টিউলিপের লন্ডনের ফ্ল্যাটটি কি রূপপুর দুর্নীতির টাকায় কেনা?

3 hours ago 7
ব্রিটিশ এমপি ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের মালিকানাধীন ৭ লাখ পাউন্ডের লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটের উৎস নিয়ে তদন্ত চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা টাকার একটি অংশ দিয়ে সেটি কেনা হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি ঢাকতে সেটি উপহার পাওয়ার নাটক সাজায় শেখ পরিবার। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ তদন্ত করছে। দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর একটির সাথে যুক্ত তহবিল ব্যবহার করে টিউলিপ লন্ডনের সম্পত্তি কিনেছিলেন কি না, সে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে দুদক। দ্য টেলিগ্রাফ এমন তথ্য জানায়। তদন্তের এক আপডেটে দুদক বলেছে, তারা অভিযোগ পেয়েছে যে টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে ৭০০,০০০ পাউন্ডের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট পেয়েছেন। ফ্ল্যাটটি বাংলাদেশের ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের (১০.১ বিলিয়ন পাউন্ড) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আত্মসাৎ করা অর্থের একটি অংশ দিয়ে কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের সদস্যদের জন্য উচ্চমূল্যের সম্পত্তি অর্জনের আগে মালয়েশিয়ার অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাচার করা হয়। এরপর সেটি বিভিন্ন চ্যানেল ঘুরে লন্ডনে পাঠানো হয়। দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, আমাদের গোপন তদন্তে এই অভিযোগগুলো নিশ্চিত হওয়ার পর, আমরা এটির একটি প্রকাশ্য তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি (টিউলিপ) দুর্নীতি এবং আর্থিক অসদাচরণের অভিযোগে জড়িত। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তিনি বাংলাদেশে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যুক্ত অর্থ পাচার এবং অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপ ও তার পরিবারের সদস্যরা ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন। এ প্রকল্পের ৯০ শতাংশ ঋণ এসেছে ক্রেমলিন থেকে, আর দায়িত্বে আছে রাশিয়ান কোম্পানি রোসাটম। এর সূত্র ধরে টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না সেটিই এখন তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে যুক্তরাজ্যে বিপাকে পড়েন টিউলিপ সিদ্দিক। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা এবং তদন্তের মুখে ১৪ জানুয়ারি মন্ত্রিত্ব ছাড়েন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পর শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে টিউলিপের নাম ব্যাপকভাকে আলোচিত হলেও তার যোগসাজশ ছিল বেশ পুরোনো।  আওয়ামী লীগ সরকার ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট নেওয়া, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে সহযোগিতা, অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি, ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্থা করানো বা পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতি ছাপিয়ে টিউলিপের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ ছিল- রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে টাকা আত্মসাতের মধ্যস্থতা করা। এ প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮ আগস্ট গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এ অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়। যাতে মধ্যস্থতা করেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য। ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি। এদিকে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে সম্প্রতি ঢাকায় এক গোপন বৈঠকের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এ তথ্য দেয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি প্রমাণ হলে তার ১০ বছরের জেল হতে পারে। কারণ, ব্রিটেনের ব্রাইবারি অ্যাক্ট ২০১০ অনুযায়ী, কেউ বিদেশে ঘুষ গ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্রিটেনে মামলা এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এনসিএর কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। সূত্রের দাবি, এনসিএ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলার জন্যও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এনসিএর বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয় সফর। গত বছরের অক্টোবরে প্রথম সফরে সংস্থাটি অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব দেয়। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রতি বছর প্রায় ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড বিদেশে পাচার করতেন। টিউলিপ সিদ্দিক গত মাসে লেবার পার্টির পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যা তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের কারণে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আরও অন্তত দুটি ফৌজদারি তদন্ত পরিচালনা করছে দুদক। তবে তিনি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। লেবার পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি এবং তিনি এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।’
Read Entire Article