জ্বর হলে জিভের স্বাদ চলে যাওয়া হতে পারে বড় রোগের লক্ষণ

13 hours ago 7
খাবারের স্বাদ আমাদের জীবনের এক বড় আনন্দ। শুধু পেট ভরানোর জন্য নয়, ভালো খাবার আমাদের মনও ভালো করে। কিন্তু কখনো এমন হয়, হঠাৎ করে আপনার পছন্দের খাবারও একেবারে ফ্যাকাসে লাগে—মনে হয়, কোনো স্বাদই নেই! এ অবস্থাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ‘এজিউসিয়া’ (Ageusia)—মানে, স্বাদ চলে যাওয়া। এটা হতে পারে সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের কারণে, আবার অনেক সময় এটা ইঙ্গিত দেয় শরীরের ভেতরের অন্য কোনো সমস্যার। চলুন জেনে নিই, কী কী কারণে জিভের স্বাদ হারিয়ে যেতে পারে এবং কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। স্বাদ হারানোর ১০টি সাধারণ কারণ ১. কভিড-১৯ সংক্রমণ করোনার সময় অনেকেই স্বাদ ও গন্ধ হারিয়েছেন—এটা ভাইরাসের একটা বড় লক্ষণ। ভাইরাসটি জিভ ও নাকের সেলগুলোকে দুর্বল করে ফেলে। যদিও বেশিরভাগ মানুষ ২ সপ্তাহের মধ্যেই আবার স্বাদ ফিরে পান। ২. ঠান্ডা, কাশি বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ সাধারণ ঠান্ডা-সর্দির সময় নাক বন্ধ থাকে, ফলে গন্ধ ও স্বাদ একসঙ্গে কমে যায়। কিন্তু ইনফেকশন সেরে গেলে সাধারণত স্বাদ ফিরে আসে। ৩. অ্যালার্জি বা সাইনাসের সমস্যা নাক বন্ধ থাকলে বা সাইনাসে পানি জমলে গন্ধ ও স্বাদ বুঝতে সমস্যা হয়। অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি সাইনাসে ভোগেন—তাদের জন্য চিকিৎসা নিয়ে নাক পরিষ্কার রাখা জরুরি। ৪. নাকের পলিপ নাকের ভেতরে ছোট টিউমার বা পলিপ হলে তা গন্ধ ও স্বাদ বাধাগ্রস্ত করে। মাঝে মধ্যে ওষুধে ভালো হয়, আবার কখনো অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। ৫. কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছু ওষুধ যেমন—মানসিক রোগের ওষুধ, প্রেশার কমানোর ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি মুখ শুকিয়ে দেয় বা স্বাদের কোষের কাজ কমিয়ে দেয়। ৬. ক্যান্সারের চিকিৎসা (কেমো বা রেডিওথেরাপি) এই ধরনের চিকিৎসা মুখের স্বাদগ্রহণ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তবে চিকিৎসা শেষে ধীরে ধীরে স্বাদ ফিরে আসে। ৭. জিংকের অভাব (দস্তার ঘাটতি) জিংক আমাদের স্বাদের কোষের জন্য খুব জরুরি। জিংকের অভাবে জিভের স্বাদ কমে যেতে পারে। মাংস, ডিম, বাদাম, সিরিয়াল ও সবজিতে জিংক পাওয়া যায়। ৮. মুখের বা দাঁতের সমস্যা দাঁতের ব্যথা, মাড়ির রোগ, মুখে ইনফেকশন থাকলে জিভে স্বাদ কমে যেতে পারে। তাই মুখ পরিষ্কার রাখা এবং নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করা দরকার। ৯. বয়স ও স্নায়বিক রোগ বয়স বাড়লে স্বাদ একটু কমতে পারে, তবে একেবারে চলে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। আলঝেইমার বা পারকিনসনের মতো রোগেও এই সমস্যা হতে পারে। ১০. মাথায় আঘাত বা রাসায়নিক পদার্থ মাথায় আঘাত পেলে মস্তিষ্কের স্বাদ বোঝার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার কিছু রাসায়নিক, যেমন কীটনাশক, ধূমপান বা অতিরিক্ত অ্যালকোহলও এই সমস্যার কারণ হতে পারে। আরও পড়ুন : বাসি রুটি-ঘি দিয়ে বানানো যায় স্বাস্থ্যকর সকালের নাস্তা কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন? - যদি হঠাৎ করে জিভে কোনো স্বাদ না পান - যদি দীর্ঘদিন ধরে খাবার একরকম লাগছে - যদি অন্য লক্ষণ যেমন সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদিও থাকে - এই অবস্থায় দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে তারা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে পারেন। আরও পড়ুন : বয়স্কদের শরীরে তরুণ রক্ত দিলে কী হতে পারে, যা দাবি করা হচ্ছে গবেষণায় স্বাদ ফেরানোর কিছু সহজ উপায় - মূল রোগ বা ইনফেকশন ভালোভাবে চিকিৎসা করুন - প্রচুর পানি পান করুন - মুখ ও দাঁত পরিষ্কার রাখুন - ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন - জিংকযুক্ত খাবার খান - রান্নায় হালকা মসলা ও হার্বস ব্যবহার করুন - ক্যান্সারের রোগীদের জন্য ঠান্ডা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো জিভে স্বাদ না পাওয়া খুব অস্বস্তিকর হলেও, বেশিরভাগ সময়ই এটা সাময়িক। তবে যদি সমস্যাটি হঠাৎ করে হয় বা দীর্ঘদিন থাকে, তাহলে এটাকে অবহেলা করবেন না। কারণ এটি শরীরের কোনো গভীর সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে শুধু খাওয়ার স্বাদই নয়, স্বাস্থ্য সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা ও সঠিক জীবনযাপনই সবচেয়ে জরুরি। সূত্র: হেলথলাইন 
Read Entire Article