টানবাজারে সুতার ব্যবসায় টান

একসময় সুতার জন্য বিখ্যাত ছিল নারায়ণগঞ্জের টানবাজার। এখান থেকে দেশজুড়ে সরবরাহ হতো বিভিন্ন ধরনের সুতা। কিন্তু সুতার ব্যবসা এখন আর ভালো যাচ্ছে না। এক বছরে সুতার ব্যবসা ছেড়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা। ফলে কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন শ্রমিকরা। আর যারা কর্মসংস্থানে রয়েছেন তাদেরও তেমন বেতন মিলছে না। আগে ওভারটাইম পেলেও এখন আর সেই অভারটাইম মিলছে না। অনেক স্পিনিং মিলস উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল বাজারও খারাপ। ভারতসহ বড় দেশগুলো বন্ডের মাধ্যমে মাল ঢুকিয়ে দিচ্ছে; এতে সুতা ব্যবসায় আরও ক্ষতি হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার মালামাল ব্ল্যাকে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আফসানা নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আগে অনেক ওভারটাইম করতাম। এখন ওভারটাইম দূরের কথা কাজই পাই না। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেতে হয়। আগে বেতন পাইতাম ৩০ হাজার টাকা এখন বেতন পাই ১২ হাজার টাকা। যে টাকা পাই সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে না।’ একইভাবে শরীফ নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘১৭ থেকে ১৮ বছর এখানে কর্মরত রয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমাদের যেখানে কর্মরত রয়েছি তার আশপাশ এলাকায় দেড়শত সুতার কারখানা ছিল। বর্তমানে ২০

টানবাজারে সুতার ব্যবসায় টান

একসময় সুতার জন্য বিখ্যাত ছিল নারায়ণগঞ্জের টানবাজার। এখান থেকে দেশজুড়ে সরবরাহ হতো বিভিন্ন ধরনের সুতা। কিন্তু সুতার ব্যবসা এখন আর ভালো যাচ্ছে না। এক বছরে সুতার ব্যবসা ছেড়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা। ফলে কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন শ্রমিকরা।

আর যারা কর্মসংস্থানে রয়েছেন তাদেরও তেমন বেতন মিলছে না। আগে ওভারটাইম পেলেও এখন আর সেই অভারটাইম মিলছে না। অনেক স্পিনিং মিলস উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল বাজারও খারাপ। ভারতসহ বড় দেশগুলো বন্ডের মাধ্যমে মাল ঢুকিয়ে দিচ্ছে; এতে সুতা ব্যবসায় আরও ক্ষতি হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার মালামাল ব্ল্যাকে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

আফসানা নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আগে অনেক ওভারটাইম করতাম। এখন ওভারটাইম দূরের কথা কাজই পাই না। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেতে হয়। আগে বেতন পাইতাম ৩০ হাজার টাকা এখন বেতন পাই ১২ হাজার টাকা। যে টাকা পাই সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে না।’

একইভাবে শরীফ নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘১৭ থেকে ১৮ বছর এখানে কর্মরত রয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমাদের যেখানে কর্মরত রয়েছি তার আশপাশ এলাকায় দেড়শত সুতার কারখানা ছিল। বর্তমানে ২০ টাও নেই। কাজের চাপ অনেক কমে গেছে। কিছুদিন পর কাজ করতে পারবো কিনা তা নিয়েও শঙ্কায় আছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছি। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে কোথায় যাবো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

মেসার্স মুজিব এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার জয়দেব চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বর্তমান দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা অনেক খারাপ যাচ্ছে। ব্যবসার পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণে আমাদের কাজও অনেক কমে গেছে। কাজের চাপ কমে গেছে।’

বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সিরাজুল হক হাওলাদার বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এ ব্যবসা করে আসছি। ব্যস্ততার কারণে আগে দিনরাত গদিতে থাকতাম। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় ক্রেতাদের আনাগোনায় সরগরম থাকতে আমাদের গদিগুলো। এখন গদিতে তেমন আসা হয় না। আসলেও দুপুরের মধ্যে সব ক্রেতা চলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশের অনির্বাচিত সরকার থাকায় বহির্বিশ্বের সহযোগিতা না থাকার কারণে আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। সুতার ব্যবসা গার্মেন্টসের ওপর নির্ভরশীল। অনেক গার্মেন্টস বন্ধ থাকায় এ ব্যবসায় প্রভাব পড়ছে। আমাদের ধারণা নির্বাচিত সরকার আসলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। ৭০ পার্সেন্ট ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন
স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ হতে পারে
মুখ থুবড়ে পড়বে ছোট-মাঝারি পোশাক কারখানা
হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর সিল্ক!

মেসার্স মুজিব এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর ও বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, ‘দুই বছর আগে ব্যবসা ভালো ছিল। বর্তমানে একেবারে লাজুক অবস্থা। এর কারণ বর্তমানে যারা সরকারে আছে উনারা রাজনীতিবিদ না। দেশ পরিচালনা রাজনীতিবিদরাই ভালো বুঝে। তারাই ভালো বুঝে কীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়।’

এক বছরে সুতার ব্যবসা ছেড়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ

আমরা মনে করি এখন যারা আছে তাদের যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত। বর্তমানে এক তৃতীয়াংশ ব্যবসা কমে গেছে। কারণ গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশের অনেক মালামাল দেশের বাহিরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাকি দিয়েও মালামাল দিতে পারছি না। আমাদের কোটি কোটি টাকা বাকি পরে গেছে। বন্ডের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক হতে হবে।’

বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোলাইমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গার্মেন্টস সেক্টরের আমাদের এ সুতার ব্যবসা সম্পর্ক রয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর যদি ভালো না থাকে তাহলে আমরা সুতা বিক্রি করবো কোথায়? এক্সপোর্ট ভালো না থাকলে গার্মেন্টসের ক্ষতি আমাদের ক্ষতি। আগামী ৬ মাসের মধ্যে আরও অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক স্পিনিং মিলস উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। এভাবে শ্রমিক ছাঁটাই করলে দেশের জন্য খারাপ হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুতা ব্যবসায়ী অনেক কমে গেছে। শ্রমিকরা কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন। প্রতি গদিতে ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক লাগে। সে হিসেবে ১ হাজার ঘর হলে ৫০০০ হাজার শ্রমিক থাকে। তাদের প্রায় অর্ধেক কর্ম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। সেই সঙ্গে আরও অনেক সুতা কারখানা আছে। এক বছরে পাঁচ শতাধিক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা আশা নির্বাচিত সরকার আসলে পরিস্থিতি ভালো হবে। বায়াররা আসতে সাহস করবে। তারা নিশ্চয়তা পাবে। ব্যবসা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’

আরএইচ/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow