টুং-টাং শব্দে মুখরিত বেনাপোলের কামারপাড়া

3 months ago 47

দিনরাত লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারপাড়া। আর মাত্র একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোর জেলার শার্শা-বেনাপোলের ঐতিহ্যবাহী কামারপাড়ার কারিগররা।

কামারপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে ঘিরে দা, বটি, চাকু, দাসা, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরিতে ব্যস্ত কামার শিল্পীরা। এখন দম ফেলারও সময় নেইএ কারিগরদের। স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দা, বঁটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন তারা।

বর্তমানে আকৃতিভেদে ছুরি ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, দা ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, হাড় কোপানো চাপাতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। তবে আকৃতিভেদে দাম কম বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া পুরোনো দা, বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবণ-পানি দিতে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়ে থাকে। আধুনিক অনেক সরঞ্জাম বাজারে আসাতে দেশীয় জিনিসের ক্রেতা আগের থেকে অনেক কমে গেছে।

প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরদের মজুরি বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রীর মূল্য কমে যাওয়া, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে স্টিল সামগ্রী আমদানিসহ চরম আর্থিক সংকট ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে এ উপজেলার কামার শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে।

 টুং-টাং শব্দে মুখরিত বেনাপোলের কামারপাড়া

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রামে এখনও প্রায় দেড় শতাধিক কামার পরিবার কষ্ট করেই তাদের বাপ-দাদার পৈত্রিক এ পেশা ধরে রেখেছে। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানির ঈদ আসলেই তারা বাড়তি আয়ের সুযোগ পান। কিন্তু কয়লা ও লোহার দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন না তারা।

কামার শিল্পী স্বপন বিশ্বাস ও আকাশ কর্মকার বলেন, বংশ পরস্পরায় আমরা এই কাজ করে আসছি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করতেন। আগে দেখতাম সারা বছর বাপ- দাদারা এই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু এখন সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদ আসলে আমাদের কাজের চাহিদা একটু বেড়ে যায়।

শ্রী রবিন কুমার বলেন, বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখলেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পশুর হাট গুলোতে ঈদের আমেজ থাকলেও এখনও কামারদের দোকানে মানুষের পদচারণা নেই বললেই চলে। তবে শেষ মুহুর্তে কোরবানীর মাংস কাটার সরঞ্জামাদি কিনতে কামারদের কাছে ভিড় জমাবে মানুষ এমন আশায় বুক বেঁধে আছি। কেন না এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভাল পেশায় যাব এই রকম আর্থিক সংগতি আমাদের নেই। তবে সরকারিভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে সুদ মুক্ত ঋণ দিলে দেশীয় এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

উপজেলার বেনাপোল বাজারে কামার শিল্পী জেলহাস হোসেন ও ভেলাবাড়ীর কামার বদিয়ার রহমান বলেন, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয়তোবা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না। তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই।

এসআইটি/এএসএম

Read Entire Article