবো ওই সময়ের জন্য বড় বিষয় ছিল। তার আগে-পরে কখনো দেওয়া হয়নি। এবারও আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি ক্লাবগুলোকে কিছু অনুদান দেবো।
আমাদের ক্লাবের একজন সংগঠক যখন সাড়া বছরে সাঁতারুদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাতে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়। সে যেখান থেকেই ব্যবস্থা করুক, টাকাতো তার খরচ হচ্ছে। আমরা যদি তাদেরকে সহযোগিতা না করি তাহলে দেখা যাবে এক সময় সাঁতার বন্ধ হয়ে গেছে। সাঁতারই যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সাঁতার ফেডারেশনেরও দরকার নেই, আমার মতো সাধারণ সম্পাদকেরও রকার নেই। সেই দৃষ্টিকোন থেকে সাঁতারের আরো উন্নয়নের জন্য এই সিদ্ধান্ত। আমি বুধবারের সভায় প্রস্তাব রাখবো, প্রত্যেকটা ক্লাবকে অনুান দেওয়ার জন্য।
জাগো নিউজ: মাসখানেক হলো কমিটি হয়েছে। প্রথম মিটিং বুধবার। এর মধ্যে আপনারা কোনো পরিকল্পনা করেননি?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: আনুষ্ঠানিকভাবে সভা এখনো না হলেও আমরা যারা কমিটিতে আছি তারা অনেক সময়ই এক সাথে হয় মিরপুর সুইমিংপুলে না হয় পল্টন সুইমিংপুলে বসি। তখন আলোচনাগুলো আমাদের হয়। সমস্যা হলো আমি যেহেতু অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক কতদিন থাকতে পারবো জানি না। এটা আমি বেশি দিন নেবোও না।
দেশের প্রেক্ষাপটের কারণেই আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবো। আমাদের কাজ হলো-যেসব সাঁতারুকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি তাদের মধ্যে থেকে ভালো কয়েজন নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পাঠানো। এই বেটার বলতে শুধু সুইমিং না। এখানে ওয়াটারপোলেও আছে, ডাইভিংও আছে। ডাইভিং’েয় আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো এগিয়ে এসেছে। জেলা পর্যায়ে যারা ডাইভার আছেন তারা ভালো করছেন। এবার টুর্নামেন্টেও দেখলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে গেলে সেটা ব্যয়বহুল হবে।
জাগো নিউজ: বিদেশি কোচ ছিল এক সময়। এখন নেই। আবার আনবেন বিদেশি কোচ?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: আমাদের তিনটা ইভেন্টের (সাঁতার, ওয়াটারপোলো ও ডাইভিং) জন্য তিনজন বিদেশি কোচ আনবো। আমরা আগে দক্ষিণ কোরিয়ান পার্ক তেগুনকে এনেছিলাম। আমার মনে হয়, পার্কের মতো কোচ দরকার ছিল। কেন পার্ককে হারালাম সেটা ব্যাখ্যা করলে বিভিন্ন কারণ বের হয়ে আসবে। তিনি বিদেশি কোচ।
অথচ এই দেশের লোকজনের সাথে, কর্মকর্তাদের সাথে এবং সাঁতারুদের সাথে এত বেশি ফ্রেন্ডশিপ হয়েছিল যে, তাতে নিত্য সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তারপওর বলবো পার্কের যে যোগ্যতা তাকে যদি ধরে রাখা যেতো তাহলে অনেক ভালো সাঁতারু তৈরি করা যেতো। আমাদের দুর্ভাগ্য, তার চলাফেরাও ঠিক ছিল না। আমি মনে করি, চালচলনের কারণেই সে এখানে অনেক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। যার কারণে তিনি চলে গেছেন।
