চোখের নিচে কালচে দাগ, হালকা ফ্যাকাসে ত্বক, ম্লান ঠোঁট আর সামান্য এলোমেলো চুল—এমন চেহারা দেখে সাধারণত আমরা বলি, ‘ওহ! খুব ক্লান্ত লাগছে।’ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই ক্লান্ত চেহারাকেই অনেকে বানাচ্ছেন স্টাইল। নাম দেওয়া হয়েছে — ‘টায়ার্ড গার্ল মেকআপ ট্রেন্ড’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এটা নিয়ে হাসাহাসি করছেন, অনেকেই বলছেন ‘এখনকার প্রজন্মের’ যেন সব কিছুতে বাড়াবাড়ি! কিন্তু এই ট্রেন্ড আসলে কোথায় থেকে শুরু হল? কেমন এত বিপুল সংখ্যক নারী এই ট্রেন্ডে যুক্ত হচ্ছেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কী এই টায়ার্ড গার্ল লুক?
ফ্যাশন দুনিয়ায় এখন একটা নতুন বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে। তা হল -- ক্লান্তিও আকর্ষণীয় হতে পারে। যেখানে অন্য সব ট্রেন্ড ত্বককে নিখুঁত, উজ্জ্বল আর ফ্রেশ দেখানোর চেষ্টা করে, সেখানে এই ট্রেন্ড বলছে, ক্লান্তি না লুকিয়ে তাকে ফ্যাশনে পরিণত করার কথা।
চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল ঢেকে ফেলার বদলে হালকা বাদামি বা বারগান্ডি শেড দিয়ে আরও স্পষ্ট করা হচ্ছে। লাইনার টানা হচ্ছে ঝকঝকে করে নয়, বরং সামান্য স্মাজ করে। ফাউন্ডেশনের মোটা আস্তরণ নয়, বরং এমনভাবে বেস তৈরি হচ্ছে যেন ত্বকের দাগ বা ফ্যাকাসে ভাব হালকা হলেও চোখে পড়ে। ঠোঁটে গাঢ় লাল নয়, বরং হালকা ম্লান বা ফিকে রঙ।
কেন জনপ্রিয় হলো এই ট্রেন্ড?
‘টায়ার্ড গার্ল’ লুক জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে আছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। অনেকেই মনে করছেন, সমাজে সবসময় ‘পারফেক্ট’, ‘ফ্রেশ’ আর ‘উজ্জ্বল’ দেখানোর চাপ থেকে মুক্তি দিচ্ছে এই ট্রেন্ড। বাস্তবে ক্লান্তি, কাজের চাপ, মানসিক স্ট্রেস—সবকিছু আমাদের জীবনের অংশ। সেই সত্যিটাকেই তুলে ধরা হচ্ছে মেকআপে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মূলত জেন- জিয়ের বিদ্রোহী প্রতিক্রিয়া। তারা নিখুঁত বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের বদলে বাস্তবতা, সহজলভ্যতা আর নিজের মতো করে থাকার আনন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছেনেএই ট্রেন্ডের মাধ্যমে।
ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাশনের পেছনে পপ কালচার
এই লুককে আরও জনপ্রিয় করেছে পপ কালচারের প্রভাব। বিশেষ করে অভিনেত্রী জেনা ওর্তেগার ওয়েডনেসডে অ্যাডামস্ চরিত্র — যেখানে ফ্যাকাসে চেহারা আর মুডি এক্সপ্রেশনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল পুরো লুক। অনেক টিকটক ব্যবহারকারী ও বিউটি ব্লগাররা সেই স্টাইলকেই নিজেদের মতো করে রূপ দিচ্ছেন।
কীভাবে করা যায় এই লুক?
আসলে এই মেকআপ খুব জটিল কিছু নয়। নিজে ট্রাই করার জন্য জেনে নিন কয়েকটি টিপস—
>> চোখের নিচে কনসিলার দিয়ে পুরো ঢেকে না দিয়ে বরং বাদামি, টৌপ বা হালকা লালচে শেড ব্যবহার করে ডার্ক সার্কেলকে আরও হাইলাইট করুন।
>> আইলাইনার টানটান নয়, বরং হবে স্মাজ করা বাদামি বা ধূসর লাইন। চাইলে ডাউনওয়ার্ড ফ্লিক দেওয়া যায়।
>> বেস মেকআপে ভারী ফাউন্ডেশন থাকবে না। বরং হালকা বেস ব্যবহার করুন, যাতে ত্বকের কিছু দাগ বা ক্লান্ত ভাব খানিকটা দেখা যায়।
>> গালে সামান্য গোলাপি বা পিচ টোনের ব্লাশ, যাতে ক্লান্তির মধ্যেও হালকা ফ্লাশড লুক আসে।
>> ঠোট থাকবে ফিকে, ম্লান বা হালকা গ্লসি। যেন ঠোঁট অনেকটা স্বাভাবিক দেখায়।
>> চুল মোটেই একদম নিখুঁত হবে না, বরং সামান্য এলোমেলো বা আনডান স্টাইলে রাখুন।
আসলে কী বোঝাচ্ছে এই ট্রেন্ড?
এই ট্রেন্ডটি আসলে শুধু মেকআপ টিপস্ না, এটা এক ধরনের সামাজিক বার্তা। আমরা সবাই জানি, আধুনিক জীবনে ক্লান্তি খুব সাধারণ বিষয়। তবুও আমাদের প্রতিনিয়ত চাপ দেওয়া হয় নিখুঁত থাকার। টায়ার্ড গার্ল ট্রেন্ড যেন সেই বাস্তব ক্লান্তিকেই উদযাপন করে বলছে -- ‘হ্যাঁ, আমি ক্লান্ত। কিন্তু এটাই আমার বাস্তবতা, আর বাস্তবটাই সুন্দর।’
সূত্র: মেরি ক্লেয়ার, বাস্টল, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইনসাইট ট্রেন্ডস ওয়ার্ল্ড, এশিয়া ওয়ান
এএমপি/জিকেএস