জেসআপ মুট কোর্টে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় সাফল্য
ফিলিপ সি. জেসআপ আন্তর্জাতিক আইন মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় সফলতা অর্জন করেছেন প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফিলিপ সি. জেসআপ আন্তর্জাতিক আইন মুট কোর্ট প্রতিযোগিতা। ইন্টারন্যাশনাল ল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইএলএসএ) এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এ বছর ৬-৮ ফেব্রুয়ারি ৯ম বাংলাদেশ বাছাই পর্বে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির আইন ও বিচার বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেই তাদের মেধা, পরিশ্রম ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে। তাদের এই অভূতপূর্ব সাফল্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশের আইন শিক্ষার ক্ষেত্রেও একটি উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে।
এই প্রতিযোগিতা আইন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ, যেখানে তারা আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কিত তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে। এটি তাদের আইন সম্পর্কিত সমস্যা বিশ্লেষণ, যুক্তিতর্ক প্রস্তুত এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুশীলন করার একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, যা তাদের মধ্যে একটি বৈশ্বিক যোগাযোগ এবং সহযোগিতার সেতু স্থাপন করে। এ বছর বাংলাদেশ বাছাই পর্বে দেশের ৪৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির আইন ও বিচার বিভাগের তিন জন শিক্ষার্থী - মো. ইফাজ খান, শরিফ গাজী এবং মো. মাহবুবুর রহমান সোহাগ এই বছর বাংলাদেশ বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করেন। তাদের এই অংশগ্রহণ আরও একটি কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, তারা সকলেই এলএলবি প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। আইন শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আন্তর্জাতিক আইনের মতো একটি জটিল বিষয়ে অংশগ্রহণ এবং সাফল্য অর্জন করা তাদের অদম্য স্পৃহা এবং মেধার পরিচয় বহন করে। সাধারণত, শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু সেমিস্টার অধ্যয়ন করার পর এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, যেখানে তারা আইন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে। কিন্তু প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির এই তিন শিক্ষার্থী তাদের প্রথম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে গর্বিত করেছে।
শুধু অংশগ্রহণই নয়, এই শিক্ষার্থীরা মেমোরিয়াল সাবমিশনেও তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। মেমোরিয়াল সাবমিশন হলো একটি লিখিত আইনি যুক্তিতর্ক, যা প্রতিযোগী দলগুলোকে বিচারকদের কাছে তাদের অবস্থান সমর্থন করার জন্য জমা দিতে হয়। এই সাবমিশন আইন শিক্ষার্থীদের গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং লেখার দক্ষতার একটি পরীক্ষা। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এই ক্ষেত্রেও তাদের সেরাটা দিয়েছেন। তারা সামগ্রিক মেমোরিয়াল সাবমিশনে তৃতীয়, রেসপন্ডেন্ট মেমোরিয়ালে তৃতীয় এবং আবেদনকারী মেমোরিয়ালে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন। এই অর্জন তাদের কঠোর পরিশ্রম, গবেষণা এবং আইনি দক্ষতার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ।
এই সাফল্যের পেছনে তাদের শিক্ষকমণ্ডলীর অবদানও অনস্বীকার্য। বিশেষ করে, তাদের কোচ প্রভাষক মিস সাল সাবিল চৌধুরী, যিনি নিজেও একজন প্রাক্তন জেসআপ চ্যাম্পিয়ন এবং ২০২১ সালের ৫ম বাংলাদেশ বাছাই পর্বের সেরা মুটার ছিলেন, তার দক্ষ নির্দেশনায় শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা অর্জন করেছে। মিস সাল সাবিল চৌধুরী শিক্ষার্থীদের শুধু আইন সম্পর্কিত জ্ঞানই নয়, বরং তাদের মানসিক প্রস্তুতি এবং যোগাযোগের দক্ষতা উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ ছাড়াও, বিভাগীয় প্রধান মো. দিদারুল ইসলামে ভূইয়ার সহযোগিতা শিক্ষার্থীদের এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তার প্রেরণা এবং নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে।
এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান। সমাপনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক গুডমুন্ডুর এইরিকসন এবং ব্যারিস্টার সারা হোসেনের উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে আরও মহিমান্বিত করে তুলেছিল। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় প্রেরণা ছিল এবং তাদের ভবিষ্যতে আরও ভালো করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে।
প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের এই সাফল্য শুধু তাদের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও একটি বড় অর্জন। এই সাফল্য প্রমাণ করে যে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি আইন শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি উচ্চ মান বজায় রেখেছে এবং তাদের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এই সাফল্য অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও অনুপ্রাণিত করবে এবং তাদের ভবিষ্যতে আরও ভালো করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেসআপ বাংলাদেশ এবং সকল স্পন্সরদের এই ধরনের একটি মঞ্চ তৈরির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে, যা ভবিষ্যৎ আইনজীবীদের আইন ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক আইন সমর্থনকে উৎসাহিত করে।