জাগো নিউজ: কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা আছে?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: আসলে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ব্যয় করার চেয়ে কিছু সাঁতারুকে বিদেশি টুর্নামেন্টে পাঠালে বেশি উপকার হবে। বিদেশি কোচ আনবো। তারপর আমরা অন্য দেশে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করবো। দল পাঠালে হয়তো তিন-চারজন সাঁতারু যাবে।
ওয়াটারপোলো হলে হয়তো ৭-৮ জন যাবে। তখন আমারে খরচটা কমে আসবে। তখন প্রতিযোগিদের অবস্থান কোথায় আছে সেটা নির্নয় করতে পারবো। ওয়াটপোলেতে আমাদের কোনো জাতীয় দল নেই। সাধারণত সার্ভিসেস লগুলো ওয়াটারপোলে খেলে। নতুন করে যোগ হয়েছে ক্লাবও কিছু জেলা।
এবারের প্রতিযোগিতা থেকে জেলা ও ক্লাবের দুটি বিষয় খেলাম। এক. মান এবং দুই. আগ্রহ। সার্ভিসেস লগুলোতে বরাবরই ওয়াটারপোলে খেলে। জেলা ও ক্লাব থেকে আগে কখনো এমন সাড়া পাওয়া যায়নি। আমরা সেদিকে নজর বেশি দিতে চাচ্ছি। যত কষ্টই হোক, আমি থাকা অবস্থায় চেষ্টা করবো তিন বিভাগের তিনজন কোচ আনার জন্য।
এশিয়ার মধ্যে থেকেই আমরা কোচ আনার চেষ্টা করছি। কারণ, আমাদের সাথে তাদের কন্ডিশনের অনেকটা মিল আছে। আমাদের লক্ষ্য হলো- প্রথমে কোরিয়া থেকে আনার চেষ্টা করবো। না পারলে চীন বা জাপান। কোচ আনার বিষয়টি যোগাযোগের ওপর নির্ভর করে। প্রথম সভার পর আমরা উদ্যোগ শুরু করবো। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করবো।
জাগো নিউজ: সামনেই তো ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ। দল ঠিক করবেন কবে?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে হবে ওয়ার্ল্ড সুইমিং চ্যাম্পিয়নশিপ। ১১ মার্চ পর্যন্ত এন্ট্রি পাঠানোর সুযোগ আছে। ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিকস আমাদের দুইজনকে পাঠাতে বলেছে। একজন ছেলে ও একজন মেয়ে যাবে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে। সাথে একজন কোচ দিতে হবে। আমাকে যেতে হবে কংগ্রেসে অংশ নিতে। প্রথম সভাতেই ল ঠিক হবে। যে দুইজনই অংশ নিক, তারমধ্যে একজনকে তারা স্কলারশিপ দেবে। রাফি যেহেতু ব্যাংককে আছে তাই তাকে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে পাঠাতে পারছি না। তাকে বাদ দিয়েই দুইজন পাঠাবো। তাতে নতুন একজনের স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ হবে।
জাগো নিউজ: নতুন কি পরিকল্পনা আছে আপনাদের। যা আগে কখনো দেখা যায়নি?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: পথশিশু যারা আছে তাদের মধ্যে থেকে কিছু বেছে নিয়ে সাঁতারু বানাতে চাই। যারা রাস্তায় ভিক্ষা করছে, যারা ১০টি টাকা পাওয়ার আশায় সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকে। ওখানে অনেক ছেলে আছে যারে উচ্চতা ভালো। যদি একজনকেও আনতে পারি সেটাই হবে আমাদের সাফল্য। তাকে সাঁতার জানার রকার নেই, আমরাই তাকে সাঁতারু বানাবো।
আমাদের যেহেতু থাকার জায়গায় ক্রীড়াপল্লী আছে, সেখানেই তারা থাকবে, খাবে ও ট্রেনিং করবে। আমরা সাঁতারুদের উচ্চতাকেই বেশি গুরুত্ব দেবো। এটা কেবল পথশিশুদের ক্ষেত্রেই নয়, সর্বত্র। কারণ, ওয়াটাপোলোতে উচ্চতার তেমন রকার নেই। তবে সুইমিংয়ের ক্ষেত্রে এটা দরকার আছে। আমরা যে প্রতিভা অন্বেষণে যাচ্ছি সেখানেও এই উচ্চতাকে গুরুত্ব দেবো।
