• টাকা দিলেই মেলে বিদেশি মদ
• মাদক পরিবহন করছে শিশু-কিশোররা
• মাদক সেবনের পর পর্যটকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে বিরক্ত স্থানীয়রা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ পর্যটন স্পটগুলোতে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মরণনেশা এসব মাদক সেবন করছেন হাওরে হাউজবোট নিয়ে ঘুরতে আসা তরুণ-তরুণীরা। আর বাড়তি টাকার লোভে সীমান্ত দিয়ে আসা এসব মাদক বহন করছে শিশু-কিশোর ও যুবকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওরে অন্যান্য বছর থেকে চলতি মৌসুমে পর্যটকদের চাপ বেশি। এতে প্লাস্টিক ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাওরের জীববৈচিত্র। সেইসঙ্গে মাদক সেবন করে পর্যটকদের উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরায় নষ্ট হচ্ছে হাওরের পরিবেশ।
সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে এসে প্রকাশ্যে ডিঙি নৌকায় বসে মদের বোতল হাতে এক তরুণী রিলস ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে সেটি নিমিষেই ভাইরাল হয়ে যায়। পরে সুনামগঞ্জের সচেতন মহল প্রশ্ন তোলেন সৌন্দর্যময় টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউজবোটে মদের সরবরাহ হয় কীভাবে?
সরেজমিনে পর্যটক বেশে তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী পর্যটন স্পট টাঙ্গুয়ার হাওর, বারিকাটিলা, নীলাদ্রি লেক, লাকমাছড়ায় যান এই প্রতিবেদক। সেখানে যেতেই চোখে পড়ে ভিন্ন এক দৃশ্য। ছোট ছোট শিশুরাও বাড়তি টাকা আয়ের আশায় বিভিন্ন মাদক বহন করছে। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা ক্যামেরার সামনে কিছু না জানালে ক্রেতার ছদ্মবেশ ধারণ করেন প্রতিবেদক। এসময় হাজার টাকার বিনিময়ে ১০ মিনিটেই হাতে চলে আসে বিদেশি ব্র্যান্ডের মদের বোতল। এমনকি রাত হলে নীলাদ্রি লেকসহ পর্যটন স্পটে থাকা হাউজবোটগুলো মদপানের নিরাপদ স্থল হয়ে যায়। অনেক পর্যটক গানের তালে হাতে মদের বোতল নিয়ে নাচতে থাকেন এবং খাওয়া শেষ হলেই সেই বোতল ছুড়ে মারেন হাওরের স্বচ্ছ পানিতে।
সুনামগঞ্জের স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের নজরদারি কম থাকায় সৌন্দর্যমণ্ডিত টাঙ্গুয়ার হাওরে মাদকের তীব্রতা বাড়ছে।
সুনামগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা রাজু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটনের নামে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে যা খুশি হচ্ছে। মদ নিয়ে দিনে-দুপুরে তরুণ-তরুণীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
- আরও পড়ুন-
- টাঙ্গুয়ার হাওরে গাঁজা সেবন, ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড
- নিষেধাজ্ঞা না মেনে চলছে হাউসবোট, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
- টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মানতে হবে ১৩ নির্দেশনা
- পর্যটনের চাপে ‘মৃত্যুমুখে’ টাঙ্গুয়ার হাওর
সুনামগঞ্জ হাওর ও নদীরক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ওবায়দুল হক মিলন জাগো নিউজকে বলেন, একটা সময় এই টাঙ্গুয়ার হাওরে বিভিন্ন ধরনের জীববৈচিত্র্যের দেখা মিলতো। এখন সেগুলো নেই।
তিনি বলেন, সৌন্দর্যময় এই টাঙ্গুয়ার হাওরে দিন দিন অতিথি পাখি কমেছে, আগে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিললেও সেটা এখন নেই। প্রশাসনের নজরদারির অভাব থাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে মদের সয়লাব বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ সচেতন কমিটির (সনাক) সহসভাপতি খলিল রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এই টাঙ্গুয়ার হাওর ঘিরে বর্ষা মৌসুমে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। চাঙ্গা থাকে গ্রামীণ অর্থনীতি। তবে শিশুরা যেভাবে মাদক বহন করছে, আর পর্যটকরা যেভাবে সেবন করছে, প্রশাসনের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জ হাউজবোট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আরাফাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউজবোটে মাদক সেবন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। যারা বোটে বসে মাদক সেবন করতে চায় তাদের বোট থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তবে যেহেতু জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে তরুণ ছেলেরা হাওরে ঘুরতে আসে তাদেরকে কন্ট্রোল করা আমাদের পক্ষে অনেক কষ্টকর হয়।
তিনি বলেন, হাউজবোট যখন পর্যটন এলাকায় যায় তখন শিশুরা বোটের আশপাশে এসে বলতে থাকে মাদক লাগবে কি না। তবে আমরা বোটে থাকা পর্যটকদের সরাসরি জানিয়ে দিই বোটে বসে কোনো ধরনের মাদক সেবন করা যাবে না। যারা আমাদের কথা অমান্য করে আমরা সেখানে থাকা পুলিশ কিংবা আনসারকে বিষয়টি অবগত করি। একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন আগের থেকে হাওরে মাদক সেবন অনেকটা কমে এসেছে। আর আমরাও চাই, হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে জেলায় পর্যটনস্পট গড়ে উঠুক।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে মাদক নির্মূলে পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর কাজ করছে। আশা করি এগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এফএ/এএসএম