দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে শিকলে বন্দি জীবনযাপন করছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার একসময়ের মেধাবী ছাত্র কোরআনের হাফেজ রুহুল আমিন। ২০১০ সালের দাখিল পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুদিন পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রুহুল আমিন। সেই থেকে চলছে তার শিকলে বন্দী জীবন। ফল বের হলে দেখা যায় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তিনি।
স্থানীয় মাঝিনা মৌজা আহমেদিয়া ফাজিল মাদরাসায় হাফেজ হয়েছিলেন রুহুল আমিন। ২০০৬ সালে জেলা পর্যায়ে জাতীয় শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আজানে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন তিনি। দাখিল পরীক্ষার শেষের দিকে কিছুটা অসুস্থতা বোধ করেন। পরীক্ষা শেষে ডাক্তারও দেখানোরও পরিকল্পনা ছিল পরিবারের। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুদিন পর হঠাৎ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন তিনি। অনেক সময় নানানভাবে বিড়ম্বনায় ফেলেন স্থানীয়দের। উপায়ন্তর না দেখে পরিবারের লোকজন একটি ঘরের ভেতরে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখেন তাকে। পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না তার।
রুহুল আমিন রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর দারকাবর টেক এলাকার হতদরিদ্র ইদ্রিস আলীর ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট রুহুল আমিন। বড় ভাই সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক, মেজো ভাই রংমিস্ত্রি ও সেজো ভাই পেশায় স্যানেটারি মিস্ত্রি। অসুস্থ বাবা কোনো কাজ করতে পারেন না। ফলে অভাব অনটনের সংসারে রুহুল আমিনের চিকিৎসা চলছে না।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজ দেখিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছেন না।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে পরিবারের লোকজন এলাকাবাসীর সহায়তায় রুহুল আমিনকে রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। ২০২১ সাল পর্যন্ত কয়েকবার তাকে সেখানে ডাক্তার দেখানো হয়। সর্বশেষ ২ মাস সেখানে ভর্তি রাখা হয়। এসময় অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু আর্থিক সংকটে তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। বর্তমানে মাঝেমধ্যে কিছুটা স্বাভাবিক থাকেন তখন ঘরের সামনে বসে সময় পার করে রুহুল আমিন। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন। কোরআনের আয়াত শোনান। অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে ফের পায়ে শিকল বেঁধে তালাবদ্ধ করে ঘরে আটকে রাখা হয়।
রুহুল আমিনের বাবা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমার রুহুল আমিন বড় মেধাবী ছিল। অর্থের অভাবে আমার কোরআনে হাফেজ পোলাডারে চিকিৎসা করাইতে পারতাছি না। টাকার ব্যবস্থা হইলে আমার পোলারে পর্যাপ্ত চিকিৎসা করতে পারলে সুস্থ হইয়া যাইতো।’
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বেলায়াত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা জীবনে ছেলেটা খুবই মেধাবী ছিল। কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। দাখিল পরীক্ষা শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লেও দাখিল পরীক্ষার রেজাল্ট সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তার পরিবার অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। উন্নত চিকিৎসা পেলে ছেলেটা হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতো।’
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হলাম। এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
এমএন/এমএস