জোটবদ্ধ নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ এনসিপির

7 hours ago 4

নির্বাচনে জোটবদ্ধ হতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে একত্রে একটি নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পক্ষে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বরাবর লেখা এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানিয়েছেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।

এতে আইন উপদেষ্টাকে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনায় বিএনপিকে দেওয়া আপনার ব্যক্তিগত আশ্বাস ও অবস্থান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, একজন উপদেষ্টা হিসেবে আপনি রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ আইন উপদেষ্টা, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন। নির্বাচনী আইন সংশোধনের মতো বিষয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে এককভাবে আশ্বাস দেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পদের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার পরিপন্থি।

আখতার হোসেন বলেন, আইন সংশোধনের মতো সিদ্ধান্ত কোনো একক ব্যক্তির নয়। এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক, পরামর্শনির্ভর ও জনস্বার্থমূলক প্রক্রিয়া। সরকারের পক্ষে এমন কোনো আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি দেওয়া যা একটি নির্দিষ্ট দলের দাবির সঙ্গে একমত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়, তা আপনার প্রশাসনের প্রতি জনআস্থাকে দুর্বল করবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতার ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে আপনি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের বিপরীতে যে অবস্থান নিয়েছেন তা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি।

এনসিপির সদস্যসচিব জানান, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনব্যবস্থার উদ্দেশ্যই হলো দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, আর্থিক স্বচ্ছতা ও নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। কিন্তু যখন নিবন্ধিত দল অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করে, তখন তারা নিজেদের নিবন্ধনের দায়বদ্ধতা থেকে কার্যত অব্যাহতি পায়। এতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নিজস্ব অর্থই হারিয়ে যায়। একদিকে দলটি আলাদা পরিচয় দাবি করে, অন্যদিকে নির্বাচনে অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করে। এটি আইনি বৈপরীত্য সৃষ্টি করে, এবং নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতাকে অকার্যকর করে তোলে।

আরও পড়ুন
শাপলা কলিতেই ‘থিতু’ হচ্ছে এনসিপি, ভোটে ‘একলা চলার’ ইঙ্গিত
আইন উপদেষ্টাকে নাসীরুদ্দীন: রাষ্ট্রকে গোপন প্রেমের কারখানা বানাবেন না
৩০০ আসন ধরে এগোচ্ছি, প্রার্থী তালিকা এ মাসেই দিতে পারি: নাহিদ

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি হলো রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি। যে দলের নামে জনগণ ভোট দেন, সেই দলই নির্বাচনের পর জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। কিন্তু যখন একাধিক নিবন্ধিত দল বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করে, তখন ভোটার জানেন না তিনি আসলে কাকে ভোট দিচ্ছেন। ভোটার যে রাজনৈতিক দর্শন, নীতি বা নেতৃত্বকে সমর্থন জানাতে চান, তা অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। এর ফলে ভোটার-দায়বদ্ধতার সম্পর্ক ভেঙে যায়।

এই বিধান কৃত্রিম বহুদলীয়তা সৃষ্টি করে এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে কাঠামোগত সুবিধা দেয়। বড় দলগুলো নিজস্ব স্বার্থে ছোট ছোট ‘প্রক্সি দল’ তৈরি করে তাদের প্রতীকে নির্বাচন করায়। পরে এই ছোট দলগুলো সংসদে বা বিভিন্ন কমিটিতে কৃত্রিম ভিন্নমত নিয়ে হাজির হয়ে বাস্তবে সেই বড় দলেরই বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করে। এতে গণপরিসরে মতের বৈচিত্র্য নষ্ট হয়, জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া বিকৃত হয় এবং নির্বাচনের পরবর্তী নীতিনির্ধারণে কৃত্রিম বহুমতের জন্ম হয়, বলা হয় চিঠিতে।

আখতার হোসেন বলেন, আমরা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থানের সঙ্গে একমত যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন যে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। এছাড়া কোনো যৌথ জোট বা জোটনির্ভর প্রার্থী মনোনয়নের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন করতে হবে।

এ দুটি বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এমন সংশোধন রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সংকুচিত করবে না, বরং প্রকৃত গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করবে। কারণ এতে প্রতিটি দলকে নিজের নাম, নীতি ও নেতৃত্বের দায় নিজেকেই নিতে হবে। এটি ভোটারের অধিকার, রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা এবং সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম শর্ত।

একিউএফ/জিকেএস

Read Entire Article