চেষ্টা করবো মেয়েদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪, ৫, ৬ ইঞ্চির মধ্যে নিতে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে উচ্চতা হবে ৬ ফুট এবং ৬ ফুটবল ১ বা ২ ইঞ্চি। সাঁতারুর উচ্চতা বেশি হলে টেকনিক্যালি একটা সুবিধা আছে। ২০১০ এসএ গেমসে মাহফুজা খাতুন শিলা কম লম্বার কারণে স্বর্ণের সুযোগ নষ্ট করেছে। বডি এগিয়ে থাকলেও পারেনি। শ্রীলংকার মেয়েটা অনেক লম্বা ছিল। সে হাত এগিয়ে দিয়ে ফিনিসিংবোর্ড স্পর্শ করেছে। তাই বলছি উচ্চতা একটা বড় বিষয়।
জাগো নিউজ: আগের মেয়াদে এমন কি করতে পারেননি যা এবার করতে চান?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: আগে যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন অনেক কিছুই করতে পারিনি রাজনৈতিক কারণে। বড় পরিকল্পনার মধ্যে ছিল সাঁতারুরে দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলনের মধ্যে রাখা। ওই সময় আবাসন ব্যবস্থা তেমন ভালো ছিল না। ডরমেটরিতে আমরা নিজেরে উদ্যোগে থাকার জন্য সবকিছু কিনেছিলাম। আমাদের দায়িত্ব থেকে বের হয়ে আসার পর দ্বিতীয় ক্রীড়াপল্লী হয়েছে। এখন ওখানে রেখেই ক্যাম্প পরিচালনা করা যাবে।
জাগো নিউজ: দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিকখ্যাত এসএ গেমস নিয়ে কি পরিকল্পনা করতে যাচ্ছেন?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: আমাদের সাফে রেজাল্ট আছে। হয়তো কোনো বছর পেয়েছি, কোনো বছর পাইনি। আমাদের লক্ষ্য এখন সাফ না। আমাদের চোখ আরো ওপরে। বিশেষ করে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও এশিয়ান গেমস। সেখানে কী পাবো কী পাবো না সেটা পরের বিষয়। সেখানে যদি টাইমিং উন্নতি করা যায় সেটাই হবে প্রাপ্তি। যদি বলেন আজকেই সাঁতারুদের এশিয়ান লেভেলে আনতে হবে তাহলে পারবো না। সময় দিতে হবে এক বছর বা দুই বছর। বিদেশি কোচ চলে আসবেন। তাদের নিয়ে অনুশীলন শুরু করতে পারলে আমাদের খেলোয়াড়দের টুর্নামেন্টে পাঠাতে পারবো।
জাগো নিউজ: প্রথম সভার বিশেষ কোনো এজেন্ডা আছে?
মাহবুবুর রহমান শাহীন: প্রথম সভায় আমাদের একটা এজেন্ডা আছে প্রতিভা অন্বেষণের বিষয়ে। আমাদের দেশে যারা যোগ্য কোচ আছে তাদের নিয়ে এই প্রতিভা অন্বেষণ হবে। স্থানীয় কোচরাও অনেক ভালো। তবে আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়ে আমাদের অনেক সিনিয়র কোচের ধারণা নেই। যাদের বাছাই করা হবে তাদের অনুশীলন করানো হবে বিদেশি কোচদের দিয়ে।
আমি যে কাজগুলো করতে চাই সেটা হলো এখন সিনিয়র সাঁতারু কম আছে দেশে। দুই তিন বছর পর সিনিয়র সাঁতারুই থাকবে না। যারা আছেন তারে বয়স হয়ে যাবে। তাই আমার প্রথম লক্ষ্য হলো সাঁতারু তৈরি করা। আমি হয়তো থাকবো না। তবে তৈরি করে দিতে পারলে দুই বছর পর রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো প্রতিভা অন্বেষণ থেকে খুঁজে পাওয়া সাঁতারুরে দুই ধাপে ট্রেনিং করাবো। প্রথমত সিনিয়র কোচরে দিয়ে, তারপরও বিদেশি কোচ দিয়ে। তারপর এখান থেকে যারা ভালো সাঁতারু বের হবে তাদের বিদেশে পাঠিয়ে ট্রেনিং করানোর চেষ্টা করবো, টুর্নামেন্টে খেলাবো। আবার বলছি, আমাদের লক্ষ্য এখন সাফের বাইরে।
জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।
মাহবুবুর রহমান শাহীন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/আইএইচএস/