বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মহসীন চৌধুরী রানার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে কমিটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের লোকজনকেও উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিতে স্থান দিচ্ছেন তিনি। কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অন্য নেতাদের মতও তোয়াক্কা করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন নেতারা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহসীন চৌধুরী রানা।
জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর আট সদস্যের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ওই কমিটিতে মহসীন চৌধুরী রানাকে আহ্বায়ক এবং মীর জাকের আহমেদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্ব নিয়েই গত ১ অক্টোবর আওতাধীন চারটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে দক্ষিণ জেলা কমিটি। এর মধ্যে পটিয়া উপজেলা কমিটিতে আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবসহ স্থান পেয়েছেন ৫১ জন।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব ফজল কাদের (হলুদ তীর চিহ্নিত)
এছাড়া পটিয়া পৌরসভায় ৩১ সদস্য, চন্দনাইশ উপজেলায় ৩১ সদস্য, বোয়ালখালী উপজেলায় ৭১ সদস্য, বোয়ালখালী পৌরসভায় ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিন দুই সদস্য বিশিষ্ট বাশঁখালী উপজেলা এবং দুই সদস্য বিশিষ্ট বাঁশখালী পৌরসভা কমিটি ঘোষণা দেয় দক্ষিণ জেলা কৃষক দল।
কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে আহ্বায়ক মহসীন চৌধুরী রানা এবং সদস্য সচিব মীর জাকের আহমদ দক্ষিণ জেলা কমিটির অন্য যুগ্ম আহ্বায়কদের সম্মতি নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি আহ্বায়ক মহসীন চৌধুরী রানার বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে আহ্বায়ক কমিটির কারও মতামত নেওয়া হয়নি এবং স্বেচ্ছাচারী কমিটি ঘোষণার অভিযোগ তুলে দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক কমিটির তিন যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, আবদুল করিম ও মো. আরিফুল ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
- আরও পড়ুন
- ছাত্রলীগের পদ পেয়েই কোটিপতি হন কাজী বাবলু
- নতুন বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে
- দলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে টিভিতে টকশো, নেতারা বলছেন সময় বদলেছে
তারা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের আট সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কারও সঙ্গে যোগাযোগ ও পরামর্শ না করে স্বেচ্ছাচারিতা ও একতরফাভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন কিছু লোক দিয়ে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে তারা এরই মধ্যে ঘোষিত উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিগুলো বাতিলের দাবি জানান।
কেন্দ্রে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড সদস্য হাজী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে শুধু আহ্বায়ক-সদস্য সচিব মিলে কয়েকটি উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি দিয়েছেন। এসব কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে আহ্বায়ক মহসীন চৌধুরী রানার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।’
বাঁশখালী পৌর কৃষক দলের আহ্বায়ক প্রত্যাশী ছিলেন দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সাবেক সদস্য মো. শোয়েব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিগত ১৫ বছর মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। সব সময় রাজপথে ছিলাম। কিন্তু বাঁশখালী পৌরসভা কৃষক দলের যে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক শোয়াইবুল ইসলাম চৌধুরী কখনো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। উল্টো বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন। গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নির্বাচনী প্রচারণাতেও অংশ নিয়েছিল।’
‘এছাড়া উপজেলা কৃষক দলের যে কমিটি দেওয়া হয়েছে, সেই কমিটির সদস্য সচিব ফজল কাদেরও বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। চাম্বল ইউনিয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের দিন উদযাপন অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছিলেন।’ বলেন মো. শোয়েব।
শোয়েব আরও বলেন, ‘কমিটি দেওয়ার জন্য দক্ষিণ জেলা কমিটির আহ্বায়ক মহসীন চৌধুরী রানা চট্টগ্রামের রহমান বোর্ডিংয়ে বসে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমান ও সিনিয়র সদস্য জাফর আহমদের সামনে মহসীন চৌধুরী রানাকে টাকা দিয়েছিলাম। বিষয়টি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও অবগত। এখন বেশি টাকা পেয়ে আমাদের বাদ দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে।’
দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সাবেক সিনিয়র সদস্য জাফর আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মহসীন চৌধুরী রানাকে টাকা দিতে আমরা শোয়েবকে বলেছিলাম।’
সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহমান বলেন, ‘কমিটি দেওয়ার জন্য অনেকের কাছ থেকে মহসীন চৌধুরী রানা টাকা নিয়েছেন। বাঁশখালীর শোয়েবও আমার সামনে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু পরে কমিটিতে অন্যদের দিয়েছেন।’
- আরও পড়ুন
- বেপরোয়া ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা
- কথায় কথায় ‘গুলি ছোড়েন’ চট্টগ্রামের সাজ্জাদ
- তিন জেলায় কৃষকদলের নতুন কমিটি
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ দৌলতী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মহসিন চৌধুরী রানার বিরুদ্ধে কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আমার বাড়ি পটিয়ায়। কৃষক দল পটিয়া উপজেলা কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে আমার মতামতও নেওয়া হয়নি। বাঁশখালীর কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি।’
বাঁশখালী পৌরসভা কৃষক দলের আহ্বায়ক শোয়াইবুল ইসলাম চৌধুরী (গোলাপি দাগ দিয়ে চিহ্নিত)
তবে মহসীন চৌধুরী রানা কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত সময়ে দলের দুঃসময়ে যাদের রাজপথে পাওয়া যায়নি, এখন সুসময় আসার কারণে তারা কমিটি দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। আমরা চার উপজেলা-পৌরসভায় কমিটি দিয়েছি। বাঁশখালী পৌরসভায় শুধু দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছি।’
সদ্য ঘোষিত বাঁশখালী পৌরসভা কমিটির আহ্বায়কের বিরুদ্ধে বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে জানতে চাইলে রানা বলেন, ‘বাঁশখালীতে বিগত দুঃসময়ে লিয়াকত আলীর সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছেন তাদের কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। এখন লিয়াকত আলী বিরোধীরা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।’ ঘোষিত বাঁশখালী পৌর কমিটির আহ্বায়ক আওয়ামী লীগের লোক নন বলেও দাবি করেন তিনি।
বাঁশখালী পৌর কৃষক দলের আহ্বায়ক শোয়াইবুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি না। তোফাইল (আওয়ামী লীগ) আমাদের মেয়র ছিলেন। আমি বাজারে ব্যবসা করি। বিগত উপজেলা নির্বাচনে তোফাইল এসে আমাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে রাস্তায় ছবি তুলেছেন। এটা তাদের (আওয়ামী লীগ) অভ্যাস।’
বাঁশখালী উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব ফজল কাদের বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করিনি। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে আমি দুইবার মেম্বার নির্বাচিত হয়েছি। চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ৭ মার্চের আলোচনায় আমাকে ডেকে নিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানের অনুরোধেই আমি ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।’
এমডিআইএইচ/ইএ/এমএমএআর/জিকেএস