জয়পুরহাটে দুই মাসে ৫৭ ট্রান্সফরমার চুরি, বিপাকে কৃষকরা

6 hours ago 5

জয়পুরহাটে গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি থামছেই না। জেলা জুড়ে গত বছরের নভেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৭টি ট্রান্সফরমার ও ১০টি মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

এর মধ্য কালাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ট্রান্সফরমার চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। মিটার চুরির স্থানে চোর চক্রটি চিরকুটে মোবাইল ও বিকাশ নম্বর লিখে ফেলে রাখছে। ওই নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশে টাকা দেওয়ার পর চুরি যাওয়া মিটার ফেরত পাওয়া যাচ্ছে। তবে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে চিত্রটি একেবারেই উল্টো। চোরেরা ট্রান্সফরমারের তামার তার খুলে নিয়ে বোতল রেখে যাচ্ছে। ফলে ট্রান্সফরমার কোনো কাজে আসছে না। এতে চুরি যাওয়া গভীর নলকূপের মালিকদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

চোরদের শনাক্ত কঠিন হলেও মোবাইল ও বিকাশ নম্বরের সূত্র ধরে চক্রটিকে শনাক্ত করা অনেকটাই সহজ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।

এমনকি থানায় এজাহারের আবেদন করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয় না। ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, কৃষকদের মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করতে হয়েছে।

তবে পুলিশ বলছে, চুরি রোধে তারা তৎপর। এরই মধ্যে চোর চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয়ে দেওয়া তথ্যানুযায়ী নভেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৭টি ট্রান্সফরমার ও ১০টি মিটার চুরি হয়। এরমধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৩টি ট্রান্সফরমার, ১টি মিটার, পাঁচবিবি উপজেলায় ১৫টি ট্রান্সফরমার, আক্কেলপুর উপজেলায় ৬টি ট্রান্সফরমার, ৫টি মিটার, কালাই উপজেলায় ২৩টি ট্রান্সফরমার, ৩টি মিটার, ক্ষেতলাল উপজেলায় ১০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, একটি গভীর নলকূপে ১০ কেভির তিনটি ট্রান্সফরমার থাকে। প্রতিটির দাম ৮০ হাজার টাকা। ১০ কেভির তিনটি ট্রান্সফরমারের দাম ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তিন ফেজের মিটারের দাম সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। চুরি যাওয়া ৫৭টি ট্রান্সফরমারের দাম হবে প্রায় ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

৫ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নে চারটি গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে চিরকুটে মোবাইল নম্বর লিখে রেখে যায় চক্রটি। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে চক্রটি মিটার প্রতি বিকাশে ১০-২০ হাজার টাকা দাবি করে।

ভুক্তভোগী কালাই উপজেলার গুডুম্বা গ্রামের গভীর নলকূপের মালিক আবু কালাম বলেন, আমার নলকূপের ঘরে দুজন নৈশপ্রহরী ছিলেন। রাতে বাইরে থেকে দরজা আটকিয়ে মিটার খুলে নিয়েছে। মিটারের স্থানে একটি চিরকুটে মোবাইল নম্বর পেয়েছি। ওই নম্বরে কল করেছিলাম। তারা আমার কাছে বিকাশে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে দর কষাকষি করে ১০ হাজার টাকায় রফা হয়। বিকাশে দশ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। তবে মিটার ফেরত পাইনি। তিনদিন পর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে মিটার কিনেছি। এর আগে আমার নলকূপের মিটার চুরি হয়েছিল। তখন চিরকুটে লেখা নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশে ৬ হাজার টাকা পাঠিয়ে মিটার ফেরত পেয়েছিলাম।

অপরদিকে ১৩ ডিসেম্বর রাতে সদর উপজেলার কেন্দুল গ্রামে ফসলি মাঠের শাহিনুর রহমানের গভীর নলকূপের ১০ কেভির তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এ ঘটনার পর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।

শাহিনুর রহমান বলেন, ট্রান্সফরমার চোর শনাক্তে থানা পুলিশের তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। আবার পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুতে এসে কোনো মালামাল পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, সম্প্রতি একটি নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরির চেষ্টার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। দুজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। নলকূপের মালিকদের নিজ উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পুলিশ চক্রটি ধরতে তৎপর।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু উমাম মো. মাহবুবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি হচ্ছে। নভেম্বর থেকে চলতি মাসের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলাজুড়ে ৫৭টি ট্রান্সফরমার ও ১০টি মিটার চুরি হয়েছে। পুলিশ চোর চক্রকে ধরতে তৎপর। চুরি রোধে সমিতির পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে নিজ উদ্যোগে গভীর নলকূপের মালিকদের পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করা হয়েছে।

আল মামুন/জেডএইচ/জেআইএম

Read Entire Article