টাকা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাজার থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণ— প্রতিটি ক্ষেত্রেই টাকার ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু মুসলমান হিসেবে আমাদের মনে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন জাগে, ‘টাকায় যদি ছবি থাকে, বিশেষ করে প্রাণীর ছবি বা মানুষের ছবি, তবে তা কি শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ? এমন টাকাকে ব্যবহার করা কিংবা পকেটে নিয়ে নামাজ পড়া কি বৈধ? আবার অনেক সময় টাকায় বিভিন্ন বাণী, দোয়া কিংবা শিক্ষণীয় উপদেশ লেখা থাকে। সেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে?’
এই সব জিজ্ঞাসার জবাব জানতে রাজধানীর জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুস সালাম ঢাকা-এর ফতোয়া বিভাগীয় প্রধান মুফতি আব্দুর রহমান হোসাইনীর সঙ্গে কথা বলেছে কালবেলা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ছবির প্রকৃতি ও বাণীর ধরন অনুযায়ী শরিয়তের বিধান তুলে ধরেছেন।
চলুন, জেনে নিই বিস্তারিত—
টাকায় ছবির ব্যবহার
মুফতি আব্দুর রহমান হোসাইনী বলেন, ‘ছবির দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, কোনো প্রাণীর ছবি। দ্বিতীয়ত, প্রাণী ছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি। প্রাণী ছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি ডিজিটাল হোক কিংবা প্রিন্ট আউট, সর্বাবস্থায় বৈধ। তবে, সেই ছবি ইসলামবিরোধী কোনো কিছু প্রচারের জন্য যেন না হয়।’
‘আর প্রাণীর ছবির ক্ষেত্রে আবার দুটি প্রকার রয়েছে— প্রথমতো ডিজিটাল ছবি, যা মোবাইলে বা যান্ত্রিক উপায়ে কোনো ডিভাইসে সংরক্ষিত থাকে। এমন ছবির ক্ষেত্রে বিশ্বের অধিকাংশ আলেমগণ বৈধতার ফতওয়া দিয়েছেন। তবে ডিজিটাল ছবির ক্ষেত্রেও পর্দাসহ অন্যান্য বিধানাবলী অবশ্যই কার্যকর হবে।’
‘দ্বিতীয়ত, প্রিন্ট আউট ছবি। বিশ্বের প্রায় সব নির্ভরযোগ্য আলেম এ ব্যাপারে একমত যে, প্রিন্ট আউট ছবি হারাম। তবে শরিয়াহসম্মত প্রয়োজন হলে জায়েজ হবে। যেমন পাসপোর্টের জন্য ছবি তোলা, এনআইডি কার্ডের জন্য ছবি তোলা ইত্যাদি। অতএব টাকায় প্রাণীর ছবি দেওয়া হারাম হবে। তবে প্রাণীর ছবি ছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি দেওয়া যাবে।’
টাকায় বাণী ব্যবহার
ইসলামি এই স্কলার বলেন, ‘বাণী ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধান হলো, সুন্দর এবং শিক্ষণীয় বাণী ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে, সেই বাণী অনৈতিক ও অনৈসলামিক কোনো কিছু প্রমোটকারী না হতে হবে।’
টাকায় প্রাণীর ছবি থাকলে সেই টাকা পকেটে নিয়ে কি নামাজ হবে?
মুফতি আব্দুর রহমান আরও বলেন, ‘টাকায় প্রাণীর ছবি থাকলেও সেই টাকা পকেটে নিয়ে নামাজ পড়া যাবে। এতে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না।’
সূত্র
বোখারি : ৫৯৫১, মুসলিম : ২১০৮, আল ফাতহুর রাব্বানি : ১৭/২৭৯, আবু দাউদ : ৪১৫২, নাসায়ি : ২৬১, হুকমুল ইসলাম ফিত তাসবির : পৃ. ১৫, ফিকহুস সিরাহ : পৃ.৩৮০, তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম : ৪/৯৬, শারহুস সিয়ারিল কাবির : ৪/২১৮, রাদ্দুল মুহতার : ১/৬৫০, ফাতাওয়ায়ে উসমানি : ৪/৩৬১-৩৯৬।