জয়টা দেশের মানুষের জন্য অনেক আনন্দ বয়ে আনবে: শান্ত

1 month ago 10

জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত একটা অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে পুরো দেশ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার উদ্ভবের সঙ্গে যোগ হয়েছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা।

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের জন্য খানিকটা আনন্দ বয়ে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সেটা পেরেছেন। পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে টেস্টে ধবলধোলই করেছে নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনী।

আজ রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজ জয়ের পর মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সে কথাই জানালেন। জানালেন, এ জয়টা দেশের মানুষকে স্বস্তি আর আনন্দ এনে দেবে।

তিনি বলেন, ‘আমি সেদিনও (সিরিজ শুরুর আগে) বলেছিলাম কথাটা। আমার মনে হয়, এই জয়টা দেশের মানুষের জন্য অনেক আনন্দ বয়ে আনবে। কারণ যেভাবে গত কিছুদিন ধরে বন্যা বলেন, আন্দোলনটা বলেন..., অনেক মানুষের অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে আমরা যেভাবে ম্যাচটা খেললাম, আমার মনে হয় যে, একটু হলেও তাদের মুখে হাসি ফুটবে।’

‘আমরা সবাই জানি, আমাদের দেশের মানুষ ক্রিকেটের জন্য কতটা পাগল। আমরা ম্যাচ হারলেও সবাই যেভাবে আমাদের সমর্থন করে। তাই আমাদের ওটাই চেষ্টা ছিল, কিভাবে দেশের মানুষকে আমরা কিছু দিতে পারি। আমার মনে হয়, আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি।’

কোন অনুপ্রেরণার বদৌলতে এমন বিজয় অর্জন সম্ভব হলো? শান্ত জানালেন, ঘুরে দাঁড়াতে পারবো - এ বিশ্বাস ছিল সবার মধ্যে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বিশ্বাসটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যেকটা ক্রিকেটার বিশ্বাস করে আমরা যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়াতে পারি। আপনারা জানেন, মিরাজ ৮ নম্বরে ব্যাটিং করে। আমাদের যে ব্যাটিং গভীরতাটা আছে, আমরা বিশ্বাস করি যে, কেউ যদি থিতু হতে পারে, বড় স্কোর করবে। তো প্রত্যেকের মধ্যে যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়ানোর এই বিশ্বাস থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ার পরও বিশ্বাস হারাননি তারা। শান্ত বলেন, ‘আগেও যেটা বললাম, ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ার পরও আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম। ব্যাটিংয়ে যাওয়ার আগে সে (মিরাজ) একটা কথা বলেছিল যে, আমি আর লিটন দলের জন্য কাজটা করে ফেলব। তারা আগেও করেছে। তবে এটি খুবই প্রশংসনীয়। তাদের যে বিশ্বাস ছিল এবং ড্রেসিং রুমেও (যে বিশ্বাস ছিল) এবার, খুব খুব ভিন্ন ছিল।’

তবে একটুও যে নার্ভাস ছিলেন না, তা নয়। শান্তর বক্তব্য, ‘মিথ্যা বলব না, ওই সময় আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম এবং কিছু নার্ভাসও ছিলাম। তবে মিরাজ ও লিটন যেভাবে ব্যাটিং করেছে, ১০-১৫ ওভার পর আমরা ভালো অবস্থানে চলে যাই এবং বিশ্বাস করতে শুরু করি যে, তারা আমাদের ভালো জায়গায় নিয়ে যাবে।’

নিজের আবেগ-অনুভূতি সম্পর্কে শান্ত বলেন, ‘ইমোশনটা আসলে মুখে বলা কঠিন হবে। কারণ এই ধরনের অর্জন আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা মুহুর্তগুলোর একটি।’

সাকিব-মুশফিকের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই যখন ব্যাটিং করছিলেন, ড্রেসিংরুম থেকে আমরা সবাই চাচ্ছিলাম, যেন উনারা দুজনই ম্যাচটা শেষ করেন। এত বছর ধরে উনারা বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। কত ম্যাচ জিতিয়েছেন। কিন্তু এই ধরনের ম্যাচ জেতা অনেক স্পেশাল। আমরা সবাই তাই চাচ্ছিলাম। আমরা সবাই অনেক খুশি।’

প্রধান উপদেষ্ঠার ফোন করা সম্পর্কে শান্তর বক্তব্য, ‘হ্যাঁ। ড. ইউনুস স্যার কল করেছিলেন। তিনি আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন দলের সবাইকে। উনারা অনেক খুশি এবং দেশে ফিরলে দেখা করতে চেয়েছেন দলের সবার সঙ্গে।’

নিজেদের চেষ্টা, প্রস্তুতি নিয়ে শান্ত বলেন, ‘গত এক-দেড় মাস সবাই অনেক স্ট্রাগল করেছে। তবে আমরা জানি, ক্রিকেট আমাদের দেশের জন্য খুবই ইমোশনাল বিষয়। তাই আমি আশা করি, এসব ম্যাচ জেতা, সিরিজ জেতায় তাদের মুখে কিছুটা হাসি ফুটবে। আমরাও খুব খুশি যে, আমাদের দর্শকরা তাদের মুখে কিছুটা আনন্দ পেয়েছে।’

রাওয়ালপিন্ডির কন্ডিশন ধরতে পারাটাও অনেক বড় বিষয় ছিল বলে মন্তব্য করেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা খুব ভালোভাবে কন্ডিশনটা পড়তে পেরেছি। সব বোলার তাদের কাজটা করেছে। উইকেটে কিছুটা মুভমেন্ট ছিল। তাই এক-দুই ওভার নয়, লম্বা সময় ওই জায়গায় বোলিংয়ের চেষ্টা করেছি আমরা। ধৈর্যের ব্যাপারে অনেক কথা বলেছি আমরা। বোলাররা কথোর পরিশ্রম করেছে। যে কারণে ফল পেয়েছে।’

আইএইচএস/

Read Entire Article